আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ঋণের জালে জর্জরিত শ্রীলঙ্কা। চলতি বছরেই ঋণখেলাপির খাতায় নাম উঠেছে দেশটির। শ্রীলঙ্কার এমন দশায় বিশ্বের অনেক দেশের মনেই সৃষ্টি হয়েছে আতঙ্ক। ঋণের ভারে নুয়ে থাকা দেশগুলো আছে শঙ্কার মধ্যে। বিশেষ করে আফ্রিকার অনেক দেশের অবস্থা শেষমেশ শ্রীলঙ্কার মতো হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সম্প্রতি বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈদেশিক ঋণ এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভসংকটের কারণে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের একেবারে দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে বিশ্বের অন্তত ১২টি দেশ। আফ্রিকার অনেক দেশের ঋণ জিডিপির ৭০ শতাংশের ওপরে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শ্রীলঙ্কার মতো প্রায় একই পরিণতি হতে পারে লেবানন, সুরিনাম ও জাম্বিয়ার মতো দেশগুলোর। তালিকায় থাকা অন্য দেশগুলো হলো আর্জেন্টিনা, ইউক্রেন, তিউনিসিয়া, ঘানা, মিসর, কেনিয়া, ইথিওপিয়া, এল সালভাদর, পাকিস্তান, ইকুয়েডর, বেলারুশ ও নাইজেরিয়া।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এ দেশগুলোর ব্যাপারে এখনই বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সিদ্ধান্ত না নিলে তালিকায় থাকা অনেক দেশই ঋণখেলাপির আওতাভুক্ত হতে পারে। এছাড়াও এসব দেশের অর্থনীতিকে রক্ষা করতে হলে, সবার আগে জরুরি একটি স্থিতিশীল বিশ্ববাজার।
ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হতে পারে, এমন দেশের তালিকায় প্রথমেই আছে আর্জেন্টিনা। দেশটির বৈদেশিক ঋণ প্রায় ১৫০ বিলিয়ন ডলার। তালিকায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছে মিসর ও ইকুয়েডর। দেশ দুটির ঋণ যথাক্রমে ৪৫ বিলিয়ন ও ৪০ বিলিয়ন ডলার।
আর্জেন্টিনার মুদ্রা পেসোর অবমূল্যায়ন এত বেশি হয়েছে যে কালোবাজারে এই মুদ্রা ব্যাংক নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ৫০ শতাংশ কম দামে বিক্রি হচ্ছে। সরকারি বন্ডের দাম পড়ে গেছে। বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২০ সেন্টে। ২০২৪ সাল নাগাদ দেশটিকে বড় ধরনের ঋণ পরিশোধ করতে না হলেও এরপর বিপদে পড়তে পারে দেশটি।
এদিকে অর্থনৈতিকভাবে সংকটের মুখে আছে যুদ্ধাক্রান্ত ইউক্রেন। যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনের ২০ বিলিয়ন ডলারের অতিরিক্ত ঋণ পুনর্গঠনের বিকল্প নেই। সেপ্টেম্বর মাসে তাদের ১২০ কোটি ডলারের কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। তখনই তারা ঋণ পুনর্গঠনের আবেদন করবে বলে মনে করছে মরগ্যান স্ট্যানলি ও আমুন্দির মতো বিনিয়োগকারীরা। খবর রয়টার্স।
আইএমএফের ভাষ্যমতে, আফ্রিকার দেশগুলো বেশ কিছু ঝুঁকির মধ্যে থাকলেও তিউনিসিয়ার অবস্থা সবচেয়ে বেশি আশঙ্কাজনক। বাজেটে ঘাটতি, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উচ্চ বেতন ইত্যাদি কারণে দেশটিতে জনরোষ ক্রমেই বাড়ছে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান মারওয়ান আব্বাসির মতে, এ মুহূর্তে আইএমএফের সহায়তাই দেশটিকে বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে পারে।
মিসরের অবস্থা ঘানার চেয়েও ভয়াবহ। দেশটির বৈদেশিক ঋণ জিডিপির ৯৫ শতাংশেরও বেশি। সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হলো, দেশটিতে চলতি বছরে প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে হবে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান জেপি মরগান। আরও একটি বৈশ্বিক বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের বরাত দিয়ে রয়টার্স বলছে, আগামী পাঁচ বছরে মিসরকে নগদ অর্থে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার শোধ করতে হবে।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশ পাকিস্তানের অবস্থা দিনকে দিন বেশ নাজুক হয়ে উঠেছে। ডলারের বিপরীতে দেশটির মুদ্রার মান ব্যাপকভাবে অবমূল্যায়িত হয়েছে। খাদ্য, জ্বালানিসহ প্রয়োজনীয় আমদানির তুলনায় রফতানি একেবারে কম। দেশটিতে ৯ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ- যা ইতিহাসে সর্বনিম্ন। দেশটির মোট রাজস্বের ৪০ শতাংশেরও বেশি ব্যয় করতে হয় ঋণ পরিশোধে। ফলে উন্নয়নের জন্য সরকারকে অর্থ ব্যয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এসব দেশের তুলনায় বাংলাদেশ সুবিধাজনক জায়গায় আছে। জিডিপির সাপেক্ষে বাংলাদেশের ঋণের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত নয়। তবে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের রাজস্ব আয় সন্তোষজনক নয়। রাজস্ব আয়ের আওতাবৃদ্ধির অবস্থা সুবিধাজনক নয়। এক্ষেত্রে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ শুরু করলে বাংলাদেশকে চাপের মুখে পড়তে হতে পারে- এমনটাই ধারণা করছেন অর্থনীতিবিদরা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।