জুমবাংলা ডেস্ক : বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি থাকায় দিনের প্রায় অর্ধেক সময়ই লোডশেডিং চলে। কিন্তু বিল আসছে স্বাভাবিক সময়ের চেয়েও বেশি। এমনই অভিযোগ করেছেন খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি, লক্ষ্মীছড়ি ও লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার গ্রাহকেরা। তাঁদের দাবি, বিদ্যুৎ অফিস থেকে অনুমাননির্ভর বিল পাঠানো হচ্ছে। কর্মকর্তারা বলছেন, এমন হলে পরবর্তী মাসের বিলের সঙ্গে সমন্বয় বা ত্রুটিপূর্ণ মিটার পরিবর্তন করে দেওয়া হচ্ছে।
মানিকছড়ি ও লক্ষ্মীছড়িতে চার মেগাওয়াট বিদ্যুতের বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে এক মেগাওয়াট। কিন্তু তাতে কারও মিটারে বিল কমেনি। সর্বশেষ গত মে মাসে পরিশোধের জন্য ১ কোটি ১২ লাখ ৫০ হাজার ৫০০ টাকার বিল পাঠিয়ে রেকর্ড করেছে স্থানীয় আবাসিক বিদ্যুৎ প্রকৌশল বিভাগ। জানুয়ারি মাসে এই বিল ছিল সাড়ে ৮২ লাখ টাকা।
গ্রাহকদের অভিযোগ, ৯ হাজারের অধিক গ্রাহকের নিয়মিত মিটারের রিডিং নেওয়ার দায়িত্বে আছেন মাত্র একজন মিটার রিডার। ফলে বছরের পর বছর এখানকার গ্রাহকেরা ভুতুড়ে বিলের শিকার হচ্ছেন। অতিরিক্ত বিলের বিষয়ে অভিযোগ করলে প্রথমে দু-তিন মাস সমন্বয় করে দেয়। এরপর আবার বাড়তি বিল দিতে থাকে। দ্বিতীয়বার অভিযোগ নিয়ে গেলে সোজাসাপটা জবাব—মিটার নষ্ট, পরিবর্তন করেন।
তিনটহরী বাজারের ব্যবসায়ী আলমগীর হাছান বলেন, ‘এই মুহূর্তে বিদ্যুতের উৎপাদন কম, ব্যবহারও কম। কিন্তু ভুতুড়ে বিল ঠিকই নিচ্ছে ওরা। আমাদের এলাকায় ২ হাজার ইউনিটের বেশি বিলও দিতে হয়েছে গ্রাহকদের।’
মানিকছড়ি বাজারের ব্যবসায়ী ইমরান হাবিব আক্ষেপ করে বলেন, এ বিষয়ে একাধিকবার অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার মেলেনি।
তবে যোগাযোগ করা হলে আবাসিক বিদ্যুৎ প্রকৌশলী জিয়া উদ্দিন বলেন, রেশনিং সিস্টেমে বিদ্যুৎ পাওয়ামাত্র গ্রাহকেরা আইপিএস, ফ্রিজ, রাইসকুকার, মোটরসহ বিদ্যুতের সব ব্যবহার এক সঙ্গে শুরু করেন। ফলে মিটারে বিল যথারীতি উঠছে। কোনো গ্রাহক অতিরিক্ত বিলের বিষয়ে অভিযোগ দিলে তা পরবর্তী মাস থেকে সমন্বয় করা হয়। এতেও কেউ সন্তুষ্ট না হলে মিটার চেক করে ত্রুটি পাওয়া গেলে মিটার পরিবর্তন করা হয়।
এদিকে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে ঘন ঘন লোডশেডিং ও বাড়তি বিদ্যুৎ বিলে গ্রাহকেরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। তাঁদের অভিযোগ, সারা দিনে ৮-১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকছে। এর ভেতরেও বাড়তি বিল পরিশোধে বাধ্য হচ্ছেন উপজেলার লক্ষাধিক গ্রাহক।
গ্রাহকদের দাবি, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির রামগঞ্জ জোনাল অফিস ভৌতিক বা অনুমাননির্ভর বিল তৈরি করে প্রতি মাসে গ্রাহকদের হয়রানি করছে। দূরদূরান্তের গ্রাহকদের অফিসে এসে বিল ঠিক করতে হচ্ছে।
রামগঞ্জ শহরের কনফেকশনারি ব্যবসায়ী মো. সজিব জানান, গত মার্চ-এপ্রিল মাসের বিল ছিল ২ হাজার ৭০০ টাকা করে। কিন্তু মে মাসের বিল এসেছে প্রায় ৬ হাজার টাকা।
বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন মিটার ঠিকমতো রিডিং না করেই অনুমাননির্ভর বিল তৈরি করে গ্রাহকদের হয়রানি করছেন।
মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী হানিফ মোল্লাও জানালেন একই কথা। তিনি বলেন, তিন মাস ধরে ৪ হাজার টাকার নিচে থাকা বিদ্যুৎ বিল মে মাসে এক লাফে প্রায় ৭ হাজার টাকা হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে রামগঞ্জ জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) নুরুল আলম ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা বিদ্যুৎ যতটুকু পাচ্ছি, তা সরবরাহ করি। এতে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। মে মাসের বিলটি ছিল গত রমজানের। রোজার সময় সরকার লোডশেডিং না দেওয়ায় বিল বেশি আসছে। সামনের মাস থেকে অতিরিক্ত বিল আসবে না।’
নুরুল আলম ভূঁইয়া জানান, রামগঞ্জের বিভিন্ন অফিস ও ব্যক্তির কাছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পাওনা প্রায় ৮ কোটি টাকা। ব্যাপক প্রচার চালিয়েও এই টাকা আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।