জুমবাংলা ডেস্ক : বিশ্বের অর্ধেকের বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বাংলাদেশও। তবে রোগটি নির্ণয়ে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য কিট, শরীরের তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণে থার্মাল স্ব্যানারসহ অন্যান্য সরঞ্জামের অপ্রতুলতায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরীক্ষা করতে বেগ পেতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। এ অবস্থায় স্বাস্থ্য সরঞ্জামের জন্য চীনের সাহায্য চাইছে সরকার। দেশটি কাছে ১০ হাজার টেস্টিং (করোনা পরীক্ষার) কিট ও ১০ হাজার হ্যান্ড থার্মাল স্ক্যানার এবং পর্যাপ্ত সংখ্যক উন্নত সার্জিক্যাল মাস্কসহ অন্যান্য সরঞ্জাম চাওয়া হয়েছে। এজন্য ভাইরাসটি মোকাবেলায় আর্থিক দিক বিবেচনায় বহুজাতিক ঋণদানকারী সংস্থা বিশ্বব্যাংকের কাছে ১০ কোটি ডলার অনুদানও চেয়েছে বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ইআরডি বলছে, বলছেন, চীনেই প্রথম করোনাভাইরাসটি সংক্রমণ হলেও দেশটিতে ভাইরাসটি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। এ অবস্থায় দেশটি থেকে অভিজ্ঞতাও নিতে চাইছে বাংলাদেশ। তাছাড়া ইতালি, জার্মানিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কিট, স্ক্যানারসহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে সহযোগিতা করছে চীন। তাই গেল সোমবার চীনের কাছে করোনা পরীক্ষার কিট ও স্ক্যানার চাওয়া হয়। কীট ছাড়াও সংক্রমন প্রতিরোধী মাস্কসহ অন্যান্য সরঞ্চামও চাওয়া হয়েছে। কিট ও স্ক্যানারের সহযোগিতা চাওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে সাড়াও দিয়েছে দেশটি। একই দিন বিশ্বব্যাংকের কাছেও আনুষ্ঠানিক অর্থ সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, করোনা নিয়ে কাজ করা সরকারের রোগতত্ত, রোগনিয়ন্ত্রণ, ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) বলছে, সর্বশেষ হিসাবে এখন পর্যন্ত দশ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের নমুনা পাওয়া গেছে। নিজ নিজ বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে আছে কয়েক হাজার সন্দেহভাজন রোগী। এ অবস্থায় কোভিড-১৯ শনাক্ত করতে আইইডিসিআরের কাছে পর্যাপ্ত কিট ব্যবস্থা নেই। কিটের স্বল্পতায় মানুষের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আছে কি না তা পরীক্ষায় বেগ পোতে হচ্ছে। আইইডিসিআরের কাছে মাত্র এক হাজার ৭৩২ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য কিট রয়েছে। অথচ রোগটি সংক্রমণ নির্ণয়ে পর্যাপ্ত কিট থাকা জরুরি। এজন্য চীনের কাছে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ইআরডির এশিয়া উইংয়ের প্রধান ও সরাকরের যুগ্ম সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী বলেন, করোনাভাইরাস মোকাবেলয় এরই মধ্যে সাফল্য পেয়েছে চীন। তাই এদেশে রোগটি প্রতিরোধ ও মোকবেলায় চীনের কাছে কিট ও স্ক্যানার ও মাস্কও চেয়েছি। তারাও সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছে। দেশটি থেকে দ্রতই এসব সরঞ্চাম পাওয়ার আশাও করেন তিনি।
এদিকে নভেল করোনাভাইরাস মোকাবিলায় স্বাস্থ্য সরঞ্চামের পাশাপাশি বহুজাতিক ঋণদাকারী সংস্থা বিশ্বব্যাংকের কাছেও অর্থিক সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ। সংস্থাটির কাছে ১০ কোটি ডলার বা দেশি টাকায় প্রায় ৮৫০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে চলমান আইডিএ-১৮ প্যাকেজের আওতায় দশ কোটি ডলার সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
ইআরডির বিশ্বব্যাংক উইংয়ের প্রধান ও অতিরিক্ত সচিব মো. শাহাবুদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, বিশ্বব্যাংকের কাছে তহবিলের জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় থেকে ইআরডির কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ইআরডি সংস্থাটির কাছে চিঠি দিয়েছে, সহায়তা চেয়ে। এর পরিমাণ ১০ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮৫০ কোটি টাকা। এই অর্থ ঋণ না অনুদান হিসেবে দেয়া হবে তা এখনও ঠিক হয়নি। তবে বাংলাদেশে অনুদান হিসেবেই তা চাইছে। বিশ্বব্যাংক বিবেচনা করে অর্থায়নের ধরণ ঠিক করতে। তবে অনুদান না হয়ে ঋণ হলেও তা সহজ শর্তে ও নূন্যতম সুদেই হবে। সাধারণত বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ পেতে আট থেকে দশ মাস সময় লাগেহ। তবে এই টাকা পেতে বেশি সয়শ লাগবে না।
এর আগে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে সাহায্য চাওয়ার জন্য ইআরডির কাছে চিঠি দিয়েছিল স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়। চিঠিতে তারা জানায়, বিশ্বব্যাংকের তহবিল তিনটি ক্ষেত্রে ব্যবহার করবে তারা। এর মধ্যে রয়েছে কভিড-১৯ মোকাবেলায় রোগী বা সন্দেহজনক রোগীর ক্ষেত্রে নজরদারি বাড়ানো, রোগীর খোঁজ খবর ও পরীক্ষা-নিরিক্ষা এবং জরুরি বা তাৎক্ষনিক সেবার নিশ্চিতে সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। করোনায় আক্রান্ত বা সন্দেহজনক রোগীর ক্ষেত্রে কার্যকর ক্লিনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট নিশ্চিতে স্বাস্থ্য সেবা বৃদ্ধি করা। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঝুঁকি মোকাবেলায় জরুরি স্বাস্থ্যসেবার পরিধি বাড়ানো ও শক্তিশালী করা।
বিশ্বব্যাংকের কাছে পাঠানো চিঠিতে ইআরডি থেকে বলা হয়েছে, প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। এরইমধ্যে বাংলাদেশে বেশ কয়েকজনের শরীরে করোনাভাইরাসের নমুনা শনাক্ত হয়েছে। অনেকে কোয়ারেন্টেনে আছে। করোনাভাইরাসটি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমন অবস্থায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য রোগী শনাক্তকরণের পাশাপাশি সারা দেশে কর্মী পাঠানোর সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি।
এর আগে করোনার প্রকোভ বাড়তে থাকায় গত ৩ মার্চ বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের স্বাস্থ্যগত ও অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবেলায় সদস্য দেশগুলোর জন্য প্রাথমিকভাবে ১২ বিলিয়ন (১ হাজার ২০০ কোটি) ডলার সহযোগিতার ঘোষণা দেয় বিশ্বব্যাংক গ্রপ। আইডিএ, আইবিআরডি ও আইএফসির যৌথ যোগানের এই তহবিল কোভিড-১৯ (নভেল করোনাভাইরাস) মোকাবেলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা করবে। তবে, তহবিল থেকেই অর্থ এখনো চায়নি বাংলাদেশ। আলাদা আবেদনের মাধ্যমে বাংলাদেশও সেই তহবিল থেকে টাকা পেতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।