জুমবাংলা ডেস্ক : কোনো রূপ সিন্ডিকেট ছাড়াই স্বল্প পরিসরে স্বপ্নের দেশ মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ফের চালু হচ্ছে। অভিবাসী কর্মীর ব্যাপক চাহিদা পূরণে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও হিউম্যান রিসোর্স মন্ত্রণালয় বাংলাদেশসহ ১৬টি সোর্স কান্ট্রি থেকে প্লানটেশন সেক্টরে যাচাই বাছাই করে অভিবাসী কর্মী নিয়োগে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আগামী ৯ মাসের মধ্যে প্লানটেশন খাতে প্রায় ৬০ হাজার অভিবাসী কর্মী নিয়োগ দেবে দেশটির সরকার। এসব অভিবাসী কর্মীরা দেশটির হিউম্যান রিসোর্স (শ্রম মন্ত্রণালয়) মন্ত্রণালয়ের শ্রম আইন অনুযায়ী বেতন-ভাতা ও সুযোগ সুবিধা লাভ করবে। স্বল্প অভিবাসন ব্যয়ে দ্রুত প্লানটেশন খাতে কর্মীর যোগান দিতে পারলে বাংলাদেশের সুনাম বাড়বে এবং অন্যান্য সেক্টরেও কর্মী নিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
এছাড়া চীনা কোম্পানির বিনিয়োগ-কৃত প্রজেক্টে স্পেশাল অ্যাপ্রভালের মাধ্যমে অভিবাসী কর্মী নিয়োগে নীতিগত সিদ্ধান্ত দিয়েছে। গত ৯ জুলাই উল্লেখিত দু’টি মন্ত্রণালয়ের যৌথ বৈঠকে এ নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গত ১০ জুলাই দেশটির সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে দেশটির প্লানটেশন খাতে ফের অভিবাসী কর্মী নিয়োগের সার্কুলার জারি করা হয়েছে। মালয়েশিয়ার চ্যালেঞ্জিং সেক্টর হচ্ছে রাবার ও পামওয়েল সেক্টর। রাবার ও পামওয়েল খাত থেকে দেশটি প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে থাকে। এ খাতে অভিবাসী কর্মীর অভাবে দেশটির বৃহৎ কোম্পানিগুলো উৎপাদন প্রক্রিয়ায় দারুণভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অভিজ্ঞ মহল এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
উল্লেখ্য, গত ৩১ মে রাত থেকে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে (একশ’ সদস্য) মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানির দরজা বন্ধ হয়ে যায়। মালয়েশিয়া সরকারের পূর্ব ঘোষিত নিয়ম অনুযায়ী ৩১ মে’র পর আর কোনো অনুমোদিত অভিবাসী কর্মীকে দেশটিতে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। অভিবাসী কর্মীদের প্রবেশের সময়সীমা বৃদ্ধি না হওয়ায় অপেক্ষমাণ ই-ভিসা-প্রাপ্ত ১৭ হাজার বাংলাদেশি হাজার হাজার কর্মীর স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যায়।
এসব কর্মী দেশটিতে যেতে না পেরে চরম হতাশায় ভুগছে। সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সিতে জমা-কৃত টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য এসব কর্মী প্রতিনিয়ত অফিসে ধরনা দিচ্ছে। মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু অপেক্ষমাণ ই-ভিসা-প্রাপ্ত এসব কর্মীর টাকা ফেরত দেয়ার জন্য বায়রার মাধ্যমে উদ্যোগ নিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। মালয়েশিয়ার ই-ভিসা-প্রাপ্ত কর্মীরা ১শ’ চিহ্নিত রিক্রুটিং এজেন্সিকে জনপ্রতি সাড়ে চার লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্বল্প পরিসরে ফের দেশটিতে কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর সার্কুলার জারি হওয়ায় দেশটির বিভিন্ন কোম্পানির নিয়োগকর্তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং হিউম্যান রিসোর্স মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের চাহিদা-পত্র জমা দিতে শুরু করেছে। মালয়েশিয়ার হিউম্যান রিসোর্স মন্ত্রণালয় নিয়োগকর্তার ইন্টারভিউ নিয়ে কর্মী নিয়োগের চাহিদার সম্ভাব্যতা যাচাই বাছাই করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অ্যাপ্রভাল দিবে। মালয়েশিয়া থেকে একাধিক সূত্র এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
