জুমবাংলা ডেস্ক: পদ্মা সেতু হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই ঢাকার নামকরা এক স্কুলের শিক্ষিকা তাসলিমা সুমির। পদ্মা সেতুর বিষয়ে তিনি তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, যতবার পদ্মা পাড়ি দেবো, ততবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্যালুট জানাবো, তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাবো। তিনি বলেন টেলিভিশনে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখার জন্য সকাল থেকেই আজ সাংসারিক কোনো কাজ হাতে রাখেননি। অবশ্য এর আগের দিন তার উকিল স্বামীও বলে দিয়েছিলেন, আজ সকালে কোন কাজ না রাখার জন্য। পরিবারের সবাই মিলে টিভির সামনেই যাতে বসে যেতে পারেন। সুমি বলেন, মুগ্ধ হয়েই তারা পদ্মা সেতুর উদ্বোধনি অনুষ্ঠান দেখেছেন। এতবড় কর্মযঞ্জ শেষ করা এবং চলাচলের জন্য খুলে দেয়ায় তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হাজারবার স্যালুট জানিয়েছেন।
তাসলিমা সুমির মত মতো দেশের কোটি মানুষের মনে আজ আনন্দের ঝিলিক এই পদ্মা সেতু। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের পর, এই সেতু আজ আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা। এই সেতুকে ঘিরে নানা মানুষের নানান প্রতিক্রিয়া। রাজধানীর পল্টনে জুতা সেলাই এবং পালিশ করেন রাম দাস। পদ্মা সেতু নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় তিনি বাসসকে বলেন, ‘এতো বড় একটা কাজ করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ, সেতুটি দেখার খুবই ইচ্ছা রয়েছে। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছি, একবার এই সেতু দেখতে যাবোই।’
ফকিরাপুল কাঁচাবাজারে তরকারি বিক্রেতা আব্দুল খালেক বাসসকে বলেন, ‘আমার বাড়ি খুলনা, গ্রামের বাড়ি যাওয়া-আসার সময় ফেরিতেই কাটাতে হতো কয়েক ঘন্টা। অনেক সময় সকালে রওয়ানা দিলে গন্তব্যে পৌঁছুতে রাত হয়ে যেত। এখন আর এই সময়টা লাগবে না। চাইলে সকালে ঢাকায় এসে আবার বিকেলের মধ্যেই বাড়ি চলে যাওয়া যাবে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।’
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউর টেইলারিং শপের কর্মচারি স্বপন তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘এই পদ্মা আমার ভাইকে কেড়ে নিয়েছে। লঞ্চ দুর্ঘটনায় তাকে জীবন দিতে হয়েছে। আরও আগে যদি এই পদ্মা সেতু হতো, তাহলে আমাকে ভাই হারা হতে হতো না।’ তিনি জানান, তার বড় ভাই মাখন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। লঞ্চ দুর্ঘটনায় সে তার ছোট্ট দু’টি সন্তান, স্ত্রী আর বৃদ্ধ মা-বাবাকে রেখে পরপারে চলে গেছেন। এরপর অভাবের সংসারের পড়াশুনা ছেড়ে পরিবারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তাকেই তুলে নিতে হয়েছে। এই সেতু আগে হলে হয়তো তাদের পরিবারকে এই দুর্দিন দেখতে হতো না।
ভারতের একটি রাজ্যে পড়াশুনা করা এক শিক্ষার্থীর বাবা বাসসকে বলেন, ‘পদ্মা সেতু সম্পর্কে আমার ছেলে গত রাতে আমাকে ফোন করে উচ্ছাস প্রকাশ করেছে। পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ায় তার আনন্দের সীমা নেই। কারণ এই সেতু উদ্বোধনের ফলে সাড়ে তিন থেকে চার ঘন্টায় সে কলকাতা থেকে ঢাকা চলে আসতে পারবে।’
রাজধানীতে একটি বেসরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানান , তার স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা আবদার করেছে তাদেরকে পদœা সেতু দেখিয়ে নিয়ে আসতে হবে । একই কথা বলেছেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সল্প আয়ে চাকুরী করা এক অভিভাবক । তিনি বলেন তার স্ত্রী ও সন্তান আবদার করেছেন, তাদের একদিন পদ্মা সেতু স্থলে নিয়ে যেতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ প্রমত্তা পদ্মা নদীর উপর বহু-প্রত্যাশিত পদ্মা বহুমুখী সেতু উদ্বোধন করেন। তিনি বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে আজ সকালে পদ্মা সেতুর ফলক উম্মুক্ত করেন। রোববার থেকে দক্ষিণাঞ্চলের জনগণ সরাসরি সড়ক পথে ঢাকায় যেতে পারবেন। এর মধ্যদিয়ে তারা ফেরি ঘাটের যন্ত্রণাদায়ক দুঃস্বপ্ন থেকে মুক্তি পাচ্ছেন। তারা এখন এ সেতুর উপর দিয়ে মাত্র ছয় মিনিটে পারাপার হবেন।
স্বপ্নের এই পদ্মা সেতু কেবলমাত্র রাজধানী ঢাকা ও দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সরাসরি সড়ক ও রেল যোগাযোগই স্থাপন করেনি বরং এটি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ব্যাপক সংযোগ ও বাণিজ্যের দ্বার খুলে দিয়েছে। এছাড়া, এই সেতু সাধারণভাবে সারা দেশের পাশাপাশি বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সমৃদ্ধি আনয়নের ক্ষেত্রে পরিবহন সময় ও অন্য ব্যয় হ্রাসের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক প্রভাব রাখবে। সূত্র: বাসস
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।