মো.আজিজুল হাকিম : প্রশাসনের একটি কমন কথা- ‘অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে’। অথচ প্রশাসন চাইলে যে কোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন। বিভিন্ন সময়ে প্রশাসন ঝটিকা অভিযানের মাধ্যমে কিছু ব্যবস্থাও নিয়েছেন। তাহলে প্রশাসনের এমন দায়সারা কথা কেন?। কেন এমন কথায় জনমনে বিব্রত সৃষ্টি করবে। না কি প্রশাসন তাদের দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছেন। অথচ বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ ছাড়াই অবৈধ বা অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার মাধ্যমে জেল-জরিমানা করে থাকেন প্রশাসন। এমনকি অপমৃত্যুর বা দুর্ঘটনার জড়িত কারনে মৃত্যু হলে প্রশাসন বাদি হয়ে মামলা লড়েন। তাহলে জনগণের ক্ষেত্রে দায়সারা কথঅ কেন?।
আমাদের সমাজে প্রতিদিনই কিছু না কিছু অসামাজিক, অপ্রিতিকর ও জনভোগান্তীর মতো ঘটনা ঘটেছে। যেমন ধরুন চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অবৈধভাবে নদীতে বালু উত্তোলন, মহাসড়কের অবৈধ যানবাহন চলাচল। এমনকি সরকারের নির্দেশ উপেক্ষা করে চলছে ফসলি জমির মাটি কাটার উৎসব। এসব অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রশাসনের একটি কমন কথা, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অথচ সংশ্লিষ্ট প্রশাসন চাইলে অভিযোগ ছাড়াই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন। কিন্তু অভিযোগ ছাড়া প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেন না। এতে করে অন্যায়কারীরা অন্যায় কাজে উৎসাহ পায় আর ভুক্তভোগীদের ভিতরে একটি ভয়ে সৃষ্টি হয়। এভাবেই ছোট ছোট অন্যায়কারীরা এক সময় গড়ফাদারে পরিণত হয়ে যায়। অথচ প্রশাসনের দায়িত্ব হচ্ছে, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া। এরজন্যই দেশের জনগণের তাদের ট্যাক্সের টাকায় সরকারি কর্মকর্তাচারীদের বেতন দিয়ে থাকেন। সুতরাং প্রশাসনকে জনগণের ভোগান্তী বা জনগণের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ। জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সঠিক কাজ অথবা জনগণের যে কোন সমস্যায় পাশে দাড়ানো প্রশাসনের দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে পরবে।
কিন্তু সম্প্রতি সময়ে প্রশাসনকে আগের মতো জনকল্যাণ কাজে তেমন দেখা যায় না। তবে বিভিন্ন সরকারি কর্মসূচীতে প্রশাসনের উপস্থিতি ঠিকই লক্ষা করা যায় এবং জনগণের পাশে থাকার ও জনকল্যাণে কাজের কথা বলে লম্বা বক্তৃতা দেয়। কিন্তু এরপর অধিকাংশ প্রশাসনের উদ্ধতন ব্যক্তিকে ফোনে পাওয়া যায় না। অনেকে আবার প্রশাসনের কার্যালয়ে যেতেও ভয় পায়। কারন প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করলে যদি প্রশাসনের কেউ অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জানিয়ে দেয়।
আগের তুলনায় বর্তমানে আমাদের দেশে মহাসড়কের চাঁদাবাজি, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, নারী নির্যাতন, মাদক ও ধর্ষণ অনেক বেড়ে গেছে। গ্রাম থেকে শহরের অলি-গলিতে বেড়েছে যানবাহনে চাঁদাবাজি। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে স্কুল-কলেজ এবং শহরের সেখানে সেখানে মাদকের ছড়াছড়ি। ক্ষমতাসীন দলের বড় বড় নেতাদের নির্দেশে প্রকাশ্যে চলছে চাঁদাবাজি। ইজারার নামে কোথাও আবার শ্রমিক সংগঠনের নামেও চলছে চাঁদাবাজির কাজ। কিভাবে কারা কত টাকা চাঁদা তুলছেন, সব কিছুই প্রশাসনের জানা শোনা। তারপরও কমছে না চাঁদাবাজি, বরং নানা অযুহাতে দিন দিন বাড়ছে চাঁদার পরিমান। এছাড়াও সরকারের নির্দেশনা উপেক্ষা করে, কৃষি ও ফসলি জমির মাটি কাটা। আর এর প্রভাব পরছে সাধারণ জনগণের মধ্যে।