এদিকে, ই-ভিসা-প্রাপ্ত ১৭ হাজার বাংলাদেশি কর্মীর ব্যাপারে মালয়েশিয়ার সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। দেশটিতে তাদের যাওয়ার কোনো সুযোগ তৈরি হচ্ছে না।
কারণ, গত ৩১ মে একটি হোটেলে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (ডিকাব) সঙ্গে মতবিনিময়-কালে ঢাকায় নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনাহ মোহাম্মদ হাশিম জানিয়ে ছিলেন, সরকারিভাবে যারা মালয়েশিয়ায় কর্মী ই-ভিসা পেয়েছেন তাদের যাওয়ার ব্যাপারে আর সময় বাড়ানো হবে না। ওই সময়ে কর্মী প্রবেশের শেষ দিকে টিকিট সিন্ডিকেট চক্র ঢাকা- কুয়ালালামপুর রুটে ওয়ানওয়ে বিজনেস ক্লাসের টিকিট ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছিল।
মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে গতকাল এস এন টি গ্রপের নির্বাহী পরিচালক ও প্রবাসী ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বাবুল জানান, মালয়েশিয়ার চ্যালেঞ্জিং খাত রাবার ও পামওয়েল সেক্টর থেকে দেশটি প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে। কিন্তু উক্ত খাত দু’টিতে বিপুল সংখ্যক অভিবাসী কর্মীর সঙ্কটের দরুন উৎপাদন প্রক্রিয়া চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও হিউম্যান রিসোর্স মন্ত্রণালয় প্লানটেশন খাতের উৎপাদন প্রক্রিয়া সচল রাখার লক্ষ্যে কর্মী নিয়োগের আবেদনপত্র যথাযথভাবে যাচাই বাছাই করে বাংলাদেশসহ ১৬টি সোর্সকান্ট্রি থেকে কর্মী নিয়োগ দিতে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রবাসী ব্যবসায়ী বাবুল বলেন, গত ১ জুলাই থেকে দেশটিতে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। বাংলাদেশি কর্মীরা কঠোর পরিশ্রমী বিধায় মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তারা আমাদের কর্মীদের নিয়োগ দিতে বেশি পছন্দ করেন। সেক্ষেত্রে প্লানটেশনসহ বিভিন্ন সেক্টরে এখনো প্রচুর বাংলাদেশি কর্মীর চাহিদা রয়েছে। প্রবাসী বাবুল বলেন, দেশটির রাবার ও পামওয়েল খাতে প্রায় ৬০ হাজার অভিবাসী কর্মী নিয়োগ দেবে এবার। আগামী ৯ মাসের মধ্যেই এসব কর্মী দেশটিতে আসতে হবে। তিনি বলেন, স্বল্প অভিবাসন ব্যয়ে এবং কম সময়ে প্লানটেশন খাতে কর্মী সরবরাহ করতে পারলে বাংলাদেশের সুনাম পুনরুদ্ধার হবে এবং অন্যান্য সেক্টরেও কর্মী প্রেরণের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ সেক্টরে কর্মী নিয়োগের ফাইল দেশটির হিউম্যান রিসোর্স মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা হচ্ছে। যাচাই বাছাই শেষে শিগগিরই বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের অ্যাপ্রভাল পাওয়া যাবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অবৈধ বিয়ের মামলা থেকে খালাস পেলেও মুক্তি মিলছে না ইমরান খানের
