জুমবাংলা ডেস্ক : গভীর রাতে ফোন আসে গৃহবধুর কাছে। ফোন ধরতেই ‘বাবা’ সম্বোধন করে জেগে ওঠার অনুরোধ করে। এর পর কথার ফুলঝুরিতে কাবু করে গৃহবধুকে। কথা না মানলে ‘একমাত্র ছেলের নাকমূখ দিয়ে রক্ত ঝরবে’ এ কথা শোনার পর কাউকে কিছু না বলে সোজা বাইরে। এর পর সকালে নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে পেয়ে যান স্বর্ণের মতো পিতলের পিণ্ড। আর তা নিজের কাছে আগলে রেখে কথিত ‘জিনের বাদশা’র ফাঁদে পড়ে কাউকে না জানাতে কোরআন শপথও করে। ‘এই পিতলের পিণ্ড হয়ে যাবে এক কেজি স্বর্ণ’ এমন ফাঁদে ফেলে কয়েক দফায় বিকাশে মোট ৬৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় জিনের বাদশা। চার দিন পরও ওই পিণ্ড স্বর্ণে রূপান্তরিত না হওয়ায় ঘটনাটি প্রতারণা বলে প্রকাশ পায়।
আর এমনই এক প্রতারণা শিকার হয়েছেন ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার উচাখিলা ইউনিয়নের চরআলগী গ্রামের ওই গৃহবধূ।
স্থানীয় সূত্র ও প্রতারণার শিকার ওই নারী জানান, তিনি একটি নিম্নবিত্ত পরিবারের গৃহবধূ। গত শুক্রবার (২৫ ডিসেম্বর) রাত ৩টার পর হঠাৎ নিজের মোবাইল ফোনে কল আসে ০১৯০৪১৬৩৫৩৪ নম্বর থেকে। কে ফোন করেছেন জানতে চাওয়ার আগেই বাবা বলে সম্বোধন করে বলতে থাকে, তিনি পাহাড়ের ওপর থেকে ফোন করেছেন। কুদরতিভাবে তিনি বেশ কয়েকটি স্বর্ণের পিণ্ড পেয়েছেন। যার একটার মালিক আমি। এ অবস্থায় ওই পিণ্ড পেতে হলে তার কিছু কথা শুনতে হবে। কিন্তু কথাগুলো কাউকে বলা যাবে না। বললে ভয়ানক ক্ষতি হবে। তা ছাড়া নিজের একমাত্র ছেলের নাকমুখ দিয়ে রক্ত বের হয়ে মারা যাবে। কথা বলার সময় জিনের বাদশা তাঁর (গৃহবধূ) পরিবারের সকল কিছু এমনভাবে বলছে যা সত্যি। বাড়ির আঙিনায় কোথায় কি আছে সব বলছে। এমতাবস্থায় পরদিন সন্ধ্যায় বাড়ির অদূরে একটি জায়গায় যেতে বলে। সেখানে একটি পটেটো চিপসের প্যাকেটের ভেতর রাখা পিতলের পিণ্ডটি নিয়ে সোজা ঘরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। পরে গভীর রাতে অজু করিয়ে কোরআন সামনে রেখে শপথও করায়। যেন এ সব কথা কাউকে না বলা হয়। এ অবস্থায় বেশ কয়েকবার ফোন করে বিভিন্ন কায়দা কৌশলে ভয়ভীতি দেখিয়ে চার হাজার মক্কা-মদিনার মেহমানকে খাওয়ানোর কথা ও তাঁদের নজরানা দেওয়ার কথা বলে এক লাখ টাকা পাঠাতে বলে। আর এই টাকা পাওয়া মাত্রই পিতলের পিণ্ড হয়ে যাবে এক কেজি পরিমাপের সোনা।
এ বিশ্বাসে ওই গৃহবধূ জিনের বাদশার দেওয়া বিকাশ নম্বর ০১৯০২৬১৪৮২৬ ও নগদ নম্বর ০১৯০৮০১২৭২৩ বেশ কয়েক দফায় মোট ৬৫ হাজার টাকা পাঠানো হয়। পরে ওই নম্বরগুলো বন্ধ পাওয়া যায়। কিন্তু আরেক নম্বরে ফোন করে বলা হয় কমপক্ষে চার দিন অপেক্ষা করতে হবে এর মধ্যে অলৌকিকভাবে পিতলের পিণ্ড হয়ে যাবে সোনা। কিন্তু ১০ দিনেও পিণ্ডটির কোনো ধরনের পরিবর্তন না হওয়ায় ওই গৃহবধূ বুঝতে পারেন তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এ অবস্থায় তিনি তাঁর স্বামীকে নিয়ে আজ সোমবার রাতে ঈশ্বরগঞ্জ থানায় যান অভিযোগ দায়ের করতে।
ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি আব্দুল কাদির মিয়া জানান, অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।