শরীরে মেদ জমাটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু সময়মতো সেই মেদ ঝরানোও গুরুত্বপূর্ণ। ওজন ঝরানোর কথা উঠলেই ঘরোয়া টোটকার দিকে ঝোঁকেন অনেকেই। এ বিষয়ে এখন বেশ জনপ্রিয় জিরা ভেজানো পানি ও চিয়া সিড ভেজানো পানি।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, ওজন কমানোর লড়াইয়ে কে বেশি কার্যকরী, জিরা না চিয়া?
জিরা যদি হজম সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখে, তাহলে অন্ত্র ভালো রাখার দায়িত্ব নেয় চিয়া। তবে ওজন কমাতে কোনটিতে ভরসা রাখবেন, জেনে নিন—
জিরা ভেজানো পানি
রান্নাঘরের এই পরিচিত মসলাটি যে ওজন কমাতেও ওস্তাদ, তা অনেকেই জানেন। জিরার প্রধান কাজ হলো হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটানো এবং মেটাবলিজম বা বিপাক হারকে ত্বরান্বিত করা।
বিপাক হার বৃদ্ধি : জিরাতে থাকা ‘থাইমল’ নামক যৌগটি হজমে সাহায্যকারী উৎসেচকের ক্ষরণ বাড়ায়।
ফলে খাবার দ্রুত হজম হয় এবং শরীরে চর্বি জমার প্রবণতা কমে। সকালে খালি পেটে জিরা পানি খেলে বিপাক হার অনেকটাই বেড়ে যায়, যা সারা দিন ধরে ক্যালরি পোড়াতে সাহায্য করে।
শরীরকে দূষণমুক্ত করা : জিরা পানি একটি চমৎকার ডিটক্স ড্রিঙ্ক। এটি শরীর থেকে ক্ষতিকারক টক্সিন দূর করে এবং পেট ফাঁপা বা গ্যাসের মতো সমস্যা থেকেও মুক্তি দেয়।
কম ক্যালরি : জিরা ভেজানো পানিতে ক্যালরির পরিমাণ প্রায় নেই বললেই চলে। তাই ওজন কমানোর ডায়েটে এটি একটি আদর্শ পানীয়।
কখন খাবেন
সবচেয়ে ভালো ফল পেতে সকালে খালি পেটে হালকা গরম জিরা পানি পান করুন।
চিয়া সিড
বিদেশি এই বীজটি এখন আমাদের রান্নাঘরেও জায়গা করে নিয়েছে। পুষ্টিগুণে ভরপুর চিয়া সিড ওজন কমানোর ক্ষেত্রে এক অন্য মাত্রা যোগ করেছে।
ফাইবারের ভাণ্ডার : চিয়া সিডের সবচেয়ে বড় গুণ হলো এতে থাকা প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। পানিতে ভেজানোর পর এটি প্রায় ১০-১২ গুণ ফুলে ওঠে এবং একটি জেলির মতো আস্তরণ তৈরি করে। এই পানি পান করলে পেট দীর্ঘক্ষণ ভরা থাকে, ফলে বারবার খিদা পাওয়ার প্রবণতা কমে। এতে স্বাভাবিকভাবেই খাবার কম খাওয়া হয় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
প্রোটিন ও ওমেগা-৩ : চিয়া সিডে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড। প্রোটিন পেশি গঠনে সাহায্য করে এবং ওমেগা-৩ শরীরের প্রদাহ কমাতে কার্যকরী, যা ওজন বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ : চিয়া সিড রক্তে শর্করার পরিমাণকে স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে। ফলে হঠাৎ করে মিষ্টি বা কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খাওয়ার তীব্র ইচ্ছা কমে যায়।
কখন খাবেন
মূল খাবার খাওয়ার আধ ঘণ্টা আগে বা দুটি বড় খাবারের মধ্যবর্তী সময়ে খিদা পেলে চিয়া সিডের পানি খাওয়া যেতে পারে।
কোনটি বেশি উপকারী
জিরা পানি ও চিয়া সিডের পানি, দুটিই ওজন কমাতে সহায়ক। তবে এদের কার্যকারিতার ধরন আলাদা। যদি কারো মূল লক্ষ্য হয় হজম ক্ষমতার উন্নতি এবং মেটাবলিজম বাড়ানো, তবে জিরা পানি বেশি কার্যকর। এটি শরীরকে ভেতর থেকে পরিষ্কার করে ওজন কমানোর প্রক্রিয়াকে দ্রুততর করে।
অন্যদিকে, যদি কারো মূল সমস্যা হয় অতিরিক্ত খিদা বা অসময়ে খাওয়ার অভ্যাস, তবে তাদের জন্য চিয়া সিডের পানি বেশি উপকারী। এর ফাইবার দীর্ঘক্ষণ পেট ভরার অনুভূতি দেবে, যা ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করবে।
সুতরাং, নিজের শরীরের প্রয়োজন বুঝে যেকোনো একটি বা দুটিই নিয়ম মেনে খাওয়া যেতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে, শুধু এই পানীয়গুলোর ওপর ভরসা করলেই চলবে না। সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত শরীরচর্চাই হলো সুস্থভাবে ওজন কমানোর মূল চাবিকাঠি।
সূত্র : আজকাল
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।