সম্প্রতি একটি বিষয় সুস্পষ্ট, সেটি হচ্ছে রাজনৈতিক দলের সাথে প্রশাসনের ভাব-ভালোবাসা বেড়েছে। আর জনগণের সাথে প্রশাসনের সম্পৃক্ততা কমছে। প্রশাসনের সাথে জন সম্পৃক্ততা কমে যাওয়ায় বাড়ছে, সমাজে অন্যায়-অপরাধ। কারন যারা অন্যায় অপরাধের সাথে জড়িত, তাদের সাথে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সাথে মধুর সম্পর্ক। যার ফলে প্রশাসন ইচ্ছা করলেও সব সময় জনগণের জন্য কাজ করতে পারেন না। কারন আমাদের দেশে প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের ইউনিয়ন থেকে জেলা পর্যায় পর্যন্ত অসংখ্য সংগঠন আছে। প্রত্যের সংগঠনে আছে, শত শত নেতাকর্মী।
দেশেল প্রচলিত আইনে বলা আছে, যদি কোন ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কাউকে ক্ষতি করার জন্য ভয় দেখিয়ে কোন কিছু হাতিয়ে নেয় বা বল প্রয়োগ করে কোন কিছু গ্রহণ করে। তাহলে সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে দন্ডবিধি ১৮৬০ এর ৩৮৪ ধারা অনুযায়ী অপরাধের ৩ বছরের কারাদন্ড অথবা কারাদন্ডসহ জরিমানা হতে পারে।এছাড়া বালু ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ এর ৪(খ) এর ধারায় বালু ও মাটি উত্তোলনের ক্ষেত্রে আইন অমান্য করলে বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিত বালু বা মাটি উত্তোলন করলে, সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিকে অনূর্ধ্ব ২(দুই) বৎসর কারাদন্ড বা সর্বনিম্ন ৫০(পঞ্চাশ) হাজার টাকা হইতে ১০ (দশ) লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত করতে পারবেন ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ।
১৯৭১ সালে ৩০লক্ষ শহীদের তাজা রক্ত আর ২লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রম ত্যাগের মাধ্যমে আমরা পেয়েছ একটি স্বাধীন বাংলাদেশ। শহীদের রক্তে লেখা আমার সোনার বাংলা,আমি তোমায় ভালোবাসি। পেয়েছি একটি লাল সবুজের স্বাধীন পতাকা। সুতরাং দেশের শহীদের আত্ম মর্যাদার কথা স্মরণ রেখে প্রশাসনকে জনগণের সেবা করতে হবে। কারন দেশের প্রকৃত মালিক আমার দেশের সাধারণ মানুষ। এছাড়াও যে লক্ষ্য নিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে, সেই লক্ষ বাস্তাবয়নে প্রশাসনকে কাজ করে যেতে হবে। বঙ্গবন্ধু আদর্শে বিশ্বাসী হলে এবং বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার গড়তে হলে প্রশাসনকে অবশ্যই জনগণকে গুরুত্ব দিতে হবে। কারন আমরা সবাই সোনার বাংলা গড়তে বদ্ধ-পরিকর এবং সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। এক্ষেত্রে অবশ্যই প্রশাসনকে তার সঠিক ভূমিকা পালন করতে হবে এবং জনগণকে বোঝাতে হবে। প্রশাসন জনগণের জন্য রাস্ট্র নিয়োজিত কর্মচারী। সুতরাং জনগণের কথা বিবেচনা করে প্রশাসনের এমন দায়সারা কথা না বলে আইনসম্মত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ হবে।
লেখক/সাংবাদিক।
[email protected]
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।