ওজন কমানোর আগ্রহ সব সময় সবার মধ্যে থাকে। এটা একটা আলোচনার বিষয়ও। শারীরিক পরিশ্রম, ব্যায়াম ও জিমে ঘাম ঝরানোর প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে অনেক গুণ। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে ম্যারাথন, সাইক্লিং বা সাঁতারের মতো ইভেন্টে তরুণসহ নানা বয়সী মানুষের অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মতো।
সেই সঙ্গে পরিমিত ও সুষম খাদ্যাভ্যাসের চর্চা তো আছেই। নো কার্ব, কিটো ডায়েট, হাই প্রোটিন, মিলিটারি ডায়েট একেক সময় একেকভাবে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে মানুষের কাছে। এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সুপারফুড ও সাপ্লিমেন্টের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে মানুষের। অবশ্য ওজন কমিয়ে সুস্থ থাকাটাই বৈজ্ঞানিকভাবে সঠিক।
কিন্তু শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে গিয়ে অনেক সময় আমরা পেশি কমিয়ে ফেলি; এটা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য হয়ে ওঠে হিতে বিপরীত। তাই সঠিক নিয়মে শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমিয়ে কীভাবে মাসল মাস বা পেশির গঠন দৃঢ় করে ভালো থাকা যায়, সেটা জানা জরুরি। আমরা ওজন কমাতে গিয়ে ক্রাশ ডায়েট করে ফেলি; কিন্তু এই ডায়েট আপনার পেশির ক্ষয় করে। আপাতদৃষ্টে সামগ্রিক ওজন কমলেও পেশির যে পরিমাণ ক্ষয় হয় যা অত্যন্ত ক্ষতিকর।
আমরা মনে করি কার্বোহাইড্রেট বাদ দিলেই ওজন কমে; যদিও বিষয়টা আপেক্ষিক। ওজন কমানো ও মাসল টোনিংয়ের জন্য ‘হাই-ইন্টেনসিটি’ ব্যায়াম সবচেয়ে কার্যকর। এই শারীরিক কসরত করার সময় এনার্জি লেভেল বেশি থাকা দরকার আর সেই শক্তির জোগান দেয় কার্বোহাইড্রেট। তাই নো কার্ব ডায়েট একটি ভুল পন্থা বলেই বিশেষজ্ঞদের অভিমত।
প্রতিদিন একই রকমের শরীরচর্চা ওজন কমাতে খুব একটা কাজ করে না, বরং কার্ডিও ও স্ট্রেন্থ ট্রেনিংয়ের সমন্বয় সঠিক পেশি গঠনে সবচেয়ে কার্যকর এবং অবশ্যই দুদিন অন্তর বিশ্রামের দিন বা রেস্টিং ডে রাখা আবশ্যক। প্রতিদিন ব্যায়ামের কোনো প্রয়োজন নেই। কার্ডিও এক্সারসাইজে সবচেয়ে বেশি ক্যালরি বার্ন হয়।
সাইক্লিং, সাঁতার কিংবা দৌড়ে অনেক ক্যালরি ঝরে। ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারোলাইনার গবেষণায় দেখা গেছে, নারী ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে হাই–ইন্টেনসিটি ইন্টারভাল ট্রেনিং পেশি গঠনে সহায়তা করে। তাই কোর ট্রেনিং ভারোত্তোলন, প্ল্যাঙ্কের মতো ব্যায়াম এ ক্ষেত্রে দারুণ কার্যকর।
ব্যায়ামের ধারাবাহিকতায় প্রথমে অ্যাবস বা পেটের, এরপর আপার বডি বা দেহের উপরিভাগের, তারপর দেহের নিচের অংশের এবং সবশেষে কার্ডিও—এভাবে সমন্বিত ব্যায়াম করলে প্রত্যেক পেশিকে অন্তর্ভুক্ত করা যায় এবং আশাতীত ফল পাওয়া যায়। প্রতিদিন ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুম অবশ্যই প্রয়োজন।
কারণ, ঠিকমতো না ঘুমালে ভারী ব্যায়ামের পর পেশি বিশ্রাম পাবে না, ওজন কমাও বাধাগ্রস্ত হবে। আর না ঘুমালে স্ট্রেস হরমোন বেড়ে যায়, যা ওজন হ্রাসে বাধা দেয়। এতে করে আমাদের হজম বা মেটাবোলিজম ব্যাহত হয়, ফলে ওজন কমতে চায় না। ঘুমানোর ঘণ্টা তিনেক আগে কফি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ, কফিতে থাকা ক্যাফেইন ঘুমকে বাধাগ্রস্ত করে।
পেশি গঠনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে প্রোটিন বা আমিষ। তাই পেশির গঠনে খাদ্যতালিকায় বেশি করে প্রোটিন রাখা বাঞ্ছনীয়। সঠিক মাসল গঠনে প্রতি কিলোগ্রাম বডি ওয়েটের জন্য ৩.১ গ্রাম প্রোটিন খাওয়ায় উচিত। শুধু পেশি গঠন নয়, খাবার হজম প্রক্রিয়াকেও ত্বরান্বিত করে প্রোটিন গ্রহণ।
পেশি সুগঠিত রেখে চর্বি কমানোর উপকারিতা
১. আপনি আগের চেয়ে অনেক বেশি চাঙা অনুভব করবেন।
২. কর্মশক্তি বৃদ্ধি পাবে।
৩. বিপাক প্রক্রিয়া বাড়ে এবং টাইপ–টু ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগসহ বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারের ঝুঁকি কমবে।
৪. থাকা যাবে তারুণ্যদীপ্ত। অ্যান্টি–এজিংয়ের কারণে বয়সের আগে বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করে প্রাণবন্ত করে তুলবে।
পর্যাপ্ত পানি পান করা জরুরি, কারণ এর রয়েছে অ্যান্টি–এজিং এফেক্ট, ডিটক্সিফায়িং করার মাধ্যমে শরীরের ভেতরের দূষিত জলীয় অংশ বেরিয়ে যায়, যা পেশি গঠনে সহায়তা করে। এ ছাড়া ট্রান্সফ্যাট জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। সুস্থ থাকার জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত শরীরচর্চা এবং ইতিবাচক চিন্তার বিকল্প নেই; তাই সুস্থ থাকা আর ইতিবাচকতা ছড়িয়ে দিতে হবে সবার মধ্যে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।