যার প্ররোচনায় সৌদি আরবে যেয়ে নির্মম নির্যাতনের স্বীকার সুমি

জুমবাংলা ডেস্ক : স্বামী নুরুল ইসলামের প্ররোচনায় সৌদি আরব গিয়েছিলেন নির্যাতনের শিকার সুমি আক্তার (১৮)। শুরুতে ভালো কাজের কথা বললেও পরে গৃহকর্মীর ভিসায় তাকে সৌদি পাঠানো হয়। শুক্রবার সন্ধ্যায় বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান সৌদি ফেরত সুমি আক্তার। এ সময় তিনি সৌদিতে থাকা অবস্থায় প্রায় সাড়ে পাঁচ মাসে তার ওপর নানান নির্যাতনের বর্ণনা দেন।

নির্যাতনের শিকার গৃহকর্মী সুমি আক্তারকে শুক্রবার বিকেলে ওয়েজ অর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মাধ্যমে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থেকে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সহকারী পরিচালক আবু হেনা মোস্তফা কামাল একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে বোদা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে নিয়ে আসেন। পরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ মাহমুদ হাসানের মধ্যস্থতায় সুমির বাবা মায়ের কাছে তাকে হস্তান্তর করা হয়। পরে সুমি বাবা-মায়ের সঙ্গে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার পাঁচপীর ইউনিয়নের বৈরাতি এলাকায় যান।

সুমি আক্তার জানান, তিনি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। দুই বছর আগে ঢাকায় গিয়ে গার্মেন্টসে চাকরি নেন। সেখানেই নুরুল ইসলাম নামে আশুলিয়ার চারাবাগ এলাকার এক যুবকের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ঢাকায় যাওয়ার ৬ মাস পর তাকে বিয়ে করেন। গত ৩০ মে স্বামী নুরুল ইসলাম ‘রূপসী বাংলা ওভারসিজ’র মাধ্যমে গৃহকর্মী ভিসায় তাকে সৌদি আরবের রিয়াদে পাঠান। সেখানে যাওয়ার পর রিয়াদে প্রথম কর্মস্থলে মালিক তাকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করতেন, মারধর করতেন, এমনকি হাতের তালুতে গরম তেলও ঢেলে দিয়েছেন। চিৎকার করলে ঘরের ভেতর আটকে রাখতেন।

সুমি আরও জানান, একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে ওই মালিক তাকে না জানিয়ে সৌদি আরবের ইয়ামেন সীমান্ত এলাকা নাজরানের এক ব্যক্তির কাছে প্রায় ২২ হাজার রিয়ালে বিক্রি করে দেন। ওই মালিকও একইভাবে তাকে শারীরিক ও মানুষিকভাবে নির্যাতন শুরু করেন। উদ্ধার হওয়ার আগে ১৫ দিন তাকে ঘরের মধ্যে আটকে রাখা হয়েছিল। ঠিকমতো খাবার দেয়া হয়নি। তার নিজের মুঠোফোনটিও তারা নিয়ে নেন। এক সময় খুব কান্নাকাটি করে স্বামীর সঙ্গে একটু কথা বলার জন্য মোবাইলটি চান সুমি। বাড়ির মালিক তাকে মোবাইলটি দিলে বাথরুমে গিয়ে কৌশলে একটি ভিডিও ধারণ করেন সুমি। সেই ভিডিওতে তিনি নিজের নির্যাতনের সব কথা জানান এবং প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করেন। ভিডিওটি তার স্বামীর কাছে পাঠিয়ে দেন। পরে ওই ভিডিও তার স্বামী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেন এবং গণমাধ্যমকর্মীদের অবহিত করেন। বিষয়টি গণমাধ্যমে আসার পর প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সুমিকে উদ্ধারের উদ্যোগ নেয়। সৌদির জেদ্দা কনসুলেটের কর্মকর্তা আব্দুল হক অসামান্য সহযোগিতা করছেন বলে জানান সুমি আক্তার।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে সুমি বলেন, আমি যেভাবে নির্যাতন হয়েছি তা সবাই ভিডিওর মাধ্যমেই জেনেছেন। আর নতুন করে কিছু বলার নেই। তবে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা না পেলে উদ্ধার হতে পারতাম না। আমি প্রধানমন্ত্রী ও আমাকে উদ্ধারের জন্য যারা সহযোগিতা করেছেন গণমাধ্যমকর্মীসহ সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এ সময় সুমি ভবিষ্যৎ জীবন গড়ার জন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন।

সুমির মা মল্লিকা বেগম বলেন, আমার মেয়েকে সরকার নির্যাতন থেকে উদ্ধার করে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে। এজন্য আমি সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা খুব দুঃশ্চিন্তায় ছিলাম। ভিডিও প্রকাশ হওয়ার পর একদিনও স্বস্তিতে ঘুমাতে পারিনি। এখন মেয়েকে ফিরে পেয়েছি আর কিছু চাই না।

পাঁচপীর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির প্রধান বলেন, সৌদিতে নির্যাতনের শিকার গৃহকর্মী সুমিকে তার পরিবারের কাছে তুলে দেয়া হয়েছে। তার স্বামীর কথা মতোই সে সৌদিতে যায়। সৌদিতে যারা এভাবে গৃহকর্মীদের নির্যাতন করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দরকার।

বোদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সৈয়দ মাহমুদ হাসান বলেন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সৌদি থেকে ওই গৃহকর্মীকে উদ্ধার করে বাংলাদেশে নিয়ে আসে। তাকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পরবর্তীতে তার কোনো সহযোগিতা প্রয়োজন হলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছেন।

Write a Comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *