জুমবাংলা ডেস্ক : ঢাকা শহরের অলিতে-গলিতে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র। কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়াই এসব মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে দেওয়া হচ্ছে মানসিক চিকিৎসাও। এই চিকিৎসা নিয়ে চরম নৈরাজ্য চলছে। এসব নিরাময় কেন্দ্রে টাকার বিনিময়ে যে কাউকে মানসিক রোগী বানিয়ে ফেলা যায়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের অনুমোদন দেন আমাদের মহাপরিচালক। কিন্তু মানসিক চিকিৎসা দিতে গেলে সেটার অনুমোদন নিতে হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে। ঢাকা শহরে অর্ধশতাধিক মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের অনুমোদন আমরা দিয়েছি। সারা দেশে অনুমোদন দেওয়া প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা শতাধিক। আইন অনুযায়ী প্রতি মাসে দুই বার সরেজমিনে গিয়ে পরীক্ষা করে দেখার কথা, কিন্তু জনবলের সীমাবদ্ধতার কারণে সব সময় এটা পরীক্ষা করা সম্ভব হয় না। পাশাপাশি অনুমোদন না নিয়ে যারা এসব নিরাময় কেন্দ্র খুলেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্বও অধিদপ্তরের। কিন্তু আমরা সব সময় এই কাজগুলো করতে পারছি না। তাই অনেকেই সুযোগ নিয়ে যা ইচ্ছে তাই করছে। তবে অধিদপ্তর মাঝেমধ্যেই অভিযান চালায়।’
কয়েক বছর আগে সিলেটে তালাক দেওয়া লন্ডনি স্ত্রী ও তার ছেলের ষড়যন্ত্রে ‘মানসিক রোগী’ হিসেবে দীর্ঘ এক মাস ধরে আটক ছিলেন সুস্থ-স্বাভাবিক আব্দুল মালিক। ৬০ বছরের অসহায় বৃদ্ধ মালিককে পরে উদ্ধার করে তার স্বজনেরা। উদ্ধারের পর মালিক বলেন, তার আগের স্ত্রী ও ছেলে তার সম্পদ দখল করে আত্মসাত্ করতেই তাকে মানসিক রোগী বানিয়ে আটকে রেখেছিল। জোর করে তাকে শাহজালাল মানসিক স্বাস্থ্য ও গবেষণা কেন্দ্রে ভর্তি করে। বিপুল পরিমাণ টাকা নিয়ে এই প্রতিষ্ঠান তাকে মানসিক রোগীর সার্টিফিকেটও দিয়েছিল। অথচ তিনি পুরোপুরি সুস্থ মানুষ। তবে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, মালিক মানসিক রোগী। পরে মালিক ঐ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করলেও এখন পর্যন্ত সেটির আর সুরাহা হয়নি।
সারা দেশেই এমন নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে। অনুমোদন না থাকলেও পুলিশ ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই তারা এই অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। জানা যায়, অবৈধভাবে গজিয়ে ওঠা নিরাময় কেন্দ্রের সংখ্যা দেড় হাজারেরও বেশি। এসব নিরাময় কেন্দ্র থেকে চিকিৎসাসেবা নিয়ে সুস্থ জীবনে ফিরে এসেছে এমন নজির কম। কেউ কেউ চিকিৎসা নিয়ে কিছুদিন ভালো থাকলেও আবারও তাকে মাদকেই ফিরে যেতে দেখা যায়। অথচ চিকিত্সার নামে অভিনব কৌশলে চক্রটি হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এসব নিরাময় কেন্দ্রে চিকিত্সার নামে মাদকাসক্তদের ওপর চলে অমানবিক নির্যাতন। অন্ধকার, স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ, জেলখানার মতো ছোট ছোট রুমে মাদকাসক্তদের তালাবন্দি রেখেই চলছে তথাকথিত নিরাময় কেন্দ্রের চিকিৎসা।
