সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার বরাইদ ইউনিয়নে ১২ ও ১৬ বছরের দুই কিশোরকে মারধরের পর চুরির মামলায় পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারের সময় তাদের একজনের হাতে হ্যান্ডকাফ এবং অন্যজনের হাতে দড়ি বেঁধে থানায় নেওয়া হয়। এরপর বয়স ১৮ দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়, যেখানে আদালত তাদের টঙ্গীর শিশু-কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
স্থানীয় সূত্র ও পরিবারের অভিযোগ, জমি কেনাকে কেন্দ্র করে দুই কিশোরকে মারধর করে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।
গ্রেপ্তার হওয়া কিশোরদের একজন বালিয়াটি দাখিল মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী এবং অন্যজন আব্দুর রহমান উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। জন্মনিবন্ধন সনদ অনুযায়ী একজনের জন্ম ২৬ মে ২০১৩ এবং অপরজনের জন্ম ৫ আগস্ট ২০০৮। অথচ থানা থেকে পাঠানো আদালতের নথিতে তাদের বয়স ১৮ বছর দেখানো হয়েছে।
একই গ্রামের শফিকুল ইসলাম গত বৃহস্পতিবার সাটুরিয়া থানায় এজাহার করেন, বুধবার রাতে তাঁর বাড়ি থেকে একটি ল্যাপটপ, পাঁচটি স্মার্টফোন, নগদ ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ও অন্যান্য মালামাল চুরি হয়। পরদিন সকালে স্থানীয়দের কাছ থেকে জানতে পারেন, দুই কিশোরকে সন্দেহভাজন হিসেবে এলাকায় ঘুরতে দেখা গেছে। পরে তিনি তাদের ধরে থানায় সোপর্দ করেন।
এজাহারে তিনি দাবি করেন, স্থানীয় লোকজনের উপস্থিতিতে জিজ্ঞাসাবাদে দুই কিশোর চুরির কথা স্বীকার করেছে। তবে চুরির মালামাল না পেয়ে তিনি মামলা করেন।
আলমগীরের বাবা লাল মিয়া বলেন, “সম্প্রতি আমি একটি জমি কিনেছি। ওই জমি দখল করতে চাঁদাবাজ চক্র দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করছিল। চাঁদা না দেওয়ায় আমার ছেলেকে সেলুন থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে শফিকুলের গোডাউনে আটকে রেখে নির্যাতন চালানো হয়। একপর্যায়ে আমার নম্বরে ফোন করে টাকা দাবি করা হয়। আমি না করায় নির্যাতন বাড়ে। পরে মিথ্যা মামলায় ফাঁসায়।”
এক কিশোরের বাবা বিল্লাল হোসেন বলেন, “বুধবার সকালে শফিকুলের লোকজন বাড়িতে ঢুকে আমার ছেলেকে ঘর থেকে টেনে হিঁচড়ে বের করে নিয়ে যায়। বাধা দিতে গেলে স্ত্রীকেও মারধর করে। পরে চোর বানিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।”
সাটুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, “বুধবার সন্ধ্যায় সাটুরিয়া থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা দুই কিশোরকে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন। তাদের শরীরে মারধরের চিহ্ন ছিল। আমরা তা রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করেছি এবং প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছি।”
সাটুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুল ইসলাম বলেন, “বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তবে শিশুদের বয়স ১৮ বছর দেখিয়ে আদালতে পাঠানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এজাহার ও তদন্তের ভিত্তিতে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালত বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ব্যবস্থা নিয়েছেন।”
শিশু আইন অনুযায়ী, ১৮ বছরের নিচের যেকোনো অভিযুক্তের ক্ষেত্রে তদন্তসাপেক্ষে বয়স যাচাই এবং তার উপযুক্ত শিশুবান্ধব পরিবেশে জিজ্ঞাসাবাদ করা বাধ্যতামূলক। জন্মনিবন্ধনের স্পষ্ট প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও শিশুদের প্রাপ্তবয়স্ক দেখানো আইন লঙ্ঘনের শামিল।
এদিকে, দুই কিশোরের পরিবার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের বিচার দাবি করেছেন। এ বিষয়ে তাঁরা থানায় পৃথক দুটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।