লাইফস্টাইল ডেস্ক : স্বাস্থ্যের হাল ফেরাতে নিম খেতে হবে না উচ্ছে? পুষ্টিবিদের পরামর্শ না শুনলে অকালেই শরীরে পড়বে মরচে! দিদা, ঠাকুমারা সবসময়ই নিম ও উচ্ছের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তাঁদের মতে, এই দুই খাবারেই রয়েছে একাধিক চমকপ্রদ উপাদান। তাই তো তাঁরা নাতি-পুতিদের ছোটবেলা থেকেই উচ্ছে ও নিমের পদ খাওয়ান। তারপরই এনাদের চোখে আসে শান্তির ঘুম!
তবে এহেন উপকারী উচ্ছে ও নিমপাতাকে নিয়েও কিন্তু বিতর্কের শেষ নেই। আমাদের মধ্যে একদল মনে করেন যে, উচ্ছেই হল সর্বশ্রেষ্ঠ। তাই তাঁরা প্রতিদিনের ডায়েটে এই সবজিকে সাড়ম্বরে জায়গা করে দেন। অপরদিকে আবার একদল এই তত্ত্ব মেনে নিতে নারাজ। বরং তাঁরা সারাদিন নিমের গুণ কীর্তনে ব্যস্ত থাকেন।
এখন প্রশ্ন হল, নিম না উচ্ছে, কোনটা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী? এই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য আমরা যোগাযোগ করেছিলাম কলকাতা শহরের বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ ঈশানী গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তিনিই আমাদের এই বিষয়ের সবদিক সম্পর্কে জানালেন।
১. উচ্ছে, করলা গুণের রাজা: ঈশানী গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, উচ্ছে ও করলার মতো সবজিতে রয়েছে পর্যাপ্ত ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবারের ভাণ্ডার। তাই নিয়মিত এইসব সবজির পদ পাতে রাখলে মিলবে একাধিক উপকার, যেমন ধরুন-
-উচ্ছেতে মজুত ভিটামিন সি ইমিউনিটি চাঙ্গা রাখে
-কোলেস্টেরলকে বাগে এনে হার্টকে সুস্থ রাখার কাজেও এর জুড়ি মেলা ভার
-ডায়াবিটিস রোগীর ইনসুলিন রেজিস্টেন্স কমিয়ে সুগারকে নিয়ন্ত্রণ করার কাজেও এই সবজি সিদ্ধহস্ত
-এতে রয়েছে ভিটামিন এ-এর ভাণ্ডার যা কিনা চোখের স্বাস্থ্য ফেরাবে
-কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা মেটানোর কাজেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে উচ্ছে। তাই নিয়মিত এই সবজির পদ খেতে ভুলবেন না যেন!
২. মহৌষধি নিম: আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে, নিম হল মহৌষধি। তাই তো একাধিক ছোট-বড় রোগের ফাঁদ এড়িয়ে চলতে চাইলে নিমপাতার শরণাপন্ন হতেই পারেন। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, নিয়মিত এই পাতা সেবন করলেই ইমিউনিটি বাড়ে। ফলে একাধিক সংক্রামক অসুখের ফাঁদ এড়িয়ে চলা যায়। শুধু তাই নয়, এই পাতায় রয়েছে অ্যান্টিডায়াবিটিক উপাদান। সুতরাং হাই সুগারকে বাগে আনার কাজেও এর জুড়ি মেলা ভার। এছাড়া প্রদাহের বাড়াবাড়ন্ত কমানোর কাজেও সিদ্ধহস্ত নিম। তাই তো নিয়মিত নিমপাতা খাওয়া জরুরি।
৩. নিম না উচ্ছে, কোনটা বেশি স্বাস্থ্যকর: এই দুই প্রাকৃতিক উপাদানের মধ্যে কোনও একটিকে বেছে নেওয়া সম্ভব নয়। কারণ নিম ও উচ্ছে, এই দুইতেই রয়েছে একাধিক উপকারী উপাদানের খনি। তাই তো নিজের পছন্দ মতো যে কোনও একটি প্রাকৃতিক উপাদানকে পাতে জায়গা করে দিতে পারেন।
সেক্ষেত্রে সব থেকে ভালো হয় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিম ও উচ্ছে খেলে। অর্থাৎ আজ নিম খেলেন তো কাল করলা খান। তারপর আবার নিম খেলেন। এভাবে ডায়েট চার্ট বানিয়ে নিলেই উপকার পাবেন হাতেনাতে।
৪. জুস খেলেই ফিরবে স্বাস্থ্যের হাল: মনে রাখবেন, নিম বা উচ্ছে রান্না করে খেলে তার মধ্যে মজুত থাকা কিছুটা পরিমাণ ভিটামিন ও খনিজ নষ্ট হয়ে যায়। তাই সবথেকে বেশি উপকার পেতে চাইলে আপনাকে নিম ও উচ্ছের রস করে খেতে হবে। রোজ সকালে মাত্র এক কাপ নিম বা উচ্ছের রস খেলেই কিন্তু স্বাস্থ্যের হাল হকিকত বদলে যেতে সময় লাগবে না। তাই যাঁরা তিতো সহ্য করতে পারেন, তাঁরা অবশ্যই এইসব পানীয় খাওয়া চালিয়ে যান। এতেই আপনার সুস্থ থাকার পথ প্রশস্থ হবে।
৫. ভেজে খাবেন না: অনেকেই নিম বা উচ্ছে গরম তেলে কড়া কড়া করে ভেজে নিয়ে গলাধঃকরণ করেন। আর তাতেই এইসব প্রাকৃতিক উপাদানের গুণ নষ্ট হয়ে যায়। এমনকী স্বাস্থ্যের বারোটা বাজতেও সময় লাগে না। তাই নিম ও উচ্ছে ভাজা খাওয়ার পরিবর্তে তরকারি করে খান। তাহলেই উপকার মিলবে বেশি। সুস্থ-সবল জীবনযাপন করতে পারবেন।
Disclaimer: প্রতিবেদনটি সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে। কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।-এই সময়
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।