সানজানা চৌধুরী : করোনাভাইরাস মহামারির পর দীর্ঘ সময় ধরে স্থবির অবস্থায় ছিল বাংলাদেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলো। কিন্তু এই কোরবানির ঈদে টানা কয়েকদিনের ছুটিতে বড় ধরনের জন সমাগম দেখা গেছে বেশ কয়েকটি স্পটে।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা এই মানুষদের যেমন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোন প্রবণতা নেই। আবার স্বাস্থ্যবিধি নজরদারি করার মতো নেই কোন ব্যবস্থা।
সরকারিভাবে হোটেল মোটেল চালু হওয়ার আগেই পর্যটকদের এমন ভিড় দেখে স্থানীয়রা আতঙ্কে আছেন যেকোনো মুহূর্তে ভাইরাসের হটস্পটে পরিণত হতে পারে তাদের আবাসস্থল।
মার্চের মাঝামাঝি সময় ধরেই বন্ধ রয়েছে কক্সবাজারের বিভিন্ন হোটেল, রেস্তোরাঁ ও দোকানপাট।
সরকারি নির্দেশনায় বড় বড় হোটেল/ রিসোর্ট সব বন্ধ থাকা সত্ত্বেও সৈকতে দেখা গেছে অসংখ্য মানুষের ভিড়। এতে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আতঙ্কে আছেন স্থানীয় বাসিন্দা ইশরাত জাহান।
তিনি বলেন, “জুলাইয়ের শুরুতে লকডাউন শিথিল হওয়ার পর থেকে পর্যটকরা অল্প স্বল্প আসছে, কিন্তু এই ঈদের পর বিশেষ করে শুক্রবারগুলোয় এতো ভিড় হয় ভাবা যায় না। আমি ঘর থেকেই বের হই না। হোটেল খোলার আগেই যদি এতো মানুষ হয়, খুলে দিলে না জানি কি অবস্থা হবে।”
এদিকে যারা এই সময়ে ঘুরতে বেড়িয়েছেন তারাও ভাবেননি প্রাদুর্ভাবের এই সময়ে এতো মানুষের ভিড় থাকবে।
ছুটি পেয়ে কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে চট্টগ্রামের একটি ঝর্ণা দেখতে বেরিয়েছিলেন নিশি আক্তার।
যাওয়ার পথে পর্যটকবাহী পরিবহন থেকে শুরু করে পর্যটন এলাকায় তিনি কাউকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে দেখেননি।
বিষয়টি নজরদারি করার মতো কোন ব্যবস্থাও চোখে পড়েনি তার। অবশ্য এ নিয়ে তিনি নিজেও খুব চিন্তিত নন।
মিস আক্তার বলেন, “বাসের ড্রাইভার হেল্পার ইচ্ছামত লোক তুলেছে, লোকাল বাসের মতো। কোন স্বাস্থ্যবিধি নাই। স্পটে গিয়েও দেখলাম এতো মানুষের ভিড়। চিন্তাও করিনি। এখন আমিও মাইন্ড রিফ্রেশ করতে এসেছি। অন্যরাও এসেছে। এতো চিন্তা করলে আসলে এনজয় করতে পারবো না।”
স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটন স্পটগুলো কিভাবে চলবে সে বিষয়ে একটি লিখিত পরিচালনা পদ্ধতি বা এসওপি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর) সামনের সপ্তাহের মধ্যে প্রতিটি পরিবহন, হোটেল, মার্কেট, রেস্তোরাঁয় পৌঁছে দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মহিবুল হক।
পুরো বিষয়টি নজরদারির জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ধারণা দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
তবে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপের পরিবর্তে মানুষকে সচেতন করে তোলার ওপরই জোর দিয়েছেন মি. হক।
তিনি বলেন, “যিনি বিনোদন কেন্দ্র পরিচালনা করছেন এবং যারা যাচ্ছেন, স্বাস্থ্যবিধি রক্ষার বিষয়ে সবারই কিছু দায়িত্ব-কর্তব্য আছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া আছে। শুধু গায়ের জোরে সব হবে না। মানুষকে আগে সচেতন হতে হবে।”
তবে সরকারি এই নির্দেশনা এতো শেষ সময়ে না দিয়ে আরও আগে দেয়া প্রয়োজন ছিল বলে জানিয়েছেন এই খাত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
সামনের সপ্তাহের মধ্যে সরকারিভাবে পর্যটন স্পটগুলো খুলে দেয়ার কথা থাকলেও সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত নির্দেশনা আসেনি।
এমন অবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার মতো ব্যবস্থাপনা তৈরি করা কঠিন হবে বলে দুশ্চিন্তায় আছেন ব্যবসায়ীরা।
ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ টোয়াবের পরিচালক শাহেদ উল্লাহ জানান, স্বাস্থ্যবিধিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে যেন পর্যটন স্পটগুলো চালু করা হয়, তারা সেটাই চান।
তবে পর্যটকরা আবার পর্যটন এলাকাগুলোয় ভিড় করতে শুরু করায় এই খাতে আগের মতোই প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসবে বলে আশা করছেন এই খাত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। সূত্র : বিবিসি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।