জুমবাংলা ডেস্ক : চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন মো. রেজাউল করিম চৌধুরী।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মনোনয়ন বোর্ডের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পূর্ব পর্যন্ত আলোচনাতেই ছিলেন না এই নেতা।
চট্টগ্রামে এখন টক অব দি টাউন বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছিরের বাদ পড়া এবং রেজাউল করিম চৌধুরীর মনোনয়ন প্রাপ্তি।
এই মনোনয়ন ঘোষণার পূর্ব পর্যন্ত আলোচনায় ছিলেন বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, সাবেক সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, ব্যবসায়ী নেতা মাহবুবুল আলমসহ বেশ কয়েকজন পরিচিত মুখ। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগরীতে ক্লিন ইমেজের আওয়ামী লীগ নেতা, লেখক, গবেষক এবং ঐতিহ্যগতভাবে জমিদার পরিবারের সন্তান রেজাউল করিম চৌধুরী।
এক নজরে রেজাউল করিম চৌধুরী :
পিতা : মরহুম হারুন-অর-রসিদ চৌধুরী, মাতা : মরহুমা সামসুন নাহার বেগম
পিতা মরহুম হারুন-অর-রশীদ চৌধুরী ছিলেন একজন উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ও দাদা ছালেহ আহমদ ছিলেন ইংরেজ শাসিত ভারত এবং পাকিস্তান আমলে চট্টগ্রামের একজন খ্যাতিমান আইনজীবী ও চট্টগ্রামে বৃটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত বিলুপ্ত কমরেড ব্যাংকের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তিনি পাকিস্তান আন্দোলন ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। পরিবারের বড় ভাই অধ্যাপক সুলতানুল আলম চৌধুরী ছিলেন একজন রাজনীতিবিদ। তিনি ১৯৫৪ সালের যুক্ত ফ্রন্ট নির্বাচনে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
এছাড়াও তার পূর্ব পুরুষেরা চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় ২৩টি মসজিদ প্রতিষ্ঠাসহ অসংখ্য জনকল্যাণমূলক কাজ করেছেন। যার কারণে এলাকার জনসাধারণ এখনও শ্রদ্ধা ভরে খ্যাতিমান ঐতিহ্যবাহী বহরদার পরিবারের কথা।
রেজাউল করিম চৌধুরীর জন্ম ৩১মে ১৯৫৩ সালে চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানার অন্তর্গত ৬ নম্বর পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ডের ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীন জমিদার বংশ বহরদার পরিবারে।
শিক্ষা জীবন : সাবেক বৃহত্তর পাঁচলাইশ থানায় তার পরিবারের পূর্ব পুরুষেরা এলাকায় শিক্ষার প্রসারের জন্যে ১৮২০ সালে বহরদার হাটে নিজস্ব জমির ওপর প্রতিষ্ঠা করেন পূর্ব ষোলশহর প্রাথমিক বিদ্যালয়। ওই বিদ্যালয় থেকেই রেজাউল করিম ১৯৬২ সালে ৫ম শ্রেণি এবং পরবর্তীতে চট্টগ্রাম সরকারি মুসলিম হাই স্কুল থেকে এস.এস.সি পাশ করেন।
চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এইচ.এস.সি. এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাচেলর অব আর্টস ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে তিনি আইন বিষয়ে পড়াশোনার জন্যে ভর্তি হন। কিন্তু জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর হত্যার প্রতিবাদে সামরিক দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সক্রিয় প্রতিরোধ লড়াইয়ে নেমে ফাইনাল পরীক্ষা দিতে পারেননি।
রাজনৈতিক জীবন :
১৯৬৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগে যোগ দেন। ১৯৬৯-১৯৭০ সালে সাংগঠনিক সম্পাদক চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগ। ১৯৭০-১৯৭১ সালে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগ। ১৯৭২-১৯৭৬ সালে সভাপতি চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগ।
১৯৭০ সালে বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলা ছাত্রলীগ কার্যকরী কমিটির সদস্য। ১৯৭২-১৯৭৩ সালে দপ্তর সম্পাদক চট্টগ্রাম জেলা ছাত্রলীগ। ১৯৭৩-১৯৭৫ সালে সাংগঠনিক সম্পাদক চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগ। ১৯৭৬-১৯৭৮ সালে সাধারণ সম্পাদক চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগ। ১৯৭৮-১৯৭৯ সালে আহ্বায়ক চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগ।
১৯৮০ সালে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য। ১৯৯২ চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য। ১৯৯৭-২০০৬ সালে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক। ২০০৬-২০১৪ সালে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। ২০১৪ সালে থেকে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি চট্টগ্রমের উন্নয়নের দাবিতে সর্বপ্রথম সংগঠন চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ ও চট্টগ্রামের দুঃখ নামে খ্যাত চাক্তাই খাল খনন সংগ্রাম কমিটির প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ছিলেন ১৯৮৩-১৯৯৪ সাল পর্যন্ত।
রেজাউল করিম চৌধুরী একজন লেখক ও গবেষক হিসেবেও পরিচিত। লিখেছেন একাধিক বইও। তার প্রকাশিত প্রকাশনার মধ্যে রয়েছে সম্পাদক-মাসিক অযুত কণ্ঠ (১৯৭২),বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৭৬ সালে সামরিক শাসনকে উপেক্ষা করে ‘সূর্যপথ’ পত্রিকা প্রকাশ করেন। ছিলেন পাক্ষিক পত্রিকা ‘বারুদ’ পত্রিকার সম্পাদক।
তার লেখা বইয়ের মধ্যে রয়েছে জামায়াত শিবিরের হিংস্রতা ও ধর্মীয় রাজনীতি (১৯৯৩), কালো টাকা নির্ভর রুগ্ন রাজনীতি থেকে মুক্ত হতে হবে (২০১৪), ছাত্রলীগ ষাটের দশকে চট্টগ্রাম (২০১৬) এবং স্বদেশের রাজনীতি ও ঘরের শত্রু বিভীষণ (২০১৯)।
ব্যক্তি জীবনে স্ত্রী, দুই কন্যা এবং এক পুত্র সন্তানের জনক তিনি। স্ত্রী- সেলিনা আক্তার গৃহিণী, মেয়ে- তানজিনা শারমিন নিপুন (শিক্ষক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও বর্তমানে সরকারি বৃত্তি নিয়ে পি.এইচ.ডি ডিগ্রি অর্জনের জন্যে বিদেশে অধ্যায়নরত), দ্বিতীয় কন্যা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতোকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন এবং ছোট ছেলে ইমরান রেজা চৌধুরী কেমিক্যাল প্রকৌশল বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।