ধর্ম ডেস্ক : অভাব মানুষকে কখনও কখনও কুফরের কাছাকাছি নিয়ে যায়। অনেক সময় এ অভাব মানুষের ঈমান-আকিদাকেও দুর্বল করে দেয়। ইসলামে প্রাচুর্যতা ও ধনাঢ্যতাকে নিষেধ করা হয়নি। তবে প্রাচুর্যতা ও ধনাঢ্যতার সঙ্গে ইসলামের বেশ কিছু বিধান যুক্ত হয়। যা পালন করলে ধানাঢ্যতায় কোনো সমস্যা নেই। প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনেক সাহাবি ধনী ছিলেন।
সবাই চায় তার জীবন কল্যাণময় হোক, রিজিক বেড়ে যাক, সহজে ধনী হয়ে যাক। জীবনে প্রাচুর্য আসুক। কিন্তু প্রকৃত কল্যাণময় ও প্রাচুর্যময় জীবন তারাই পায়- মহান আল্লাহ যাদের দান করেন। নিম্নে এমন কিছু বিষয় তুলে ধরা হলো- যেগুলো মানুষের জীবনকে কল্যাণময় ও প্রাচুর্যময় করে,
এক. বেশি বেশি ইস্তেগফার পাঠ করা।
ইস্তেগফার পাঠে বান্দার অভাব মোচন হয়। পাপাচার ক্ষমা করা হয়। সন্তান-সন্তুতির অভাব যেমন থাকে না তেমিন রিজিকেও আসে পরিপূর্ণ বরকত। অভাবমুক্ত থাকতে পবিত্র কোরআনে বেশি বেশি ইসতেগফার পাঠের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যার ফলে মহান আল্লাহ মানুষকে উত্তম রিজিকসহ অসংখ্য নেয়ামতে ধন্য করবেন বলেও জানিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন,
فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّاراً*يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِدْرَاراً*وَيُمْدِدْكُمْ بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَلْ لَكُمْ جَنَّاتٍ وَيَجْعَلْ لَكُمْ أَنْهَاراً
‘অতপর বলেছি- তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছেড়ে দেবেন। তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি বাড়িয়ে দেবেন, তোমাদের জন্যে উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্যে নদীনালা প্রবাহিত করবেন।’ (সুরা নুহ, আয়াত : ১০-১২)
أَستَغْفِرُ اللهَ উচ্চারণ : ‘আস্তাগফিরুল্লাহ।’
অর্থ : আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
أَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ
উচ্চারণ : ‘আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি।‘ অর্থ : আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁর দিকেই ফিরে আসছি।
أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ উচ্চারণ : ‘আস্তাগফিরুল্লা হাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়্যুমু ওয়া আতুবু ইলায়হি।’
অর্থ : ‘আমি ওই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোনো মাবুদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং তাঁর কাছেই (তাওবাহ করে) ফিরে আসি।’
দুই. জাকাত আদায় করা।
জাকাত ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভসমূহের অন্যতম। অভাবমুক্ত সমাজ গঠনে জাকাতের বিকল্প নেই। তাই অভাবমুক্ত সমাজ গঠনের উদ্দেশ্যে যথা সময়ে নিজ উদ্যোগে রাষ্ট্রীয় তথা নির্ভরযোগ্য জাকাত ফাণ্ডে জাকাতের টাকা জমা দেওয়া। জাকাতের অর্থ সুষম বণ্টনের জন্য কারা এ অর্থ পাবে তার সুস্পষ্ট বর্ণনাও এসেছে পবিত্র কোরআনে। মহান আল্লাহ বলেন,
اِنَّمَا الصَّدَقٰتُ لِلۡفُقَرَآءِ وَ الۡمَسٰکِیۡنِ وَ الۡعٰمِلِیۡنَ عَلَیۡهَا وَ الۡمُؤَلَّفَۃِ قُلُوۡبُهُمۡ وَ فِی الرِّقَابِ وَ الۡغٰرِمِیۡنَ وَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ وَ ابۡنِ السَّبِیۡلِ ؕ فَرِیۡضَۃً مِّنَ اللّٰهِ ؕ وَ اللّٰهُ عَلِیۡمٌ حَکِیۡمٌ
‘জাকাত হল কেবল ফকির, মিসকিন, জাকাত আদায়কারী ও যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন (নব মুসলিম) তাদের হক এবং তা দাস-মুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে জেহাদকারীদের জন্য এবং মুসাফিরদের জন্য, এই হল আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা তাওবাহ, আয়াত : ৬০)
মহান আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নে হযরত আবু বকর (রা.) ইসলামিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় জাকাত আদায়ে অস্বীকারকারীদের ব্যাপারে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। আর সে কারণেই ইসলামি খেলাফতের সফল খলিফা দ্বিতীয় ওমর খ্যাত হজরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজের সময়ে এসে জাকাতের অর্থ গ্রহণের জন্য কোনো লোক খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তিন. আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা।
আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার দ্বারা রিজিক বেড়ে যায়। হযরত আনাস বিন মালেক (রা.) বর্ণনা করেন, আমি শুনেছি, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে তার জীবিকা বৃদ্ধি হোক অথবা তাঁর মৃত্যুর পরে সুনাম থাকুক, সে যেন আত্মীয়দের সঙ্গে সদাচরণ করে।’ (সহিহ বুখারি)
চার. দোয়ার আমল।
রিজিকের একচ্ছত্র মালিক মহান আল্লাহ। সুতরাং মহান আল্লাহর কাছ থেকেই রিজিকের প্রাচুর্যতা চেয়ে নিতে হবে। প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর উম্মতকে অভাবমুক্ত থাকতে আল্লাহর কাছে দোয়া করার বিশেষ আবেদন শিখিয়েছেন। যাতে তাঁর উম্মত অভাবের কারণে কুফরির দিকে চলে না যায়। হাদিসে এসেছে,
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْكُفْرِ وَالْفَقْرِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল কুফরি ওয়াল ফাকরি, আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজিবল ক্বাবরি লা ইলাহা ইল্লা আংতা।’ (আবু দাউদ)
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনার নিকট কুফরি ও দরিদ্রতা হতে আশ্রয় চাইছি। হে আল্লাহ! আমি কবরের আজাব থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাইছি, আপনি ছাড়া অন্য কোনো ইলাহ নেই।’
পাঁচ. অল্পে তুষ্ট থাকা।
প্রাচুর্যতার নির্দিষ্ট সীমা নেই। তাই অল্পে তুষ্ট থাকা উচিত। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ধনের আধিক্য হলে ধনী হয় না, অন্তরের ধনীই প্রকৃত ধনী।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৪৪৬)
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।