জুমবাংলা ডেস্ক : সার্টিফিকেট জালিয়াতি, প্রতারণা, বয়স ও অভিজ্ঞতা সনদ জালিয়াতি, লাভজনক প্রতিষ্ঠানে চাকরির তথ্য গোপন করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ফরিদপুরের সালথা উপজেলার রঙ্গ রায়েরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আলোচিত-সমালোচিত চার শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয়েছে।
একই সঙ্গে দুই নারী শিক্ষককে চাকরিকালে নেওয়া সরকারি সমুদয় অর্থ ফেরতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফরিদপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মহিউদ্দিন স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ তথ্য জানা গেছে।
গত ২০২০ সালে চার শিক্ষককে নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হবার পর তোলপাড় শুরু হয়। এ নিয়ে জেলা দুর্নীতি দমন কমিশনে একটি মামলা হয়। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।
প্রাপ্ত অভিযোগ ও তদন্ত কমিটির রিপোর্ট থেকে জানা যায়। সালথা উপজেলায় অবস্থিত রঙ্গ রায়েরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির যোগসাজশে ২০০৮ সালে প্রধান শিক্ষকসহ তিনজন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। সেই সময় স্কুলটি বেসরকারি ছিল। চারজন প্রার্থীর মধ্যে সহকারী শিক্ষক হিসেবে সাবিনা ইয়াসমিন নিশি, সৈয়দ মাহমুদুল হাচান ও খাদিজা খানমকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরা সবাই স্কুলটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সৈয়দ নাজমুল হোসেনের আত্মীয়। এর মধ্যে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সৈয়দ নাজমুল হোসেনের চাচাতো ভাইয়ের স্ত্রী হলেন খাদিজা বেগম, চাচাতো ভাই হলেন সৈয়দ মাহমুদুল হাচান এবং খালা হলেন সাবিনা ইয়াসমিন।
২০০৮ সাল থেকে চাকরি করার পর ২০১৪ সালে স্কুলটি সরকারিকরণ হয়। চাকরিরত এ চার শিক্ষকের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি ২০২০ সালে জানাজানি হয়। এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে নড়েচড়ে বসে শিক্ষা অফিস। পরে এ নিয়ে শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
তদন্ত কমিটি জানতে পারে, প্রধান শিক্ষক সৈয়দ নাজমুল হোসেন চাকরি নেওয়ার সময় তার বয়স জালিয়াতি এবং অভিজ্ঞতা সনদ জাল করে চাকরি নিয়েছেন। এছাড়া দুর্নীতির মাধ্যমে তার তিন আত্মীয়কে চাকরি দেন। তদন্তে সরকারি কর্মচারী বিধিমালা ২০১৮ এর বিধি-৩ (খ) ও ৩ (ঘ) অনুযায়ী অসদাচরণ ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করে চাকরি হতে বরখাস্তকরণ করা হয়।
সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগকৃত সৈয়দ মাহমুদুল হাছানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি একটি লাভজনক প্রকল্পে (একটি বাড়ি একটি খামার) চাকরি করার পরও মিথ্যা তথ্য দিয়ে স্কুলের চাকরি নেন। এছাড়া সনদের তথ্য জালিয়াতির অভিযোগ উঠে। তদন্ত কমিটি তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকেও চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।
এছাড়া সহকারী শিক্ষক খাদিজা খানমের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি ভুয়া এনআইডি তৈরি করাসহ অন্যের সনদ জাল করে চাকরি নেন। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে চাকরি হতে বরখাস্তের পাশাপাশি সরকার থেকে বেতন-ভাতা হিসেবে প্রাপ্ত সব অর্থ সরকারি কোষাগারে ফেরত দেওয়ার কথা বলা হয়।
অপরদিকে একই অভিযোগে সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন নিশিকে চাকরি থেকে বরখাস্তের পাশাপাশি বেতন-ভাতাসহ সমুদয় অর্থ সরকারি কোষাগারে ফেরত দানের কথা বলা হয়।
এদিকে চার শিক্ষকের দুর্নীতির বিষয়টি জানাজানি হলে ২০২৩ সালের ৩ আগস্ট দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত কার্যালয়, ফরিদপুরের সহকারী পরিচালক সরদার আবুল বাসার একটি মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে মামলাটি চলমান রয়েছে। এ বিষয়ে বরখাস্তকৃত চার শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি।
ফরিদপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মহিউদ্দিন জানান, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাবার পর গত ২২ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত চার শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয়। তাদের স্ব স্ব নামে তাদের ঠিকানায় অফিস আদেশটি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।