জুমবাংলা ডেস্ক : ভারতের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদে রায় মানেনি ভারতের মুসলিম সম্প্রদায়। কিন্ত কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা এই রায়ে খুশি হয়েছে। তবে মসজিদের জন্য জায়গা দেয়ার নির্দেশে রায়ের বিরোধিতাও করছে এবং তারা এর বিরুদ্ধে আপিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মুসলমানরা।
১৫২৮ সালে অযোধ্যায় সম্রাট বাবরের সেনাপতি মীর বাকি তাসখন্দী সম্রাটের নামকে স্মরণীয় রাখতে বাবরি মসজিদ নির্মাণ করলেও এ নিয়ে হিন্দুত্ববাদীদের বিরোধিতা শুরু হয় উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে।
১৮৫৩ সালে কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা প্রথম প্রতিবাদ করে দাবি করে সেখানে রাম মন্দির ছিল এবং ওই জায়গাটি রামের জন্মভূমি। সেসময় এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুসিলম ও হিন্দু সম্পদায়ের মাঝে সহিংসতার ঘটনা ঘটে। পরে ব্রিটিশ সরকার এই জায়গাটি দুই ধর্মের উপাসনার জন্য নির্ধারণ করে দেয়। তারা একটি বেষ্টনী তৈরি করে তার ভেতরের চত্বর মুসলিমদের জন্য এবং বাইরের চত্বর হিন্দুদের ব্যবহারের জন্য নির্ধারণ করে দেয়।
এরপর ১৯৪৯ সালে কিছু উগ্র হিন্দু মসজিদের ভেতর রামের মূর্তি রেখে দেয়। আর এনিয়ে দুই সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে দেওয়ানি মামলা করা হয়। তখন থেকেই মসজিদটি ব্যবহারের জন্য পুরোপুারি বন্ধ করে দেয়া হয়।
এ সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, ব্রিটিশরা যেখানেই কলোনী স্থাপন করেছে সেখানেই স্থানীয় মানুষের মাঝে বিরোধ সৃষ্টি করে দিয়েছে কোনো না কোন অজুহাতে। তাতে খুব সহজেই তারা শাসন ও দখলের রাজত্ব কায়েম করতে পেরেছে। এটি ব্রিটিশদের একটি স্বভাবগত পদ্ধতি। তারা এই অঞ্চলে এসে বাবরি মসজিদ নিয়ে ঠিক এই কাজটিই করলো। উপমহাদেশে শতকের পর শতক ধরে হিন্দু মুসলমানরা সাম্প্রদায়িত সম্প্রীতি বজায় রেখেই বসবাস করেছে।মসজিদ মন্দির পাশাপাশি থেকেও কোনো বিবেধ সৃষ্টি না করে এক সঙ্গেই উপাসনা ও প্রার্থনা করেছে। কিন্তু এই অঞ্চলে ব্রিটিশ শাসন শুরু হওয়ার পর থেকেই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও বিরোধিতাগুলো শুরু হয়। উপনিবেশবাদ ও সাম্রাবাদকে পাকাপোক্ত করতে তারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করেছে।
রামের জন্মভূমি ও মন্দির ছিল বলে যে দাবি হিন্দুত্ববাদীরা করছে এখন পর্যন্ত তার কোনও প্রমাণও দিতে পারেনি হিন্দুরা। এমনকি সুপ্রিমকোর্ট যে রায় দিয়েছে সেখানেও বলা হয়নি যে এখানে রাম মন্দির ছিল। মসজিদের নিচে যে অবকাঠামো পাওয়া গেছে সেটি যে মন্দিরের সেটিও প্রত্নতত্ববিদরা বলছেন না।
অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান এ সম্পর্কে বলেন, ঐতিহাসিকভাবে রামের জন্মভূমি নিয়ে বিতর্ক আছে। তিনি ভারতবর্ষের কোথায় জন্ম গ্রহণ করেছিলেন তার সঠিক ইতিহাস এখনও কেউ দেখাতে পারেনি। এমনকি হিন্দু ধর্মগ্রন্থ বিষ্ণুস্মৃতিতে ভারতবর্ষের প্রায় ৫০টি হিন্দুদের তীর্থস্থানের কথা বলা হয়েছে তার কোনোটিও এই অযোধ্যার বাবরি মসজিদের জায়গা নয়। আবার বাবরি মসজিদ নির্মাণের প্রায় ৪০ বছর পর ১৫৭৪ সালে ভারতের বিখ্যাত হিন্দু পন্ডিত তুলসী দাস যে রামচরিত রচনা করেছেন সেখানে যে তীর্থস্থানগুলোর কথা উল্লেখ করেছেন সেখানেও এই বাবরি মসজিদের জায়গার নাম নেই।
অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান আরও জানান, ভারতের প্রত্নতত্ব অধিদপ্তর খনন করে মসজিদের নিচে যে অবকাঠামো পেয়েছে তা যে কোনো মন্দিরের সেটিও বলেনি। তবে প্রত্নতত্ব জরিপে এটি প্রমাণ করেছে যে খ্রিষ্টপূর্ব এক হাজার বছর আগে এখানে কোনও মানব বসতি ছিল না। অথচ রামের জন্ম হচ্ছে খ্রিষ্টপূর্ব এক হাজার বছর পূর্বে। এজন্য সহজেই বুঝা যায় যে এই জায়গাকে রামের জন্মভূমি বলা যায় না। হিন্দু ধর্মীয় পন্ডিতরা রামের জন্মভূমি হিসেবে অযোধ্যার বাইরেও কিছু জায়গাকে নির্দেশ করেছে। সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের পর ভারতের বিখ্যাত ইতিহাসবিদ জওহর লাল নেহেরু বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষক মৃদুলা চক্রবর্তী এর বিরোধিতা করেছেন। শুধু তাই নয় সাবেক কয়েকজন বিচারপতিও এই রায়ের সমালোচনা করেছেন। এই মামলার আইনজীবী ভারতের প্রখ্যাত আইনজীবী রাজীব ধামান বলেছেন আমরা কোর্টে প্রমাণ করতে পেরেছি এখানে রাম মন্দির ছিল না। হিন্দুত্ববাদীরা একটি বিশ্বাসের ওপর এই দাবি করছেন এবং কোর্ট সেই দাবিকে মেনে নিয়ে একটি রায় দিয়েছেন।
১৯৯১ সালে উত্তর প্রদেশে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর মসজিদটির কিছু ক্ষতি করে হিন্দুত্ববাদীরা। আর এর ঠিক পরের বছর ১৯৯২ সালে ভিএইচপি, বিজেপি এবং শিব সেনা পার্টির হাজার হাজার সমর্থক আইনশৃ্ঙ্খলা বাহিনীর সামনে মসজিদটি ধ্বংস করা হয়। এই হামলায় উপস্থিত থেকে নেতৃত্ব দেন বিজেপি নেতা সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও উপ প্রধানমন্ত্রী লালকৃষ্ঞ আদভানি। এর ফলে পুরো ভারতে হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে হওয়া দাঙ্গায় প্রায় চার হাজার মানুষ মারা যায়।
বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পেছনে উস্কানি দেয়ার অভিযোগে ২০০৩ সালের সেপ্টেম্বরে সাত জন হিন্দু নেতাকে বিচারের আওতায় আনা উচিত বলে রুল জারি করেন ভারতের একটি আদালত। তবে সেই তালিকায় নাম ছিল না লালকৃষ্ণ আদভানির।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।