ধর্ম ডেস্ক : প্রাত্যহিক জীবন পরিচালনা করতে মানুষ বিভিন্ন অবস্থার সম্মুখীন হন। মুখোমুখি হন অনেক দুঃখ কষ্টের। যার ফলশ্রুতিতে পরিশ্রম করতে হয় অক্লান্ত। চেষ্টা করতে হয় অনবরত। আর কখনো কখনো বিপদ আপদে ঋণ নিতে অন্যের থেকে। মানুষ মূলত দুরবস্থায় পড়লে অন্য মানুষের থেকে ঋণ নেয়। যে ঋণ প্রধান করে সেও বিপদে কারও সহযোগিতার জন্য ঋণ দেয়। তাই ঋণ দেওয়া নেওয়া উভয়টি সহযোগিতামূলক কাজ।
তবে ঋণ সময়মতো পরিশোধ করতে বিলম্ব না করা উচিৎ। ইসলামে সঠিক সময়ে ঋণ শোধ করতে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কারণ অনেক সময় ঋণ কারো কারো জীবনে দুঃখকষ্ট নিয়ে আসে। দেখা যায় ঋণগ্রহীতা সময়মতো ঋণ আদায় করতে না পারায় হতাশায় পড়ে। তাকে ওয়াদা ভঙ্গের অভিযোগে অভিযুক্ত হতে হয়। ঋণদাতার থেকে কটুবাক্য শুনতে হয়। সম্মান হারাতে হয়।
এ ক্ষেত্রে ইসলাম দ্রুত ঋণমুক্ত হওয়ার জন্য কিছু আমল ও দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন। যে দোয়াগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সহযোগিতা চাইলে দ্রুত ঋণমুক্ত হওয়া যাবে।
দোয়াগুলো হলো-
اللَّهُمَّ اكْفِنِي بِحَلاَلِكَ عَنْ حَرَامِكَ، وَأَغْنِنِي بِفَضْلِكِ عَمَّنْ سِوَاكَ
বাংলা উচ্চারণ :
আল্লা-হুম্মাকফিনী বিহালা-লিকা ‘আন হারা-মিকা ওয়া আগনিনী বিফাদ্বলিকা ‘আম্মান সিওয়া-ক।
বাংলা অর্থ:
‘হে আল্লাহ! হারামের পরিবর্তে তোমার হালাল রুজি আমার জন্য যথেষ্ট কর। আর তোমাকে ছাড়া আমাকে কারো মুখাপেক্ষী করো না এবং স্বীয় অনুগ্রহ দ্বারা আমাকে স্বচ্ছলতা দান কর।’
হাদিসে এসেছে, একবার হজরত আলী রাদিআল্লাহু আনহুর কাছে এক ব্যক্তি তার ঋণ পরিশোধের জন্য কিছু সাহায্য চায়। এ সময় আলী রাদিআল্লাহু আনহু তাকে বলেন, আমি কি তোমাকে কয়েকটি শব্দ শিক্ষা দেব, যা আমাকে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিক্ষা দিয়েছেন? যদি তুমি এটা পাঠ করো, তাহলে আল্লাহই তোমার ঋণমুক্তির ব্যাপারে দায়িত্ব নেবেন, যদি তোমার ঋণ পর্বতসমানও হয়।
এরপর হযরত আলী রাদিআল্লাহু আনহু ওই ব্যক্তিকে উপরের দোয়া পড়তে বলেছিলেন।-তিরমিজি শরীফ, হাদিস নং ৩৫৬৩।
আর একটি দোয়ার কথা হাদিসে এসেছে,
হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা।
রসুল তাকে বললেন, আবু উমামা! ব্যাপার কী, নামাজের সময় ছাড়াও তোমাকে মসজিদে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে?
আবু উমামা বললেন, ইয়া রসুলাল্লাহ! অনেক ঋণ এবং দুনিয়ার চিন্তা আমাকে গ্রাস করে রেখেছে। তখন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, আমি কি তোমাকে এমন কিছু কালিমা শিখিয়ে দেব, যেগুলো বললে আল্লাহ তায়ালা তোমার চিন্তাকে দূর করে দেবেন এবং তোমার ঋণগুলো আদায় করে দেবেন।
তিনি বলেন, জি হ্যাঁ ইয়া রসুলাল্লাহ! অবশ্যই বলুন, তখন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে নিম্নের দোয়াটি শিখিয়ে দেন এবং তা সকাল সন্ধ্যায় পড়তে বলেন।
আবু উমামা বলেন, আমি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ দোয়াটি পড়তে লাগলাম ফলে আল্লাহ তায়ালা আমার চিন্তা দূর করে দিলেন এবং আমার ঋণগুলোও আদায় করে দিলেন।
দোয়াটি হলো-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ
বাংলা উচ্চারণ:
আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘উযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিনাল-‘আজযি ওয়াল-কাসালি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিনাল-বুখলি ওয়াল-জুবনি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিন দ্বালা‘য়িদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজা-ল।
বাংলা অর্থ:
‘হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুঃশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে। – সহিহ বুখারি, হাদিস নং ২৮৯৩।
মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে ঋণমুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন।
আমিন।
লেখক : মুহাদ্দিস, খাদিমুল ইসলাম মাদ্রাসা, কামরাঙ্গীর চর, ঢাকা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।