জুমবাংলা ডেস্ক : ১৩ বছর বয়সে স্বামীর ঘরে যেতে হয়েছিল কিশোরীটিকে। স্বামীর সাথে তার বয়সের পার্থক্য ছিলো তিনগুণ। বয়স কম হওয়ায় শুধু ধর্মীয় পন্থায় বিয়ে পড়ানো হয়েছিল। মাস দুয়েক সংসার করার পর বাল্যবিয়ের শিকার কিশোরীর সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় স্বামী শফিকুল ইসলাম (৪৫)।
কিন্তু এখন সেই বিয়ের কথা অস্বীকার করছেন শফিকুল, পেশা শিক্ষকতা করেন তিনি। গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষক।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, বাল্যবিয়ের শিকার কিশোরী শিক্ষক শফিকুলের তৃতীয় নাম্বার স্ত্রী। সম্প্রতি তিনি নতুন করে পার্শ্ববর্তী সিংড়া দমদমা এলাকায় আরো একটি বিয়ে করেছেন। এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার রাতে থানায় মামলা করতে গেলে ওই কিশোরীকে বাদী করে গুরুদাসপুর থানা যৌতুকের দায়ে নির্যাতন করার মামলা দায়ের করা হয়।
বাল্যবিয়ের শিকার ওই কিশোরী অভিযোগ করেন, মায়ের সঙ্গে বাবার বাড়িতে থাকেন তিনি। শিক্ষক শফিকুলের বাড়ি নাজিরপুর বাজার এর পাশে আর তাদের বাড়ি নাজিরপুর নতুনপাড়া। শফিকুলের পূর্বের দ্বিতীয় স্ত্রী তালাক হয়েছে ২০১৩ সালে। তার প্রথম স্ত্রী সিংড়ায় বাবার বাড়িতে থাকেন।
ওই কিশোরী জানায়, স্থানীয় একটি মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় শফিকুল বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে তাকে বিয়ে করেন। বিয়েতে সম্মতি না থাকলেও অসহায় পরিবারের কথা বিবেচনা করে রাজি হয়েছিল। কিন্তু বয়স কম হওয়ায় ৭/৮ মাস আগে গোপনে ওই বিয়ে হয়। তাকে বিয়ের সময় যৌতুক দেয়া হয়েছিল।
ওই কিশোরীর মা জানান, আগের দুই স্ত্রীর কথা জেনেও শফিকুলের প্রস্তাবে রাজি হয়ে মেয়েকে বাল্যবিয়ে দিয়েছিলেন। মাস দুয়েক সংসার করার পর জামাই শফিকুল মেয়েকে তার বাড়িতে রেখে যান। এরপর যোগাযোগ বন্ধ ছিলো কিছুদিন আগে। এরপর হঠাৎ করে শফিকুল জানান তার মেয়েকে তিনি বিয়ে করেননি। এখন লজ্জায় মুখ দেখাতে পারছে না পরিবারটি।
তবে কিশোরীর অভিযোগ অস্বীকার করে শফিকুল ইসলাম বলেন, আইন মেনে তিনি একাধিক বিয়ে করতে পারেন। তাতে সমস্যা কোথায়?
কাজী মোহাম্মদ আলী বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, বুঝতে না পেরে শফিকুলের চাপে ধর্মীয় মতে বিয়ে পড়িয়ে ছিলেন তিনি।
শফিকুলের বিরুদ্ধে এলাকায় একাধিক বিয়ে করার অভিযোগে রয়েছে। প্রাইভেট পড়ানোর নামে ছাত্রীদের শ্লীলতাহানীর অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ২০১৪ সালে আপন চাচাতো বোনের মেয়েকে বিয়ে করায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। এ ঘটনায় তিনি হাজতবাস করেন। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। শফিকুলের ধারাবাহিক যৌনলালসা অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
নাজিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, কিছুদিন পরপর ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে নারীঘটিত অভিযোগ পাওয়া যায়।
নাজিরপুর উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি লুৎফর রহমান হীরা জানান, তিনি ওই শিক্ষকের বিষয়ে কিছু জানেন না। প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলে বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।
নাজিরপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ফরিদুর রহমান জানান, তার কৃতকর্মের জন্য তাকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। কিন্তু বহিষ্কারের সামান্য ৩০ টাকায় শফিকুল বেঁচে যায়।
গুরুদাসপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জানান, থানায় যৌতুকের দায়ে নির্যাতনের মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।