জুমবাংলা ডেস্ক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আরবি বিভাগের একটি টিউটোরিয়াল পরীক্ষায় (আংশিক কোর্স) ৫ নম্বরের পরিবর্তে ১০ নম্বর ধরে মূল্যায়ন করেছেন এক অধ্যাপক। এছাড়া পরীক্ষায় অনুপস্থিত থাকা এক শিক্ষার্থীকেও নম্বর দিয়েছেন তিনি। বিভাগের চতুর্থ বর্ষ সপ্তম সেমিস্টারের একটি পরীক্ষায় দেখা গেছে এমন চিত্র। তবে ওই অধ্যাপকের দাবি, এমনটা হতেই পারে। পরে তিনি ওই নম্বরপত্র সংশোধন করে দিয়েছেন বলে দাবি করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষকের নাম অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল মারুফ। এ বিষয়ে একটি চিঠি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর দিয়েছেন পরীক্ষা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল কাদির। যা পরবর্তীতে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছারের কাছে পাঠিয়েছেন। এ ঘটনায় কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয় অধ্যাপক মারুফকে। পরে তিনি নোটিশের জবাব দিয়েছেন বলেও জানা গেছে।
পাঁচ নম্বর এদিক-সেদিক হয়েছে, পরে এটা আমি সংশোধন করে দিয়েছি। এটা অহরহই ঘটে। এটা হতেই পারে, তবে এটা তেমন কোনো অপরাধ নয়। -ড. আব্দুল্লাহ আল মারুফ, অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, ঢাবি
পরীক্ষা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল কাদিরের দেওয়া চিঠির একটি কপি এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। এতে দেখা যায়, অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল মারুফের এই আংশিক কোর্সে ২৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। একজন অনুপস্থিত ছাড়া বাকি সবাইকে তিনি ১০ নম্বরে ধরে মূল্যায়ন করেছেন। এর মধ্যে কোনো শিক্ষার্থী ১০ নম্বর না পেলেও সর্বোচ্চ পেয়েছেন ৯ এবং সর্বনিম্ন ৬।
যদিও বিভাগের নিয়ম অনুযায়ী, ৫ নম্বরের পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের ১০ নম্বরে মূল্যায়নের কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া অধ্যাপক মারুফ এমন একজনকে নম্বর দিয়েছেন যিনি পরীক্ষায় অংশই নেননি।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে দেওয়া পরীক্ষা কমিটির সভাপতির চিঠিতে আরও বলা হয়, আরবি বিষয়ে বিএ (সম্মান) ৪র্থ বর্ষ, ৭ম সেমিস্টার-২০২৩ টিউটেরিয়াল পরীক্ষার জন্য ৫ নম্বর নির্ধারিত। কিন্তু অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল-মারুফ টিউটেরিয়াল পরীক্ষায় ৫ নম্বরের পরিবর্তে ১০ নম্বরের ভিত্তিতে নম্বর প্রদান করেছেন। ফলে আরবি বিষয়ে বিএ (সম্মান) ৪র্থ বর্ষ, ৭ম সেমিস্টার-২০২৩ এর রেজাল্ট প্রকাশে বিলম্ব হচ্ছে। পরবর্তী করণীয় কি? এ বিষয়ে অবহিত করার জন্য আপনাকে অনুরোধ করছি।
বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বিষয়টির সমাধান না হওয়ায় ফলাফল প্রকাশেও বিলম্ব হচ্ছে। শিক্ষকরা জানিয়েছেন, এটি প্রথম নয়, ড. আব্দুল্লাহ আল মারুফ এমন ভুল একাধিকবার করেছেন। এছাড়া কোর্স ফাইনাল পরীক্ষার প্রশ্নপত্র অসম্পূর্ণ জমা দেওয়ারও অভিযোগ আছে এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
এছাড়া এই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের প্রশ্নপত্র তৈরিতেও কারসাজির অভিযোগ রয়েছে। তিনি সাত কলেজের একটি পরীক্ষায় সভাপতি থাকাবস্থায় কমিটির সদস্যদের বাদ দিয়ে বাইরের শিক্ষক দিয়ে প্রশ্নপত্র মডারেশন করেছেন। এ বিষয়ে কমিটির অন্য সদস্যরা আপত্তি জানালে নতুন করে প্রশ্নপত্র এনে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। কমিটির সদস্যদের সাথে কথা বলে এ অভিযোগের সত্যতাও মিলেছে।
জানতে চাইলে পরীক্ষা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. আব্দুল কাদির বলেন, অধ্যাপক মারুফের নম্বর সংক্রান্ত এই অসংগতি নিয়ে আমি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর একটা চিঠি দিয়ে জানিয়েছি। কারণ আমি ৫ নম্বরের পরিবর্তে ১০ নম্বর দিয়ে ফলাফল প্রস্তুত করা সম্ভব ছিল না। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস পরবর্তীতে বিষয়টি দেখছেন বলে জানান।
বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. যুবাইর মুহাম্মদ এহসানুল হক বলেন, এটা বিভাগের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। পরীক্ষা কমিটির প্রধান এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন। তবে নৈতিকতার দিক থেকে যদি বলি, যদি কোনো শিক্ষক ৫ মার্কের জায়গায় ১০ মার্ক দেন এবং অনুপস্থিত শিক্ষার্থীকেও নম্বর দেন তাহলে সেটা ওই শিক্ষকের গাফিলতি হতে পারে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল মারুফ অতিরিক্ত নম্বরের বিষয়ে মন্তব্য করলেও অনুপস্থিত শিক্ষার্থীকে নম্বর দেওয়ার বিষয়ে কোনো কথা বলেননি। অতিরিক্ত নম্বর দেওয়া নিয়ে তিনি বলেন, পাঁচ নম্বর এদিক-সেদিক হয়েছে, পরে এটা আমি সংশোধন করে দিয়েছি। এটা অহরহই ঘটে। এটা হতেই পারে, তবে এটা তেমন কোনো অপরাধ নয়। সূত্র : দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।