জুমবাংলা ডেস্ক : সবজি চাষে ভাগ্য বদলেছে নাটোরের সিংড়া পৌরসভার দক্ষিণ দমদমার কৃষক আবুল কাশেম প্রামাণিকের ৫ ছেলে। এন্তাজ, মন্তাজ, আন্তাজ, এমদাদুল ও ওবায়দুল নামের এই সহোদর ভাইয়ের সফলতা একদিনে আসেনি।
এজন্য প্রায় ১০ বছর কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে তাদের। সবজি চাষে একাগ্রতা তাদের সফলতা এনে দিয়েছে। বর্তমানে স্থানীয়ভাবে সফল সবজি চাষি হিসেবেই সবার কাছে পরিচিত ওই ৫ সহোদর ভাই। তাদের দেখাদেখি এখন সবজি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে অনেক যুবকই।
এলাকাবাসী জানান, ওই ৫ ভাই এলাকার পরিশ্রমি কৃষক হিসেবে পরিচিত। তারা সবাই বিয়ে শাদী করে আলাদা জীবনযাপন করলেও জমিতে চাষাবাদ করেন একসাথে। কঠোর পরিশ্রম আর নিয়মিত পরির্চচার জন্য ধান, গম, সরিষাসহ যে কোন ফসলের ফলন পান অন্য কৃষকের চেয়ে একটু বেশি।
ধান ও রবি শস্যের পাশাপাশি এবার মিশ্র সবজি চাষে সফল হয়েছেন তারা। ৪ বিঘা জমিতে মিশ্র এই সবজি খামারে আছে তড়ই, শসা, ঝিঙা, করলাসহ ৫ থেকে ৬ রকমের সবজি।
এন্তাজ আলী জানান, আগে সব জমিতেই ধান চাষ করতেন তারা । ধানে লোকসান হওয়ায় সবজি আবাদে ঝোঁকেন। এবারই প্রথম মিশ্র সবজি চাষ শুরু করেছি। বর্তমানে বাড়ির পাশের প্রায় ৪ একর জমিতে তড়ই, শসা, ঝিঙা, করলা লাল শাক, লাউ, টমেটো, ফুলকপি, মিষ্টি কুমড়া, শশা, করলা, মূলা ও শিমের চাষ করছেন। মাচান তৈরী, জমি চাষ, সার ও শ্রমিকসহ ৪ বিঘা জমিতে আমাদের খরচ হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। খামারে রোপনের আড়াই মাস পরপরই সবজি উঠানো শুরু করেছি। পাইকাররা সরাসরি তার মাঠ থেকই সবজি কিনে নিয়ে যান। এবার এরইমধ্যে সবজি বিক্রি করেছেন প্রায় দুই লাখ টাকার। আরো দুই লাখ টাকার সবজি বিক্রি হবে বলে প্রত্যাশা।
সরেজমিনে নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের সিংড়ার জলারবাতার মাঠে গিয়ে দেখা যায়, ওই ৫ ভাইয়ের সবজি খামারের মাচান জুড়ে ঝুলছে করলা, শসা, তড়ইসহ নানা রকম সবজি। খামারে সবজি উঠানো নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। খামারে কাজ করছেন আরও ৩ নারী শ্রমিক। খামারে পাইকারী সবজি কিনতে আসা এক ব্যবসায়ী জানান, মাচানের যে কোন সবজি বাজারে খুব চাহিদা। তাইখামার থেকেই আমরা নগদ টাকায় সবজি কিনে বাজারে বিক্রয় করি।
খামারের মাচান ঠিক থাকলে আগামী বছরে এই লাভ দ্বিগুন হবে বলেও আশা করছেন কৃষক আন্তাজের ভাই ওবায়দুল। তিনি আরোও জানান, কৃষি বিভাগের পরামর্শ সেবায় রোগ-বালাই আক্রমণ থেকেও নিরাপদ তার সবজি। পোকা দমনে ব্যবহার করছেন ফেরোমন ট্রাপ পদ্ধতি। ফলে ছোট পোকা ফসলের ক্ষতি করতে পারে না।
স্থানীয় কৃষক আবুল প্রামাণিক ও নাদের হোসেন বলেন, তারা সবজি চাষ করলেও পাঁচ ভাইয়ের মত লাভ হতো না। অধিকাংশ সবজি রোগ-বালাইএর কবলে পড়ত। পরে তাদের পরামর্শে উপজেলা কৃষি অফিসে গিয়ে তাদের কথা মত সবজি চাষ শুরু করেন। এখন তাদের ফলন ভালো হচ্ছে। পোকা-মাকড় থেকে রক্ষার জন্য ফেরোমন ট্রাপ পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। প্রায় দুই একর জমিতে তড়ই, শসা, ঝিঙা, করলা লাল শাক, লাউ, টমেটো, ফুলকপির চাষ করছেন তারা।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ সেলিম রেজা বলেন, সবজি চাষের প্রতি তাদের আগ্রহটা মূলত কৃষি বিভাগই সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে কিভাবে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করা যায়, এ ধারণাটা কৃষি বিভাগ থেকে নিয়ে কাজে লাগান তারা। তাদের মাঠের সবজির অবস্থা ভালো। নিয়মিত আমাদের তদারকি ও পরামর্শ সেবা অব্যাহত রয়েছে। সবজিসহ যে কোন কৃষি চাষে কৃষকদের পাশে থেকে সঠিক পরার্মশ দিয়ে যাচ্ছেন উপজেলা কৃষি অফিস। তবে একই জমিতে মিশ্র সবজি চাষে অনেকেই লাভবান হচ্ছেন। আমরা এসব চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।