শওগাত আলী সাগর:
১.আবরারের মা আর বাবার একটি ছবি ঘুরছে ফেসবুকে। ছবিটার দিকে তাকানো যায় না। গলা ধরে আসে। বুকের ভেতরটা ভারী হয়ে আসে। অনেক বছর আগে আরো একটি ছবি দেখে বুকের ভেতরটা হাহাকার করে উঠেছিলো। সেটা শেখ হাসিনার ছবি। পনেরো আগষ্ট এলেই সেই ছবিটা আমরা দেখতাম, আর নতুন করে শপথে বলীয়ান হতাম। রাসেলের মৃত্যুর কথা স্মরণ করে এখনো শেখ হাসিনা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। স্বজনের খুন হয়ে যা্ওয়ার বেদনা সবার কাছে একই রকম, শেখ হাসিনার কাছে যেমন, আবরার এর মায়ের কাছেও তেমন। আবরার খুন হয়ে যা্ওয়ায় তার মায়ের যে বেদনা, সেটা শেখ হাসিনার চেয়ে কারোই বেশি বোঝার কথা না।!
২. আবরার হত্যার প্রতিক্রিয়ায় নানা রকম বক্তব্য দেখি। ’মেধাবী’ ’মেধাবী’ বলে কারো কারো রোদনও চোখে পড়ছে। আবরার হত্যার সাথে মেধার সম্পর্ক কি? কোনোই সম্পর্ক নেই। আবরার হত্যার সাথে সম্পর্কটা রাজনীতির। সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনের এই নেতারা নিজেদের দেশের প্রচলিত সবধরনের আইনের উর্ধ্বে দাঁড় করিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিলো। তাদের মনে বিশ্বাস ছিলো, হয়তোবা এখনো আছে- তারা দেশের সব আইনের উর্ধ্বে । তারা কাউকে পিটিয়ে মেরে ফেললেও আইন তাদের স্পর্শ করবে না।
৩. এই বিশ্বাসটা কেবল তাদের মনেই তৈরি হয়নি। বুয়েটের, হলের অন্যান্য শিক্ষার্থীরাও হয়তো তাই বিশ্বাস করতো। ‘ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে আবরারকে পেটানো হলো- কেউ এগিয়ে এলো না কেন’- বলে যারা আহাজারি করছেন, তারা হয়তো এই দিকটা বিবেচনায় নেননি। কেউ এগিয়ে যায়নি- কারন- তারাও বিশ্বাস করেছে- এরা আইনের উর্ধ্বে , কাজেই কেউ নিজেকে বিপদগ্রস্থ করতে চায় নি।
৪. হলের কতিপয় শিক্ষার্থী (আসলে ছাত্রলীগের নেতা) দেশের আইনের উর্ধ্বে- এই বিশ্বাসটাও কিন্তু এমনিতেই তৈরি হয়নি। বছরের পর বছর ধরে নানা ঘটনা, বিচারহীনতা, কথা বললেই নানা কিছুতেই ফাঁসিয়ে দেয়া- সবার মনেই একটা আতংক তৈরি করেছে। সেই আতংকই হলের অন্যান্য শিক্ষার্থীদের ‘এসকেপিষ্ট’ হতে শিখিয়েছে। আবরারও কি কোথাও প্রতিবাদ করতে গিয়েছিলো? যায় নি। ফেসবুকের তার লেখাটাও খুব আক্রমনাত্মক কিছু না।তবু তাকে মরতে হয়েছে। তাকে মেরে ফেলা হয়েছে।
৫. আচ্ছা, আবরার যদি মরে না যেতো! সারা রাত পিটিয়ে তাকে পঙ্গু করে হলের ভেতর কিংবা বাইরে ফেলে রাখলে কি হতো? তখন কি পুলিশ আসতো? কোনো মামলা হতো? আমার বিশ্বাস হয় না। তখন হয়তো অন্য কোনো অপবাদ দিয়ে আবরারকেই অপরাধী করে ফেলা হতো। কে জানে, উৎসাহী পুলিশ আবরারকেই জেলে পুরে দিতো কী না! এতোক্ষণে হয়তো ‘তার চরিত্রহীনতার’ নানা প্রমানে ফেসবুক সয়লাব হয়ে যেতো। আবরার মরে গিয়েই যতো বিপদ বাধিয়েছে।
৬. ভালো লক্ষণ, পত্রিকাগুলো দ্রুততম সময়ে ঘাতকদের নাম পরিচয় প্রকাশ করে দিয়েছে। সরকারও সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ নিয়েছে।একদিনের মধ্যে এতোগুলো খুনী গ্রেফতার হয়েছে- এমন নজির গত ১০ বছরে একটিও কি আছে? প্রকাশ্যে দিবালোকে কুপিয়ে মারা বিশ্বজিতের খুনীরাও কি এতোটা দ্রুততায় গ্রেফতার হয়েছিলো? মনে হয় না।
৭. একদিনের মধ্যেই এতোজন অভিযুক্ত গ্রেফতার হ্ওয়ার পরও কিন্তু মানুষের মনে সংশয় আছে। সেই সংশয়টাও কিন্তু বছরের পর বছর ধরেই তৈরি হয়েছে। বিচার না হতে না হতে, বিশ্বজিতের খুনীদের অধিকাংশই বড় শাস্তি থেকে বাদ পড়ে গিয়ে এই ধরনের অবিশ্বাস, সংশয় তৈরি করে দিয়েছে। আবরার হত্যার বিচারের মাধ্যমে মানুষের মনে অস্থা ফিরিয়ে আনার একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে আমি মনে করি।
৮. শেখ রাসেলের হত্যাকান্ড শেখ হাসিনার বুকের ভেতর যে বেদনা তৈরি করেছিলো, আবরারের খুন তার বোনের, মায়ের বাবার বুকেও একই বেদনা তৈরি করেছে। এই দিকটা যেনো আমরা বুঝতে পারি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।