ধর্ম ডেস্ক : ধর্মপ্রান মুসলমানদের দোরগোড়ায় আবারো কড়া নাড়তে চলেছে পবিত্র মাহেরমজান। ঘনোঘটা করে পশ্চিমের আকাশে রমজানের চাঁদ উদিত হলেই আরম্ভ হবে মুসলিমদের মহিমান্বিত অপেক্ষার মাস। প্রত্যেক মুসলিম নারী-পুরুষের উপর রোজা রাখা ফরজ। রোজা শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘বিরত থাকা’। আর আরবিতে এর নাম সাওম, বহুবচনে সিয়াম। যার শাব্দিক অর্থ হচ্ছে কোনো কাজ থেকে বিরত থাকা। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার,কামাচার, পাপাচার এবং সেই সাথে যাবতীয় ভোগ-বিলাস ও অপ্রয়োজনীয় কাজ থেকে বিরত থাকার নাম রোজা।
রজব মাস আসলেই প্রিয় নবি রমজানের প্রস্তুতি নিতেন। রোজা রাখতেন, নামাজ পড়তেন, বেশি বেশি এ দোয়া করতেন-
اَللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِىْ رَجَبَ وَ شَعْبَانَ وَ بَلِّغْنَا رَمَضَانَ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রাজাবা ওয়া শাবানা ওয়া বাল্লিগনা রামাদান।’
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি আমাদের রজব ও শাবান মাসের বরকত দান করুন এবং আমাদেরকে রমজানে পৌঁছে দিন।
আবার রজব মাস শেষ হলে তিনি শাবান মাসেই ইবাদত-বন্দেগি বাড়িয়ে দিতেন আর বলতেন-
اَللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِىْ شَعْبَانَ وَ بَلِّغْنَا رَمَضَانَ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি শাবানা ওয়া বাল্লিগনা রামাদান।’
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি আমাদের শাবান মাসের বরকত দান করুন এবং আমাদেরকে রমজানে পৌঁছে দিন।
এছাড়াও রমজানের প্রস্তুতিতে রয়েছে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
মহান আল্লাহ বলেন- “তোমাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি এ মাস পাবে, সে যেন অবশ্যই রোজা রাখে। -সূরা বাকারা-১৮৫।
হাদিস শরীফে এসেছে, রজব মাস এলে নবীজি (সা.) আল্লাহর দরবারে দোয়া করে বলতেন, হে আল্লাহ, আমাদের রজব ও শাবান মাসে বরকত দান করুন আর রমজান মাস পর্যন্ত আমাদের জীবন দান করুন।’ -বায়হাকি, শুআবুল ইমান ৩৭৫। কুরআনুল কারিম ও সহীহ হাদীসে এ মাসের অনেক ফজিলত ও গুরুত্ব বর্ণিত হয়েছে। এই মাসের যথাযোগ্য মর্যাদা দান ও এর থেকে পূর্ণাঙ্গ ফায়দা অর্জনের জন্য চাই যথেষ্ট পূর্বপ্রস্তুতি। রাসূলুল্লাহ (সা.) রজব মাসের শুরু থেকেই রমজানের জন্য নিজে প্রস্তুতি নিতেন এবং সাহাবাদেরও প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিতেন।
মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণ:
রমজান মাসের প্রস্তুতিস্বরূপ শাবান মাস থেকেই নফল রোজা রাখা। হাদিসে বর্ণিত আছে, হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুল (সা.)কে রমজান মাসের রোজা ছাড়া অন্য কোনো মাসের রোজা এত অধিক গুরুত্বসহকারে পালন করতে দেখিনি এবং শাবান মাস ছাড়া অন্য কোনো মাসে অধিক পরিমাণে রোজা পালন করতে দেখিনি।’- বুখারি : ১৮৬৮; মুসলিম :১১৫৬।
কুরআনুল কারিম ও সহীহ হাদীসে এ মাসের অনেক ফজিলত ও গুরুত্ব বর্ণিত হয়েছে। এই মাসের যথাযোগ্য মর্যাদা দান ও এর থেকে পূর্ণাঙ্গ ফায়দা অর্জনের জন্য চাই যথেষ্ট পূর্বপ্রস্তুতি। রাসূলুল্লাহ (সা.) রজব মাসের শুরু থেকেই রমজানের জন্য নিজে প্রস্তুতি নিতেন এবং সাহাবাদেরও প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিতেন।
পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পূর্বের সুন্নত নামাজ যেমন ফরজ নামাজ আদায়ের জন্য প্রস্তুতিস্বরূপ, মনকে নামাজের জন্য প্রস্তুত করে এবং উৎসাহিত করে, তেমনি শাবান মাসের রোজা রমজান মাসের রোজা পালনে মন ও শরীরকে প্রস্তুত করে এবং উৎসাহিত করে।
