জুমবাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক লিমিটেড, পাবনা শাখা থেকে ৪০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ৫৫ হাজার টাকা পরিশোধ করেছিলেন কৃষক মজনু প্রামাণিক, ৪০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ৪৫ হাজার টাকা পরিশোধ করেছেন মোছা. রহিমা বেগম নামের আরেক নারী কৃষক। এ রকমভাবে ঋণের টাকার চেয়ে বেশি টাকা পরিশোধ করার পরও গ্রেপ্তার হয়েছিলেন পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার ভাড়ইমারি গ্রামের সেই কৃষকরা।
সোমবার (৫ ডিসেম্বর) জেলে যাওয়া ১২ কৃষকসহ ঋণ খেলাপির দায়ে অভিযুক্তদের বাড়িতে গিয়ে তদন্ত কমিটির তদন্তকালে এসব তথ্য উঠে আসে। এদিন দুপুরে কৃষকদের বিরুদ্ধে ঋণসংক্রান্ত মামলা ও ঋণের কিস্তি নিয়ে জটিলতার বিষয়টি তদন্ত করতে বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংকের তিন সদস্যের একটি দল কৃষকদের বাড়িতে যান।
ব্যাংকের উপ-মহাব্যবস্থাপক (পরিদর্শন ও আইন) মো. আহসানুল গণির নেতৃত্বে কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন সহকারী মহাব্যবস্থাপক (প্রকল্প ও ঋণ) আবদুর রাজ্জাক ও সহকারী মহাব্যবস্থাপক (আইন) আমিনুল ইসলাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের পাবনা শাখার ব্যবস্থাপক কাজী জসিম উদ্দীন ও শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক ও মামলার বাদী সৈয়দ মোজাম্মেল হক।
এদিন বেলা ১২টার দিকে কমিটির সদস্যরা যখন কৃষকদের বাড়িতে গিয়ে পৌঁছান তখন তারা মাঠে কৃষি কাজে ব্যস্ত ছিলেন। তদন্ত কমিটির পৌঁছানোর খবরে এসে হাজির হোন কৃষকরা। এসময় তদন্ত কমিটির জিজ্ঞাসাবাদে নানা তথ্য বেরিয়ে আসে। তদন্ত দল কৃষকদের কাছে ঋণ পরিষদের তথ্য জানতে চান। কিন্তু কৃষকেরা ঋণ পরিশোধের তেমন কোনো কাগজ দেখাতে পারেননি। তবে তারা মুখে মুখে পরিশোধের হিসাব ও তারিখ জানান। কৃষকদের মনে রাখা তথ্য ব্যাংকের স্টেটমেন্টের সঙ্গে মিলে যায়। এ সময় কয়েকজন নিজেদের সামান্য বকেয়ার কথা শুনে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তারা তদন্ত দলের কাছে প্রশ্ন তোলেন, টাকা পরিশোধ করে কেন জেল খাটতে হলো? কৃষকদের এই প্রশ্নে তদন্ত দলের সদস্যরা চুপ হয়ে যান।
তদন্ত দলের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ঋণের দায়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়া ৩৭ কৃষকের মধ্যে আতিয়ার রহমান ৪০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে সুদসহ ৪৯ হাজার টাকা পরিশোধ করেছেন। তাঁর বকেয়া রয়েছে মাত্র ৪৩৩ টাকা। এরপরও তিনি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। মোছা. রহিমা বেগম নামের এক নারী ৪০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ৪৫ হাজার টাকা পরিশোধ করেছেন। তাঁর বকেয়া রয়েছে ৯০০ টাকা। মজনু প্রামাণিক নামের অপর একজন ৪০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ৫৫ হাজার টাকা পরিশোধ করেছেন।
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান মো. আহসানুল গণি বলেন, মূলত গ্রুপ ঋণের কারণেই সবার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এখানে ব্যাংকের কিছু করার ছিল না। তবে যাদের কম টাকা বকেয়া, তাদের বাদ দেওয়া যেত। এটা হয়তো ভুলবশত হয়েছে। পরবর্তীকালে বিষয়টি দেখা হবে। ১০ লাখ টাকা পরিশোধের পরও এত বকেয়া কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১৫ শতাংশ সুদ হারে ঋণ দেওয়া হয়েছিল। কিছু কৃষক টাকা পরিশোধ না করায় চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ বেড়ে গেছে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে ঈশ্বরদী উপজেলার ভাড়ইমারী গ্রামের ৪০ জন কৃষক ওই সমিতির নামে দলগত ঋণ হিসেবে ১৬ লাখ টাকা গ্রহণ করেন। এর মধ্যে কেউ ২৫ হাজার, কেউ ৪০ হাজার টাকা করে ঋণ পান। দীর্ঘদিনেও সেই ঋণ ও সুদের টাকা পরিশোধ না করায় ২০২১ সালে ৩৭ জন কৃষকের নামে মামলা করে ব্যাংকটি। সম্প্রতি আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে গত ২৫ নভেম্বর ১২ জন কৃষককে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠায় পুলিশ।
বিষয়টি গণমাধ্যমে আসার পর ব্যাপক আলোচনা, সমালোচনার সৃষ্টি হয়। পরে গত ২৭ নভেম্বর পাবনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ এর বিচারক (সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত-২ এর ভারপ্রাপ্ত বিচারক) মো. শামসুজ্জামান গ্রেপ্তার হওয়া ১২ জনসহ ৩৭ কৃষকের জামিন মঞ্জুর করেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।