জুমবাংলা ডেস্ক : আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এক হাত নিলেন যুবলীগের চেয়ারম্যান! তিনি এসব অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসায় তার সংগঠনের লোকজন এর সাথে সাথে আর কারা কারা জড়িত, সেই নিয়েও খুব উচ্চকণ্ঠ!
যেসব এলাকায় ক্যাসিনো আছে, সেসব এলাকার থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশ করে তার এই বক্তব্য যৌক্তিক। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দিকে পাল্টা দোষ চাপিয়ে দিয়ে মূল হোতাদের দোষ ঢাকার চেষ্টা যেন না হয়, সেদিকেও লক্ষ্য রাখা জরুরি|
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ না পেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আসলে কি করতে পারতো আর কী করতে পারতো না? বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আসলে কতটা স্বাধীন? উন্নত বিশ্বের মতো, আমাদের বা আশে পাশের দেশগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খুব কি স্বাধীন স্বত্বা?
আমাদের পুলিশ বাহিনীর যে কাঠামো সেটার ব্যাকগ্রাউন্ড কিন্তু উপনিবেশিক পুলিশী চরিত্র, সেখানটায় আটকে আছি আমরা! সরকারের নানা পর্যায়ের এমনকি আমলাতন্ত্রের অনেক কিছুতে কাঠামোগত পরিবর্তন আসলেও পুলিশ বাহিনীর কাঠামোগত কোনো চারিত্রিক পরিবর্তন ঘটেনি, বা বিভিন্ন সরকারের আমলে কখনোই ঘটতে দেয়া হয়নি।
ব্রিটিশ পিরিয়ডের, সম্ভবত ১৮৬১ সালের আইন দ্বারা পরিচালিত এই পুলিশ বাহিনীর রূপ পরিবর্তনের কথা পাকিস্তান পিরিয়ড পেরিয়ে বাংলাদেশ আমলের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দাঁড়িয়েও আমরা ভাবতে পারছিনা। এখন আমাদের দেশের যে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীল অবস্থা , তাতে পুলিশবাহিনীর কাঠামোগত কিছু পরিবর্তন আমরা আশা করতেই পারি, যেখানে আমরা একটি আধুনিক পুলিশ ফোর্স পাবো, যারা সাধারণের কথা ভাববে, সাধারণের জন্য কাজ করবে, সেবা দেবে নিরপেক্ষভাবে|
অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতাধরদের ঢাল হিসেবে নয়, সাধারণের পক্ষে কাজ করবে, এমন একটি ক্ষমতাশীল ও স্বাধীন ফোর্স হলেই সম্ভব এই ধরণের ক্ষমতাধর ব্যবসায়ীদের অবৈধ ব্যবসার স্বরূপ উন্মোচন করা। যতদিন পর্যন্ত পুলিশকে একটি পেশাদার বাহিনী হিসেবে স্বাধীনতা দিয়ে কাজ করতে না দেয়া যাবে, ততদিন পর্যন্ত এই ধরণের অসাধু রাজনৈতিক চেতনাধারী মানুষজন পুলিশের নাকের ডগায় বসে অবৈধ ব্যবসা করেই যাবে! এসব দুর্নীতি- চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হলে, প্রথমে পুলিশ বাহিনীকে সংস্কার করতে হবে|
এখন ১৮৬১ সালের আইন এর সংস্কার দরকার। যেমন একটি হতে পারে যেটা বিদেশেও আছে, পুলিশের ভেতরে ‘ইন্টারনাল এফেয়ার্স’ বলে একটা ডিভিশন থাকে, যেখানে পুলিশ বাহিনীর ভেতরের অনৈতিক কার্যকলাপ, ঘুষ-দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, ইত্যাদি কর্মকান্ডের বিচার হবে কোনোরকম রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বা হস্তক্ষেপ ছাড়া একেবারেই প্রফেশনাল লেভেলে। এসব কেবল মাত্র আমরা তখনই আশা করতে পারি যখন একটি স্বাধীন প্রফেশনাল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গঠন করার ভাবনা সরকার করতে পারবে। তাতে পুলিশ ফোর্স অন্তত রাজনৈতিক ক্ষমতাশীল অসৎ নেতাদের দ্বারা পরিচালিত কম হয়ে বরং তারা তাদের নিজস্ব গতিতে/ সিদ্ধান্তে কাজ করতে সক্ষম হবে।
ধরা যাক, আজকে যদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ না দিতেন, এই অবৈধ ব্যবসা বন্ধ করতে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সৎ ও দেশ প্রেমিক অফিসার তার বাহিনী নিয়ে যেতো এই রকম অভিযানে, কাল তার চাকুরী চলে যাওয়া, বদলি (এমনকি জীবনও হুমকির মাঝে পড়ে যেতো হয়তো) ইত্যাদি নানা হেনস্থার শিকার হতে হতো। তবে আজকের পরে আমরা আশা করতেই পারি যে, যে যত বড় নেতাই হউক, দুর্নীতিবাজ-অবৈধ ব্যবসায়ী হলে তাকে আইনের আওতায় আনতে পুলিশ বাহিনীর আর বেশি বেগ পোহাতে হবেনা ।
এটা খুব স্পষ্ট যে, প্রধানমন্ত্রী এসবের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স দেখবেন। এবার পুলিশের ভেতরের অফিসারদের মাঝে দায়িত্ব বোধ, লোভ লালসা, ঘুষ দুর্নীতি পরায়ণতা না থাকলে নির্বিগ্নে ক্ষমতাশীলদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবেন বলে আশা করা যায়। আরেকটি কথা, এতদিন আমরা শুনতাম, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে ব্যবসা করে এক দল অসাধু ব্যবসায়ী, আজকে জানতে পারলাম, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে অবৈধ ব্যবসাও করে, ক্যাসিনোতে পাওয়া চিপস এর উল্টোদিকে মুক্তিযোদ্ধা ক্লাবের এর নাম? কোথায় যাচ্ছে সমাজের মূল্যবোধ?
যুব সমাজকে ধ্বংসের শেষদিকে নিয়ে যাচ্ছিল এসব| সমাজে কিছু লোক রাজনৈতিক ছত্র ছায়ায় থেকে টর্চার সেলে মানুষ মেরে, দেশের ভেতরে দুর্নীতির চেইন অফ কমান্ড তৈরী করে বিদেশে টাকা পাচার করে আর প্রতি রাতে লক্ষ/কোটি টাকা ক্যাসিনোতে উড়ায় যেখানে এই দেশের সাধারণ মানুষ কত কষ্ট করে দিনের পর দিন কাটায়! যারা সন্দেহ প্রকাশ করছেন, এটা কেবলই একটি আই ওয়াশ, তাদের সন্দেহ যেন দূর হয়, দেশের সাধারণ মানুষের টাকা লুট করে খাওয়ার দিন যেন শেষ হয়, এটাই একমাত্র প্রত্যাশা!
ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ভালোবাসা ও দোয়া রইলো আপনার এই পদক্ষেপের জন্য! আপনার পাশে আছে বাংলার সাধারণ জনগণ, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও মাদকের বিরুদ্ধে যে জিরো টলারেন্স নীতি আপনি ঘোষণা করেছেন, তার শুরু দেখছি, নিশ্চয়ই শেষটাও দেখবো ইনশাল্লাহ| এখনো স্বপ্ন দেখুক কোটি মানুষ উঠে দাঁড়াবার, আরো একবার! ফেসবুক স্ট্যাটাস
লেখক: রাশেদা রওনক খান
সহকারী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।