নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার জামালপুর রাজ মহন উচ্চ বিদ্যালয়ের (আরএম বিদ্যাপীঠ) প্রধান শিক্ষক মো. ফাইজ উদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
আজ (১৮ আগস্ট) সকাল থেকে জামালপুর আরএম বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণে প্রায় সাড়ে চার ঘন্টা সময় ধরে এ বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষককের কক্ষে তালা দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে এবং বিদ্যালয়ের দরজা-জানালা ভাঙচুরের চেষ্টা চালায়।
আরএম বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীরা বলেন, বিদ্যালয়ে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, শিক্ষকদের রাজনীতি, অব্যবস্থাপনা দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়টি নিমজ্জিত ছিল।
তারা বলেন, প্রধান শিক্ষক একটি দলের বিশেষ ব্যক্তির অনুসারী হিসেবে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির পক্ষে অনৈতিক ভূমিকা রেখেছেন এবং ওই ম্যানেজিং কমিটিকে দিয়ে তিনি অনেক অনৈতিক কাজ করেছেন। কিন্তু বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোন প্রতিবাদ করলেই তাদেরকে বিভিন্নভাবে হয়রানি ও টিসি দিয়ে বিদ্যালয়ে থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দিতেন। আমরা আজ শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করছিলাম। এ সময় আমাদেরকে বিদ্যালয়ের ভেতরে তালাবব্ধ করে রাখে এবং স্থানীয় প্রভাবশালীদের দিয়ে হুমকি-দামকি প্রদর্শন করে। পরে বিষয়টি স্থানীয় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের কানে গেলে তারা হস্থক্ষেপ করেন। সব শেষে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে প্রধান শিক্ষক স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা আজ (রোববার) সকাল থেকে উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ে পরিদর্শন করার কথা ছিল। আর সেটা আমাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি ম্যাসেঞ্জার গ্রæপে তা স্থানীয় শিক্ষার্থীদের অবগত করি। আর এটা জানতে পেরে সকাল থেকে আরএম বিদ্যাপীঠের শিক্ষাথীরা আন্দোলনে নামে। পরে আমরা খবর পেয়ে সেখানে দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করি। বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন স্বপনকে নিয়ে বসি। সর্বশেষ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ফাইজ উদ্দিন বলেন, যারা বিক্ষোভ করেছে তারা সবাই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী না। তারা আমাকে আমার রুমে অবরুদ্ধ করে বিদ্যালয়ে ভাংচুর চালায়। তবে আমার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ দিতে পারেনি। আমি বার বার বলেছি আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে দিতে। তারা অভিযোগের সত্যতা পেলে আমি পদত্যাগ করবো। কিন্তু তারা আমার কোন কথাই শুনেনি। বহিরাগত কিছু লোকজন লুটপাট করতে পারেনা বলে আমাকে জোর করে পদত্যাগ পত্রে স্বাক্ষর করিয়ে পদত্যাগ করায়। তারা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কদের এ কাজে ব্যবহার করেন।
এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস.এম ইমাম রাজী টুলু বলেন, রবিবার সকালে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ আমার কাছে এসেছিল। তারা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনেকগুলো অভিযোগ মৌখিকভাবে উত্থাপন করেছেন। আমি তাদের শান্ত হওয়ার পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে আগামীকাল (সোমবার) আসতে বলেছিলাম। কিন্তু আমার এখান থেকে গিয়ে তারা প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আমি যতদূর জানি ওই প্রধান শিক্ষাক পদত্যাগ করেছেন।
বিক্ষোভের খবর পেয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আমজাদ হোসেন ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে প্রধান শিক্ষক মো. ফাইজ উদ্দিন পদত্যাগ করেছেন। পরে প্রধান শিক্ষককে নিরাপদে বিদ্যালয় থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।