মালয়েশিয়ার এজেন্সি পেকার জানান কেআরজে এসডিএন বিএইচডি’র ডিরেক্টর ওয়াং কোকসী প্লানটেশন খাতে ৫শ’, সাইট ওয়ার্কার খাতে ৫শ’ এবং ফ্যাক্টরি খাতে ৫শ’ ওয়ার্কার নিয়োগের জন্য বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি শিউর ওভারসীজ রিক্রুটকে চাহিদাপত্র ইস্যু করেছে। শিউর ওভার-সীজের সিইও মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইন জানান, দেশটির সরকার প্লানটেশন সেক্টরে বাংলাদেশিসহ অভিবাসী কর্মী নিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। কঠোর যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে এসব কর্মীদের অ্যাপ্রভাল দেয়া হবে বলে জানা গেছে। তিনি বলেন, কোনো সিন্ডিকেট ছাড়াই এসব কর্মী দেশটিতে যাওয়ার সুযোগ পাবে এবং ওই দেশের শ্রম আইন অনুযায়ী সকল সুযোগ সুবিধা লাভ করবে। স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় দ্রত কর্মী পাঠানো সম্ভব হলে দেশটির অন্যান্য সেক্টরেও বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ শুরু হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বিএমইটির সূত্র জানায়, ২০২৩ সালে মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১৩ লাখ ৮ হাজার ৪০৩ জন নারী পুরুষ কর্মী বিদেশে চাকরি লাভ করেছে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গত ৭ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে ৫ লাখ ২৮ হাজার ৮৫৭ জন কর্মী চাকরি লাভ করেছে। এর মধ্যে শুধু মে মাসেই মালয়েশিয়ায় গেছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৬৯১ জন। ইস্টার্ন বিজনেস এসোসিয়েট লিমিটেডের চেয়ারম্যান ড.ওয়ালী উল্লাহ (জাহিদ) গতকাল জানান, মালয়েশিয়ার লিগ্যাল এ্যাসিস্ট ইন্টারন্যাশনাল এসডিএন বিএইচডি কোম্পানি বাংলাদেশ থেকে ৪শ’ প্লানটেশন ও ক্লিনিং খাতে নিয়োগ দেয়ার জন্য মেসার্স জাহারত এসোসিয়েটকে চাহিদাপত্র ইস্যু করেছে। এসব কর্মী দেশটির শ্রম আইন অনুযায়ী সুযোগ সুবিধা লাভ করবে। বাংলাদেশ সরকারের নির্ধারিত অভিবাসন ব্যয়েই এসব কর্মী দেশটিতে যাওয়ার সুযোগ পাবে। তিনি বলেন, সিন্ডিকেট ছাড়াই মালয়েশিয়ার সারওয়ারকে বাংলাদেশি কর্মী যাচ্ছে। কিন্তু দেশটির সাবায় সকল বাংলাদেশিকে বরক লিস্ট করে রাখা হয়েছে। সাবায় কেন বাংলাদেশ বরক লিস্ট তা’ একমাত্র কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনই বলতে পারবে।
সাবায় একমাত্র বাংলাদেশ ব্যতীত ১৫টি সোর্সকান্ট্রির কর্মীরাই বিনা বাধায় চাকরি লাভ করছে। তিনি সাবায় বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর লক্ষ্যে জোর কূটনৈতিক উদ্যোগ নেয়ার আহবান জানান। আদিব এয়ার ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরসের স্বত্বাধিকারী ও বায়রার সাবেক শীর্ষ নেতা কে এম মোবারক উল্লাহ শিমুল গতকাল শনিবার রাতে জানান, মালয়েশিয়ার প্লানটেশন সেক্টরে বাংলাদেশিসহ সোর্সকান্ট্রির কর্মীদের চাকরি দিতে দেশটির সরকার নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত দিয়েছে। তিনি বলেন, স্বল্প অভিবাসন ব্যয়ে এবং দ্রæত কর্মী পাঠাতে পারলে দেশটির বন্ধ শ্রমবাজার পুরোপুরি উন্মুক্ত হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে শিমুল বলেন, কোনো কর্মী যাতে দেশটিতে গিয়ে প্রতারণার শিকার না হয় এবং চাকরির নিরাপত্তা পায় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত সজাগ দৃষ্টি যাচাই বাছাই করে অ্যাপ্রভাল দিবে। তিনি বলেন, ভ্রাতৃ-প্রতীম মালয়েশিয়ার সাথে বাংলাদেশের অত্যন্ত সুসম্পর্ক রয়েছে। তিনি দেশটির সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার পুনরুদ্ধারে সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানান। সূত্র : ইনকিলাব
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।