বছর দুয়েক আগে একজন যুগ্ম সচিবকে মনোরোগ চিকিত্সার নামে জোর করে একটি ক্লিনিকে আটকে রাখার অভিযোগ উঠে তার স্ত্রী ও মেয়ের বিরুদ্ধে। পরে এক ভিডিও বার্তায় ফসিহ উদ্দিন নিজেই অভিযোগ করেছেন, মনোরোগ চিকিত্সার নামে তার স্ত্রী ও মেয়ে রাজধানীর মিরপুরের ঢাকা মনোরোগ ক্লিনিকে তাকে আটকে রেখেছে। আর এ কাজে সহায়তা করেছেন ঐ ক্লিনিকের চিকিৎসকরা। ১২ মিনিট ৪২ সেকেন্ডের ঐ ভিডিওটি দেশ জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেন তার স্ত্রী বাসবী মাকসুদ ও মেয়ে মহুয়া । তাদের দাবি, ২২ বছর আগে ফসিহ উদ্দিন মনোরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এ কারণে তাকে ধারাবাহিকভাবে চিকিত্সা নিতে হচ্ছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ফসিহ উদ্দিন বলেছিলেন, তার একমাত্র মেয়ে মহুয়া পছন্দ করেন তার প্রতিষ্ঠানের একজন চার্টার্ড অ্যাকাউনটেন্টকে। কিন্তু ছেলের পরিবার জামায়াত মতাদর্শী হওয়ায় মেয়ের পছন্দে দ্বিমত পোষণ করেন তিনি। তবে তার স্ত্রী মেয়ের পছন্দের সঙ্গে একমত। তিনি তার মেয়েকে পছন্দের ছেলের সঙ্গেই বিয়ে দিতে চান। এ নিয়ে দ্বন্দ্ব থেকে তাকে মানসিক রোগী বানানো হয়েছে। স্ত্রীর এতটা ‘ক্ষমতার উৎস’ প্রসঙ্গে ফসিহ উদ্দিন বলেন, আমার সব সম্পত্তি তার নামে রয়েছে। এই কারণেই তিনি এতটা বেপরোয়া।
কিছুদিন আগে রাজধানীর উত্তরায় রি-লাইফ মাদকাসক্ত নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে আনোয়ার আজিম (৩০) নামের এক যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গোসলখানা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশ উদ্ধারের পর পুলিশি তদন্তে জানা যায়, অমানবিক নির্যাতনের কারণে আনোয়ার আজিম আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন।
সর্বশেষ আদাবরের মাইন্ড এইড মাইন্ড কেয়ার ইনস্টিটিউটে পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যুর পর এই প্রতিষ্ঠানগুলো আলোচনায় আসে। এটি মূলত মাদকসক্তি নিরাময় কেন্দ্র। কিন্তু এটিকে হাসপাতাল বলে চালাত কর্তৃপক্ষ। গত দুই বছর থেকেই চলছিল এর কার্যক্রম। কিন্তু কোনো অনুমোদন ছিল না। তবে গত ফেব্রুয়ারিতে তারা মানসিক হাসপাতালের আবেদন করলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নাকোচ করে। আসলে এটি ছিল মূলত একটি টর্চার সেল। মানসিক রোগীদের চিকিৎসার আড়ালে হাসপাতালের দুটি কক্ষে নিয়ে চলত মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন। বিষয়টি আশপাশের লোকজনদের অজানা ছিল। কারণ ঐ দুটি কক্ষে কাউকেই প্রবেশ করতে দেওয়া হতো না। আর রুমগুলো সাউন্ডপ্রুফ। হাসপাতালটির মোট ৪৩টি কক্ষ। এর মধ্যে দুটি কক্ষ ছিল সাউন্ডপ্রুফ (শব্দনিয়ন্ত্রক)। মাত্র একটি দরজা ছিল। তবে কোনো জানালা ছিল না। বাতাস চলাচলেরও কোনো ব্যবস্থা নেই। সূত্র : ইত্তেফাক।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।