জুমবাংলা ডেস্ক : রাজধানীর অনেক বেসরকারি হাসপাতালের তুলনায় সরকারি সাহায্যপুষ্ট বাংলাদেশ শিশু হাসপাতলের (সাবেক ঢাকা শিশু হাসপাতাল) চিকিৎসা ব্যয় বেশি। হাসপাতালের চিকিৎসক-কর্মচারীরা এ অভিযোগ করেছেন। তারা বলছেন, সরকারি যে কোনো হাসপাতালে মাত্র ১০ টাকার টিকিট কেটে বহির্বিভাগের সেবা পাওয়া যায়। এমনকি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বহির্বিভাগের টিকিট মাত্র ৩০ টাকা। সেখানে শিশু হাসপাতালের টিকিটের মূল্য ৬০ টাকা। আবার জরুরি বিভাগে রোগী দেখাতে হলে টিকিটের দাম দিতে হয় ১২০ টাকা। পরীক্ষা-নিরীক্ষা ব্যয় সরকারি হাসপাতালের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি। এমনকি সাধারণ বিছানার ভাড়াও দিতে হয় ৭০০ টাকা। যে ব্যয় সাধারণের পক্ষে বহন করা একপ্রকার অসম্ভব। তবে এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বরাবরই উদাসীন।
সরকারি হাসপাতালের তুলনায় ঢাকা শিশু হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যয়ও অনেক বেশি। যেমন সরকারি হাসপতালে এক্স-রে করাতে দিতে হয় ২০০ টাকা; কিন্তু শিশু হাসপাতালে সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা। ব্লাড কালচার ৫০০ টাকা। ইকো ২৪০০ টাকা। সিরাম ফিরিটিন ৮৫০ টাকা, ইলেক্ট্রোলাইট ৫৪০ টাকা। ইমারজেন্সি টিকিট ১২০ টাকা, তাও আবার একদিনের জন্য। স্কিন ও ইএনটি টিকিটের মূল্য ১২০ টাকা এবং আউটডোর টিকিটের মূল্য ৬০ টাকা। অথচ সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালে টিকিটের মূল্য মাত্র ১০ টাকা।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের একদিনের আইসিইউ (ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট) ভাড়া ৮ হাজার টাকা, সিসিঅ্যান্ডডি আইসিইউ সাড়ে তিন হাজার টাকা, ডায়ালাইসিসের জন্য রোগীকে দিতে হয় এক হাজার টাকা। হাসপাতালের ভিভিআইপি কেবিনের ভাড়া ছয় হাজার টাকা, ভিআইপি কেবিন এসি সাড়ে তিন হাজার টাকা, সিঙ্গল কেবিন নন-এসি তিন হাজার টাকা, শেয়ার কেবিন ২ বেড এক হাজার ৫০০ টাকা, শেয়ার কেবিন ৪ বেড এক হাজার টাকা, সাধারণ বিছানা ৭০০ টাকা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম টেলিফোনে কথা বলতে অনীহা প্রকাশ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি হাসপাতালগুলোতে এ ধরনের কোনো খরচ নেই। এমনকি স্বায়ত্তশাসিত চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শিশুদের চিকিৎসা ব্যয়ও এর চেয়ে কম। তারা বলছেন, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল একটি সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান, যা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দ্বারা নিয়ন্ত্রণ হওয়ার কথা। কিন্তু পরিচালক, উপপরিচালক (হাসপাতাল) এটির ধার না ধেরে নিজেদের ইচ্ছামতো কাজ করে যাচ্ছে। তা ছাড়া হাসপাতালের বিছানা ভাড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষা ক্লিনিকের থেকেও বেশি। এতে করে হাসপাতাল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে যাওয়ার পরও দরিদ্র রোগীরা ঠিকমতো চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা জানান, এমনিতেই শিশু হাসপাতালের ব্যয় অনেক বেশি। তার পর বর্তমান অর্থবছরে এ প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা ব্যয় আরও বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করেছেন। যেখানে সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বিছানা ভাড়া কম, সেখানে শিশু হাপসাতালে দিন দিন বৃদ্ধি করার পাঁয়তারা করছে। এমনকি অফিস সময় জুনিয়র কনসালট্যান্ট দ্বারা ২০০ টাকা ভিজিট নেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন হাসপাতালে সাধারণত বৈকালিক সময় কনসালট্যান্ট সেবা দেওয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিশু হাসপাতালের পরীক্ষা-নিরীক্ষার চার্জ ও বিছানা ভাড়া তুলানমূলক বেশি রাখা হয়। হাসপাতালে নেই ভালো মানের এমআরআই ও সিটিস্কেন মেশিন। রোগীর এমআরআই বা সিটিস্কেন করার প্রয়োজন হলে বাইরে থেকে করিয়ে আনতে হয়। হাসপাতালের কেবিনগুলোর অবস্থাও খারাপ।
রোগীর স্বজনদের অভিযোগ- চিকিৎসার জন্য যে পরিমাণ টাকা দেওয়া হয়, সে অনুযায়ী সেবা পাওয়া যায় না। রোগীরা সেবাবঞ্চিত হলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সেদিকে নজর নেই। এমনকি হাসপতালের পরিচালনা পরিষদে যারা রয়েছেন, তারাও হাসপাতালের উন্নয়ন বা রোগীদের সেবা বাড়ানোর প্রতি কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের দুজন অধ্যাপক বলেন, শিশু হাসপাতালে সরকারের একটা থোক বরাদ্দ আসে। সেটি দিয়ে কর্মীদের বেতনের সমপরিমাণ। অন্যান্য ব্যয় মেটানো হয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফি এবং চিকিৎসার বিনিময় রোগীদের থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে। তবে শিশু হাসপাতালে রোগীদের কাছ থেকে বিভিন্ন সেবার বিপরীতে যে পরিমাণ টাকা নেওয়া হয় সেটি অনেক বেশি। তারা বলেন, শিশু হাসপাতালে বর্তমান প্রশাসন নানা ধরনের অনিয়মের প্রশ্রয় দিয়ে আসছে। বিশেষ করে দুটি ক্লিনিকে রোগীদের পাঠিয়ে দেওয়ার সঙ্গে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতনরা সরাসরি জড়িত। তা ছাড়া অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ব্যক্তি সুবিধার্থে। এ ক্ষেত্রে রোগীদের বা প্রতিষ্ঠানের সুবিধা গুরুত্ব দেওয়া হয় না।
এসব বিষয়ে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের পরিচালনা বোর্ডের অন্যতম সদস্য এবং স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ-স্বাচিপ মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ বলেন, শিশু হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যয় তুলনামূলক বেশি। পরিচালনা বোর্ড গঠিত হয়েছে, নতুন। আমরা ইতোমধ্যে কাজ করতে শুরু করেছি। আশা করছি চিকিৎসা ব্যয় কমাতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারব।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।