জুমবাংলা ডেস্ক : মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের বৃন্দারানীর দীঘি। প্রায় ৭ একরে বিশাল দীঘিতে রয়েছে প্রচুর বড় বড় মাছ। দীঘির লিজ নিয়ে দু’টি মৎস্যজীবী সমিতি প্রায় ৬ বছর থেকে মামলা চালিয়ে আসছে। মামলা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে দীঘিটি ছয় বছর ধরে লিজ না হওয়ায় সরকার প্রতিবছর লাখ লাখ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। এদিকে দু’টি সমিতি দীঘিটি লিজ পেতে আইনি লড়াইয়ে পরস্পরের প্রতিপক্ষ হলেও রাতের আধারে মিলেমিশে মাছ চুরিতে সক্রিয় বলে স্থানীয়রা জানান।
আজ শুক্রবার ভোররাতে বিজিবির টহলদল মাছ চুরির সময় আটশ ৭০ কেজি মাছ আটক করে। এই মাছ চুরির ঘটনার সঙ্গে দু’টি সমিতির সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান।
স্থানীয় লোকজন ও উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, পৃথিমপাশা ইউনিয়নের আলী নগর ক্যাম্প এলাকায় বৃন্দারানীর দীঘির মাছ চুরির সময় বিজিবির টহল দল আটশ ৭০ কেজি মাছ আটক করে। এ সময় একটি অটোটেম্পু, বেড়জাল ও চালককে আটক করা হয়। ওই ঘটনায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকায় পৃথিমপাশা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড সদস্য সোহেল আহমদ চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে বিজিবি ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, প্রগতি মৎস্যজীবী সমিতির আখদ্দস মাস্টার তাকে মাছ মারা হচ্ছে কি না দেখার জন্য দীঘিতে পাঠিয়েছেন। পরে স্থানীয় পৃথিমপাশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নবাব আলী বাকর খানের জিম্মায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সকালে আটক মাছগুলো এক লাখ ৪৫ হাজার টাকায় নিলামে বিক্রি করা হয়।
এই ঘটনায় অটো টেম্পুর চালক বিজিবি ও কুলাউড়া উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছে যে এই মাছ চুরির ঘটনায় কিবরিয়া হোসেন খোকন মেম্বার ও আখদ্দস মাস্টার তাকে দীঘিতে গাড়ি নিয়ে যেতেন।
স্থানীয় লোকজন জানান, বৃন্দারানীর দীঘি লিজ নিতে পৃথিমপাশা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার কিবরিয়া হোসেন খোকনের নেতৃত্বে আলীনগর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি ও আখদ্দছ আলী মাস্টারের নেতৃত্বে প্রগতি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি প্রায় ছয় বছর ধরে আদালতে মামলা চালিয়ে আসছে। মামলার দীর্ঘ সূত্রতার জের ধরে দুটি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি এক হয়ে এবং স্থানীয় ভূমি অফিসের সংশ্লিষ্ট লোকজনের যোগসাজশে রাতের আধারে প্রায়শই মাছ লুট করে থাকে। স্থানীয় লোকজন বিষয়টি অবগত হলেও কেউ প্রতিবাদ করার সাহস করেন না। কেননা মাছ লুটের সঙ্গে জড়িতরা প্রভাবশালী। ভাগ্যক্রমে শুক্রবার ভোররাতে বিষয়টি বিজিবির টহল দলের নজরে আসায় মাছ চুরির ঘটনা প্রকাশ পায়।
আলীনগর মৎস্যজীবী সমিতির কিবরিয়া হোসেন খোকন জানান, তিনি মাছ চুরির সঙ্গে জড়িত নয়। তবে তিনি বিজিবির আটক করা মাছগুলো নিলামে ক্রয় করেছেন। এদিকে প্রগতি মৎস্যজীবী সমিতির আখদ্দস মাস্টার সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। ঘটনার দিন তিনি শ্রীমঙ্গলে ছিলেন।
পৃথিমপাশা ইউনিয়নের উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা আব্দুল মুস্তাকিম বৃন্দারানীর দীঘির আয়তন কিংবা দীঘি নিয়ে মামলাকারী দু’টি মৎস্যজীবী সমিতির নামও জানেন না। ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি ঢাকায় রয়েছেন বলে জানান। তবে তিনি ঢাকা থেকে এসে মাছ চুরির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করবেন।
বিজিবি আলীনগর ক্যাম্পের ক্যাম্প কামান্ডার সুবেদার আলমগীর ভুঁইয়া মাছ আটকের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, বিজিবির নিয়মিত টহলকালে বৃহস্পতিবার ভোররাতে সীমান্তবর্তী সরকারি বৃন্দারানী দীঘি থেকে মাছ চুরির বিষয়টি নজরে আসে। এ সময় মৎস্যজীবীরা আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে পলায়ন করে। তখন মাছ, জাল ও চালকসহ অটোটেম্পু আটক করা হয়।
কুলাউড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. সুলতান মাহমুদ জানান, আটক আটশ ৭০ কেজি মাছ নিলামে এক লাখ ৪৫ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে দীঘি দ্রুত বন্দোবস্ত না দিলে সরকার প্রতিবছর বড় অংকের রাজস্ব হারাবে। এ ব্যাপারে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। তিনি আরো জানান, এ ঘটনার সঙ্গে খোকন মেম্বার ও আখদ্দস মাস্টার সরাসরি জড়িত। মামলায় তাদের নাম থাকবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।