পুঁজিবাজার ডেস্ক : ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের শেয়ার লেনদেন স্থগিত করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)। লিস্টিং রেগুলেশনের ৫০ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে গতকাল থেকেই কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন স্থগিত করেছে স্টক এক্সচেঞ্জের পর্ষদ। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে অবসায়নের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত কোম্পানিটির লেনদেন স্থগিত থাকবে বলে স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
লিস্টিং রেগুলেশনের ধারা ৫০(১) অনুসারে, তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি লিস্টিং রেগুলেশনের বিধান লঙ্ঘন করলে কিংবা কোম্পানির শেয়ারদরে প্রভাব পড়তে পারে, এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্যে ঘাটতি থাকলে স্টক এক্সচেঞ্জ এ কোম্পানির শেয়ার লেনদেন স্থগিত করতে পারবে। লিস্টিং রেগুলেশনের ধারা ৫০(৩) অনুসারে, প্রথম দফায় ৩০ কার্যদিবস পর্যন্ত কোম্পানির শেয়ার লেনদেন স্থগিত থাকবে। পরবর্তী সময়ে স্টক এক্সচেঞ্জ চাইলে আরো ১৫ কার্যদিবসের জন্য এ স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়াতে পারবে।
প্রসঙ্গত, ক্রমাগত লোকসানের মুখে থাকা পিপলস লিজিংকে অবসায়নের জন্য সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রস্তাব পাঠায় বাংলাদেশ ব্যাংক। মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর কোম্পানিটিকে অবসায়নের জন্য উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ১০ জুলাই এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে জানানো হয়, কোম্পানিটির অবসায়নের জন্য আদালতে আবেদন করা হবে। এজন্য একজন অবসায়ক নিয়োগ করা হবে। অবসায়ক কোম্পানির দায়দেনা নির্ধারণ করে আদালতের নির্দেশনা অনুসারে অবসায়ন করবে।
পিপলস লিজিংয়ের পুঞ্জীভূত লোকসান ২ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। ২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে প্রতিষ্ঠানটির মূলধন ঘাটতির পরিমাণ। ২৮৫ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটির বিতরণকৃত ৬৬ শতাংশই খেলাপি হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় কার্যক্রম পরিচালনার সক্ষমতা হারিয়েছে পিপলস লিজিং।
নিরীক্ষক পিনাকী অ্যান্ড কোম্পানি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস তাদের কোয়ালিফায়েড অপিনিয়নেও পিপলস লিজিংয়ের ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেছে। ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত ২০১৮ হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদনে নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানটির পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সাবসিডিয়ারি কোম্পানি পিএলএফএস ইনভেস্টমেন্টসহ ২০১৮ হিসাব বছরে প্রতিষ্ঠানটির লোকসান হয়েছে ১৫৯ কোটি ১৪ লাখ টাকা। আর তাদের পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩২৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। তাছাড়া প্রতিষ্ঠানটির চলতি সম্পদের তুলনায় দায়ের পরিমাণ ৩ দশমিক ১১ গুণ বেশি।
৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত ২০১৮ হিসাব বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ প্রদানের সুপারিশ করেনি পিপলস লিজিংয়ের পরিচালনা পর্ষদ। আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৯টায় রাজধানীর রাওয়া কনভেনশন সেন্টারের অ্যাংকর হলে কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আহ্বান করা হয়েছে। ৫ আগস্ট এ-সংক্রান্ত রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে।
সমাপ্ত হিসাব বছরে পিপলস লিজিংয়ের সম্মিলিতভাবে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৫ টাকা ৫২ পয়সা, আগের হিসাব বছর যা ছিল ২৬ টাকা ৬৮ পয়সা (পুনর্মূল্যায়িত)। এককভাবে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৫ টাকা ২৪ পয়সা, আগের হিসাব বছর যা ছিল ২৭ টাকা ৭ পয়সা (পুনর্মূল্যায়িত)। ৩১ ডিসেম্বর সম্মিলিতভাবে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট দায় দাঁড়িয়েছে ৬৫ টাকা ৫৯ পয়সা, এককভাবে যা ৬৫ টাকা ২৬ পয়সা। ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর সম্মিলিত ও এককভাবে শেয়ারপ্রতি নিট দায় ছিল যথাক্রমে ৬০ টাকা ৭ পয়সা ও ৬০ টাকা ২ পয়সা (পুনর্মূল্যায়িত)।
সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার ডিএসইতে পিপলস লিজিংয়ের শেয়ার ৩ টাকায় লেনদেন হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।