বেশি বেশি দোয়া করা:
মুসলিম বান্দা তার রবের কাছে বেশি বেশি দোয়া করবে যাতে তিনি তাকে রমজান মাস পাওয়ার তাওফিক দান করেন, ইসলামের ওপর প্রতিষ্ঠিত রাখেন এবং শারীরিকভাবে সুস্থ রাখেন, সর্বদা যেন তার আনুগত্য করার এবং তার হুকুম মতো আমল করার তাওফিক দান করেন।
রমজানের আগমনে আনন্দিত হওয়া:
রমজান মাস মুসলিম উম্মাহর প্রতি আল্লাহ তায়ালার নিয়ামতগুলোর অন্যতম একটি। কারণ এ মাসে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়। রমজান মাস হলো কুরআনের মাস। এ মাসে পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে। তাই এ মাসের আগমনে মনে খুশি ও আনন্দ অনুভব করা।
ওয়াজিব রোজার কাজা আদায় করা:
বিগত রমজানে অসুস্থতা বা সফরের কারণে কোনো রোজা কাজা হয়ে থাকলে, সেসব রোজা আদায় করে নিজেকে মুক্ত করে ফেলা।
বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা:
হযরত সালামাহ ইবনে কুহাইল (রা.) বলেন, শাবান মাসকে কারীদের মাস বলা হতো। হযরত আমর ইবনে কাইস (রা.) শাবান মাস শুরু হলে তার দোকান বন্ধ করে কুরআন তিলাওয়াতের জন্য অবসর গ্রহণ করতেন। তাই রমজান মাসে বেশি বেশি কুরআন পাঠের প্রস্তুতিস্বরূপ এখন থেকেই কুরআন তেলাওয়াত করার অভ্যাস করা।
এখন থেকে নিয়ত বা সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, আল্লাহ যদি সুস্থ রাখেন এবারের রমজানের সকল রোজা পরিপূর্ণভাবে রাখবো। রমজানের রোজা পালনে কোনরূপ অলসতা করব না। পূর্ণ আন্তরিকতা ও যাবতীয় শর্তাবলী মেনে চলেই সকল রোজা পালন করব। রমজানের জন্য দিনক্ষণ গণনা করা
রমজানের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে রমজানের জন্য শাবান মাসের তারিখের হিসাব রাখা এবং দিনক্ষণ গণনা করাও রমজানপূর্ব একটি সুন্নাত আমল। প্রকৃত অর্থে এটা রমজানের জন্য বিভোর প্রতীক্ষার একটি নিদর্শনও বটে; মানবীয় স্বভাবও অধিক প্রত্যাশিত বস্তুর জন্য দিন গোনার ব্যাপারে সায় দেয়। রমজানের আগমনের জন্য মহানবী (স.) দিনক্ষণ গণনা করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল শাবান মাসের (দিন-তারিখের হিসাবের) প্রতি এত অধিক লক্ষ রাখতেন, যা অন্য মাসের ক্ষেত্রে রাখতেন না। (আবু দাউদ, হাদিস ২৩২৫)।
রমজানের পূর্বের দিনগুলোতে রোজা না-রাখা:
রাসুলের (স.) জীবন থেকে বোঝা যায়, রমজানে দীর্ঘদিন রোজা রাখার দৈহিক ও মানসিক প্রস্তুতির জন্য শাবান মাসে অধিক হারে রোজা পালন করা সুন্নত। তবে তা পুরো শাবান মাসে নয়। বরং রাসুল (স.) রমজানের ঠিক পূর্বেকার দিনগুলোতে রোজা রাখতেন না; এ সময় তিনি রমজানের প্রস্তুতিকল্পে শরীর গঠনে মনোযোগ দিতেন।
আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে :
রাসুল (স.) কখনও কখনও এমনভাবে রোজা পালন করতেন যে আমাদের মনে হতো, তিনি রোজা ত্যাগ করবেন না। আর কখনও এত দীর্ঘ সময় রোজা ত্যাগ করতেন যে, আমাদের মনে হতো তিনি আর রোজা পালন করবেন না। (বুখারি, হাদিস ১৯৬৯)
রাসুলের (স.) এই রোজা ত্যাগ করার বিষয়টি অন্য হাদিস থেকে এসেছে, আয়েশা (রা.) বলেন, শাবানের তুলনায় অন্য কোনও মাসে আমি তাকে এত অধিক হারে রোজা পালন করতে দেখিনি। তিনি শাবানের প্রায় পুরোটাই রোজায় অতিবাহিত করতেন, তবে (রমজানের প্রস্তুতির জন্য) কিছু দিন বাদ রাখতেন। (মুসলিম, হাদিস ১১৫৬)
সুতরাং, ধর্মপ্রাণ মুসলমান মাত্ররই কর্তব্য, শাবান মাসের শেষের দিকে রোজা না রেখে রোজার প্রস্তুতি গ্রহণ করা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।