সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ : ঈদের দিন দুপুরে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার বাঁচামারা ইউনিয়নের ভাড়াঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিনতলা ভবন ও একটি ওয়াসব্লক যমুনা নদীতে সম্পূর্ণভাবে বিলীন হয়ে গেছে। এই ঘটনায় স্থানীয়রা পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং প্রশাসনের গাফিলতিকে দায়ী করেছেন।
গত শনিবার, ৭ জুন দুপুরে পুরো ভবনটি যমুনায় তলিয়ে যায়। এর আগের দিন, শুক্রবার (৬ জুন), ভবনের একটি অংশ ভেঙে নদীতে পড়ে যায়।
জানা গেছে, বিদ্যালয়টি বহুদিন ধরেই যমুনা নদীর ভাঙনের ঝুঁকিতে ছিল। ২০২২ সাল থেকেই ভবনটি হুমকির মুখে পড়লেও স্থায়ীভাবে কোনো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এতে প্রায় ১ কোটি ৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
বাঁচামারা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ওয়াজেদ আলী জানান, বিগত কয়েক বছর ধরে বিদ্যালয়টি যমুনার ভাঙনের কবলে রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড নামমাত্র কিছু বালুর বস্তা ফেললেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ভাঙনের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও এলাকাবাসীর প্রতিবাদের মুখে প্রায় ৮ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি ওয়াসব্লক নির্মাণ করা হয়। কিন্তু সময়মতো ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে পুরো বিদ্যালয়ই নদীতে তলিয়ে যায়।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কামাল পাশা বলেন, তিন বছর ধরে ভবনটি ভাঙনের ঝুঁকিতে ছিল। শুক্রবার ভবনের একাংশ নদীতে পড়ে যায়, আর ঈদের দিন পুরো ভবনটি বিলীন হয়ে যায়। তবে আগেই সতর্কতামূলকভাবে বেঞ্চ, টেবিল ও অন্যান্য আসবাবপত্র সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়েছিল। বর্তমানে বিদ্যালয়ে কেবল ৩ জন সহকারী শিক্ষক রয়েছেন এবং মাত্র ২ জন পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
দৌলতপুর উপজেলা প্রকৌশলী খন্দকার এনামুল সালেহীন জানান, যখন বিদ্যালয়টি নির্মাণ করা হয়, তখন যমুনা নদী অনেক দূরে ছিল। কিন্তু কিছু বছরের মধ্যেই নদী পথ পরিবর্তন করে ভবনের কাছে চলে আসে। পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রতি বছর বালুর বস্তা ফেলে এলেও এবার দ্রুত ভাঙনের কারণে নিলাম আহ্বান করার আগেই ভবনটি নদীগর্ভে চলে যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিয়ান নুরেন বলেন, দুই-তিন মাস আগে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বিদ্যালয়টি রক্ষার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছিল। তারা প্রক্রিয়া শুরু করলেও দ্রুত ভাঙনের ফলে নিলাম হওয়ার আগেই ভবনটি নদীতে বিলীন হয়ে যায়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান বলেন, ১৯৯৬ সালে যমুনা নদীর পাশে একটি চর জেগে ওঠে এবং ১৯৯৮ সালের দিকে সেখানে জনবসতি গড়ে ওঠে। এমন চরে স্থাপনা গড়তে হলে কারিগরি সমীক্ষার ভিত্তিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মতামত নেওয়া উচিত। কিন্তু ভাড়াঙ্গা বিদ্যালয়টি নির্মাণের আগে এমন কোনো মতামত নেওয়া হয়নি। ২০২২ সাল থেকে প্রতিবছর বালুর বস্তা ফেলা হলেও এবার ভাঙন শুরু হয় ভিন্ন দিক থেকে। ফলে পাশের সুরঙ্গ দিয়ে বালু সরে গিয়ে একদিনেই পুরো ভবনটি নদীতে বিলীন হয়ে যায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।