শামীমুল হক : প্রতারণাও একটি শিল্প। ইদানিং এ শিল্পের রমরমা অবস্থা। অল্প সময়ে অর্থ বিত্তের মালিক হওয়া এ শিল্পের অন্যতম আকর্ষন। যদিও এ শিল্পে রয়েছে শত ভাগ রিস্ক। তারপর প্রতারণার শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ শিক্ষিত তরুণ তরুণী থেকে অক্ষর জ্ঞানহীনরাও। এ শিল্পকে আঁকড়ে ধরে হচ্ছে তারা লাখপতি,কোটিপতি। মিথ্যার ফুলঝুরি ফুটিয়ে কাবু করে সাধারণ মানুষকে। সরল মানুষরা লোভের ফাঁদে আটকা পড়ে সবই খোয়াত।
এরপরই সাধারণ মানুষের হুশ ফিরে আসত। আর প্রতারণা করতে গিয়ে কেউ সাজে ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশের বড় অফিসার, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিভিন্ন দপ্তরের বড় কর্তা, সাংবাদিকসহ আরো কত কি।
সর্বশেষ কাস্টমসের কর্মকর্তা পরিচয়ে গ্রেপ্তার হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চ ডিগ্রী নেয়া ফারজানা তুর্ণা। নাইজেরিয়ান প্রতারকদের সঙ্গে মিলে তুর্ণা হাতিয়ে নিতেন লাখ লাখ টাকা। অবলীলায় ফোন করে বলতেন, আমি কাস্টমস কর্মকর্তা ফারজানা মহিউদ্দিন বলছি। বিদেশ থেকে আপনার নামে একটি পার্সেল এসেছে। পার্সেলটির জন্য ‘কাস্টমস ফি’ হিসেবে আপনাকে মোটা টাকা দিতে হবে। পার্সেলে অবৈধ স্বর্ণ ও বৈদেশিক মুদ্রা রয়েছে। এগুলো বৈধ করার জন্য ফি দিতে হবে। নইলে মানি লন্ডারিং আইনে মামলায় পড়বেন। মামলার কথা শুনে কারো কি হুশ থাকার কথা? অথচ বাস্তবে ফারজানা কাস্টমস কর্মকর্তা নন। আর যাকে কল দেওয়া হয়েছে তার নামেও কোনো পার্সেল আসেনি। ফেসবুকে বন্ধুত্ব গড়ে তোলার পর উপহার পাঠানোর নামে ফাঁদে ফেলে প্রতারণায় জড়িত নাইজেরীয় চক্রের সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন এই তুর্ণা। বিনিময়ে পেতেন অঢেল টাকা।
অনেক টাকা আয়ের লোভে তুর্ণা জেনেশুনেই এমন কাজ চালিয়ে গেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেও ফারজানা নাকি ছিলেন ব্যতিক্রম। পড়াশোনা শেষে উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছা ছিল তার। এ জন্য ব্যবসা করার আগ্রহ ছিল। সে হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্র ছাত্রী তাকে আইডল ভাবতে শুরু করেছিল। কিন্তু সেই আইডল যে প্রতারণার আইডল হয়ে যাবে কেউ ভাবতেও পারেনি। প্রতারণা ব্যবসাকে যে ব্রত হিসাবে নেবেন কেউ বুঝতে পারেনি।
আসলে উচ্চাকাঙ্ক্ষাই তাকে ঠেলে দিয়েছে এপথে। রাতারাতি কোটিপতি হতে চেয়েছিলেন তুর্ণা। এজন্যই তার কোন স্বপ্নই পূরণ হয়নি। তুর্ণা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। ঢাকার বিএএফ শাহীন কলেজ থেকে এইচএসসি ও বিএএফ শাহীন কলেজ, চট্টগ্রাম থেকে এসএসসি পাস করেন । গ্রেপ্তারের খবর শুনে তার সহপাঠীরা বিস্ময় প্রকাশ করেন। চঞ্চল স্বভাবের মেয়েটি কিভাবে এতবড় প্রতারক চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ল? এ প্রশ্ন তাদের মনে। আসলে লোভ আর লালসা তার্ণাকে প্রতারক শিল্পী বানিয়ে দিয়েছে। শুধু তার্ণাই নন, এমন হাজারো তরুণ তরুণী প্রতারণা শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। করোনাকালে এমন অনেক ঘটনা সামনে এসেছে।
সূত্র : মানবজমিন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।