লাইফস্টাইল ডেস্ক : ভিটামিন বি ১২ ঘাটতি হলে যে শুধু দুর্বল লাগে সেটাই নয়। স্বাভাবিক লক্ষণের পাশাপাশি বিভিন্ন অস্বাভাবিক এবং অপ্রত্যাশিত লক্ষণও ক্ষেত্রবিশেষে প্রকাশ পেতে পারে। প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিদিন ২.৪ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন বি ১২ খাওয়া উচিত। স্নায়ুর কার্যকারিতা বজায় রাখা, লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করা এবং ডিএনএ সংশ্লেষণে সহায়তা করে এই ভিটামিন। জেনে নিন ভিটামিন বি ১২ ঘাটতি হলে কোন কোন লক্ষণ প্রকাশ পায়।
১. ক্লান্ত বোধ করা ভিটামিন বি ১২ ঘাটতির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য লক্ষণ। শরীরের কোষ সঠিকভাবে কাজ করার জন্য ভিটামিন বি ১২ প্রয়োজন। এর অপর্যাপ্ত মাত্রা স্বাভাবিক লোহিত রক্ত কণিকার উৎপাদন হ্রাস করতে পারে, যা অক্সিজেন সরবরাহকে ব্যাহত করতে পারে। ভিটামিন বি ১২ এর ঘাটতি মেগালোব্লাস্টিক অ্যানিমিয়া হতে পারে।
২. বি ১২ এর ঘাটতিজনিত অ্যানিমিয়া ত্বককে ফ্যাকাশে করে তুলতে পারে। এই ভিটামিনের অভাবে হতে পারে জন্ডিস। জন্ডিসের কারণে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যায় ও ত্বক এবং চোখের সাদা অংশ হলুদ বর্ণ ধারণ করে।
৩. মাথা ব্যথার কারণ হতে পারে এই ভিটামিন ঘাটতি। ২০১৯ সালে ১৪০ জনের উপর করা একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, এই ভিটামিনের ঘাটতিতে থাকা ব্যক্তিদের অর্ধেকই মাইগ্রেনের ব্যথা হওয়ার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে।
৪. মস্তিষ্কসহ সুস্থ স্নায়ুতন্ত্র বজায় রাখার জন্য অপরিহার্য ভিটামিন বি-১২। এর মাত্রা কমে গেলে স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। মেজাজের ব্যাঘাত ঘটতে পারে যেমন হতাশা এবং বিরক্তি।
৫. ভিটামিন বি ১২ এর অভাবের অস্বাভাবিক লক্ষণগুলোর মধ্যে একটি হলো কাঁটা জাতীয় অনুভূতি, যাকে প্যারেস্থেসিয়া বলা হয়। এই সংবেদনগুলো সাধারণত হাতে, পায়ে বা কখনও কখনও মুখেও ঘটে।
৬. স্মৃতি সমস্যা, বিভ্রান্তি এবং মনোনিবেশ করতে অসুবিধা হতে পারে অপর্যাপ্ত ভিটামিন বি ১২ থাকলে। এই উপসর্গগুলো সময়ের সাথে সাথে আরও বাড়ে।
৭. বিষণ্ণতা, উদ্বেগ এবং মেজাজের পরিবর্তনসহ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোর সাথে ভিটামিন বি ১২ এর অভাবের সংযোগ রয়েছে। এই ভিটামিন সেরোটোনিন এবং ডোপামিনের মতো নিউরোট্রান্সমিটার সংশ্লেষণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এসব হরমোন মেজাজ এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে।
৮. ভিটামিন বি ১২ এর অভাব দৃষ্টিশক্তিকে বিভিন্ন উপায়ে প্রভাবিত করতে পারে, যার মধ্যে ঝাপসা দৃষ্টি ও আলোর সংবেদনশীলতা অন্যতম। গুরুতর ক্ষেত্রে অপটিক স্নায়ুর ক্ষতি হতে পারে।
৯. শারীরিক অসাড়তা বিশেষ করে হাত ও পায়ে অসাড়তা ভিটামিন বি-১২ কমে যাওয়ার লক্ষণ। পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি নামে পরিচিত এই অবস্থাটি ঘটে কারণ বি-১২ এর ঘাটতি স্নায়ুকে ঘিরে থাকা একটি উপাদানকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। ফলস্বরূপ স্নায়ুগুলো সঠিকভাবে সংকেত প্রেরণ করতে পারে না। যার ফল অসাড়তার অনুভূতি হয়। ধীরে ধীরে এই অবস্থা আরও গুরুতর হতে পারে যেমন পেশী দুর্বলতা, ভারসাম্য এবং সমন্বয়ের সাথে অসুবিধা।
১০. মুখের আলসার ভিটামিন বি ১২ এর অভাব নির্দেশ করতে পারে। ভিটামিনটির অপর্যাপ্ত মাত্রার কারণে মুখের এপিথেলিয়াল টিস্যুতে পরিবর্তন হয়। এর ফলে অস্বস্তি, ব্যথা এবং খেতে বা গিলতে অসুবিধা হয়।
১১. দ্রুত বা অনিয়মিত হৃদস্পন্দন এবং শ্বাসকষ্টের মতো কার্ডিওভাসকুলার লক্ষণগুলো গুরুতর ভিটামিন বি ১২ এর অভাবযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ঘটতে পারে। এর অভাব স্বাস্থ্যকর লোহিত রক্ত কণিকার উৎপাদনকে বাধাগ্রস্ত করে, যার ফলে রক্তাল্পতা এবং টিস্যুতে অপর্যাপ্ত অক্সিজেন পরিবহন হয়। বুক ধড়ফড় এবং শ্বাসকষ্ট হিসেবে তখন প্রকাশ পেতে থাকে লক্ষণ।
১২. ডায়রিয়া, বমি বমি ভাব, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেট ফেঁপে যাওয়া, গ্যাস এবং অন্যান্য গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল উপসর্গের কারণ হতে পারে ভিটামিন বি ১২ এর অভাব।
কোন কোন খাবারে পাবেন ভিটামিন বি ১২
প্রাণীজ প্রোটিন যেমন মাংস ও কলিজায় পাওয়া যায় এই ভিটামিন। টুনা, সার্ডিন ও স্যামন মাছে পাবেন ভিটামিন বি ১২। প্রচুর পরিমাণে বি ভিটামিন মেলে ডিম থেকে। এছাড়া পনির ও দই খেতে পারেন নিয়মিত।
তথ্যসূত্র: হেলথলাইন ও টাইমস অব ইন্ডিয়া
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।