জুমবাংলা ডেস্ক : ঠান্ডা, কাশি ও জ্বর ছাড়াও শ্বাসকষ্টে ভুগছেন ষাটোর্ধ্ব রীনা বেগম। বাঘারপাড়ার বড়বাঘ গ্রাম থেকে স্বজনরা তাকে নিয়ে আসেন যশোর জেনারেল হাসপাতালে। কিন্তু হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে পা রাখার জায়গা নেই। বাধ্য হয়ে ওয়ার্ডের সামনের রাস্তা সংলগ্ন গাছতলায় শুরু হয় তার চিকিৎসা। সেখানেই তাকে দেওয়া হয় অক্সিজেন।
যশোরে প্রতিদিনই লাফিয়ে বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। করোনায় মৃতের সংখ্যাও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। সেই সঙ্গে বাড়ছে হাসপাতালে করোনা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি রোগীর চাপ। হাসপতালের ওয়ার্ড রোগীতে পূর্ণ। ফলে জায়গা না পেয়ে বাইরে গাছতলা, এমনকি রাস্তার উপরেও রোগীদের চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে। অনেকে যে ভ্যানে এসেছেন সেই ভ্যানের উপরেই চলছে চিকিৎসা। আবার জায়গা না পেয়ে চিকিৎসা না নিয়েই ফিরে যাচ্ছেন অনেকে।
যশোর সদর উপজেলার বসুন্দিয়া ইউনিয়নের রাজু আহমেদ জানান, তার বৃদ্ধ চাচীকে নিয়ে ভ্যানযোগে সকাল সাড়ে ৯টায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আসেন। ডাক্তার তাকে ইয়োলো জোনো পাঠালেও সেখানে কোনো জায়গা না থাকায় টানা তিন ঘণ্টা ওয়ার্ডের সামনে ভ্যানের উপরে রেখেই রোগীকে চিকিৎসা নিতে হয়।
সদর উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের খালেদা পারভীন জানান, তার মাকে খোলো আকাশের নিচে ডাস্টবিনের সামনে রেখে চিকিৎসা করাতে বাধ্য হচ্ছেন।
অবশ্য যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আখতারুজ্জামান জানান, আইসোলেশন ওয়ার্ডে রোগীর চাপ সামলাতে ওয়ার্ডকে সম্প্রসারণ করা হয়েছে। অতিরিক্ত রোগী নতুন ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। প্রয়োজনে বেড সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে।
তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে অক্সিজেনের কোনো সংকট নেই। বর্তমানে এ হাসপাতালে করোনা রোগীর জন্য ১৪৬টি বেড আছে। সেন্ট্রাল অক্সিজেন সাপ্লাই ছাড়াও রয়েছে ছোট-বড় মিলিয়ে ৪৫৯টি সিলিন্ডার।
যশোর সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য কর্মকর্তা ডা. মো. রেহেনেওয়াজ জানান, গত চব্বিশ ঘণ্টায় হাসপাতালে করোনায় ৬ জন ও উপসর্গ নিয়ে আরও ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে জেলায় ১ হাজার ২০ জনের নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩৭৩ জনের। পরীক্ষা বিবেচনায় আক্রান্তের হার ৩৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
এই নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছেন ১৪ হাজার ১৭০ জনের ও সুস্থ হয়েছেন ৮ হাজার ৪০৮ জন। আর জেলায় করোনায় মোট মারা গেছেন ১৮৭ জন।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. আরিফ আহমেদ জানান, আড়াইশ শয্যার এই হাসপাতালে শুধু করোনা ওয়ার্ডেই বর্তমানে ভর্তি রয়েছেন ২৪৩ জন রোগী। শয্যা সংখ্যা বাড়িয়ে রোগী সংকুলানের ব্যবস্থা করা গেলেও চিকিৎসক ও নার্স সংকটে বাড়তি রোগীদের সেবা দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে।
জানা যায়, বর্তমানে হাসপাতালে ৪৩ জন চিকিৎসক কর্মরত আছেন। শূন্য রয়েছে ১২টি পদ। এজন্য গত ৩ জুন ২০ জন চিকিৎসক চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালককে চিঠিও দেওয়া হয়। এছাড়া হাসপাতালে রয়েছে নার্স, আয়া ও পরিচ্ছন্ন কর্মীর সংকট।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।