কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদে ঐতিহ্যবাহী অষ্টমীর স্নান ও মেলা উপলক্ষে লাখো পূণ্যার্থীর ঢল নেমেছে।
চৈত্র মাসের অষ্টমী তিথিতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ব্রহ্মপুত্র নদে এ পূণ্যস্নান সম্পন্ন করেন। উপজেলার নদী বন্দর এলাকার থেকে জোড়গাছ পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে এবারের অষ্টমীর স্নান ও মেলার স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) ভোর সাড়ে চারটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত স্নানের উত্তম লগ্ন থাকলেও দিনব্যাপী স্নান ও মেলা চলবে।
ঐতিহ্যবাহী চিলমারী ব্রহ্মপুত্র নদে মহাষ্টমীর স্নান মেলা উদযাপন কমিটি সুত্রে জানা যায়, প্রায় ৪০০ বছর থেকে চৈত্র মাসের শুক্ল পক্ষের অষ্টমী তিথিতে পূণ্যতোয়া খ্যাত ব্রহ্মপুত্র নদের স্নান পর্ব চলে আসছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত পূণ্যার্থীদের থাকার জন্য উপজেলার প্রায় ২২টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় খুলে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও পূণ্যার্থীদের স্নান পরবর্তী পোশাক পরিবর্তনের জন্য এবং রাত্রী যাপনের জন্য ৪৪টি অস্থায়ী বুথ করা হয়েছে। পূণ্যার্থীদের পূজাপর্বের জন্য প্রায় দুই শতাধিক ব্রাহ্মণ পূজারি দায়িত্ব পালন করেন।
হিন্দু ধর্মমতে, চৈত্র মাসের শুক্ল পক্ষের অষ্টমী তিথিতে পূণ্যতোয়া খ্যাত ব্রহ্মপুত্র নদে স্নান করলে ভক্তের সমস্ত পাপ ধুয়ে মুছে যায়। পাপমোচনের অভিপ্রায়ে তাই প্রতি বছর জেলা ও জেলার বাইরে থেকে লক্ষ লক্ষ হিন্দু ধর্মাবলম্বী পূণ্যার্থী ব্রহ্মপুত্র নদে স্নান করতে আসেন।
এবারের স্নানের তিথি ভোর সাড়ে ৪টায় শুরু হওয়ায় দূরের পূণ্যার্থীগণ একদিন পূর্বে চিলমারী আসেন। তাঁরা চিলমারী উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আত্নীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নেন। কেউ কেউ আবার ব্রহ্মপুত্র নদের তীরের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় জুড়ে বিচ্ছিন্নভাবে বিছানা করে রাত্রী যাপন করেন।
দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলা থেকে ক্ষেত্রমোহন রায় (৬২) এসেছেন ব্রহ্মপুত্র স্নানে। কথা হয় তাঁর সাথে, মঙ্গলবার সকাল ১০টায় চিরিরবন্দর উপজেলার ভূষিরবন্দর এলাকায় নিজ বাড়ি থেকে স্ত্রী সন্তানাদীসহ রওনা দিয়েছিলেন। দিনাজপুর শহর থেকে অষ্টমীর স্নানের জন্য ৯টি বাসে করে তাঁরা প্রায় সাড়ে ছয়’শো জন পূণ্যার্থী চিলমারী আসেন। হাজারো পূণ্যার্থীর ভিড় ঠেলে চিলমারী রাজারভিটা স্নানঘাটে পৌচ্ছাতে তাঁদের প্রায় ৮ ঘন্টা সময় লেগেছে।
তিনি বলেন, ছোটবেলায় বাবা-মায়ের সাথে ব্রহ্মপুত্র নদে স্নান করতে আসতাম। বয়স হয়েছে, এবছর নিজের স্ত্রী, সন্তান, নাতী নাতনী সহ পূণ্যতোয়া ব্রহ্মপুত্র নদে স্নান করতে এসেছি। এটি উত্তরাঞ্চলের সবথেকে বড় স্নানোৎসব। ব্রহ্মপুত্র নদে স্নান করলে সকল ধরণের পাপমোচন হয়। পাপমোচনের আশায় এতোদূর থেকে কষ্ট করে এসেছি।
মাধবী লতা(৩৫) পিকাপ ভ্যানে করে স্বামী ও শ্বাশুড়িসহ লালমনিরহাট জেলার কালিগঞ্জ উপজেলা থেকে এসেছেন। বিকেলে কালিগঞ্জ থেকে রিজার্ভ পিকাপ ভ্যানে রওনা দিলেও চিলমারী পৌচ্ছান রাত ১২টার পর।
তিনি জানান, স্বামীর বাতাসার দোকান। ব্রহ্মপুত্র নদে অষ্টমীর স্নান উপলক্ষে লক্ষ লক্ষ পূণ্যার্থীর ঢল নামে। স্বামী একাই দোকানের ভিড় সামলাতে পারে না। তাই শ্বাশুড়িসহ এসেছি। ব্রহ্মপুত্র নদে স্নান করবো আর স্বামীর ব্যবসায় একটু সহযোগিতা করবো। রথ দেখা কলা বেচা একসাথেই হবে।
ঐতিহ্যবাহী চিলমারী ব্রহ্মপুত্র নদে মহাষ্টমীর স্নান মেলা উদযাপন কমিটি ও পূজা কমিটির সদস্য শ্রী শ্যামল কুমার বর্মণ বলেন, অষ্টমীর স্নান সনাতন ধর্মালম্বীদের হলেও এখন এটি চিলমারী উপজেলাবাসীর ঐতিহ্যের প্রতীক হয়ে উঠেছে। পাশ্ববর্তী ভারত থেকেও কিছু পূণ্যার্থী এসেছে। স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ,আনসার বাহিনী ও জনপ্রতিনিধি সহ স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন পূণ্যার্থীদের নানা ভাবে সহযোগিতা করছে। এবারে শ্রী বিষু চন্দ্র বর্মণকে আহ্বায়ক করে ৫৬ সদস্যের স্নানাৎসব কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এবারে প্রায় দুই লাখ পূণ্যার্থী ব্রহ্মপুত্র স্নানে এসেছেন এবং ২০০ জনের অধিক ব্রাহ্মণ ঠাকুর স্নানাৎসবে পূজা অর্চনা করেন বলেও তিনি জানান।
চিলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিনহাজুল ইসলাম বলেন, চিলমারীর ব্রহ্মপুত্র নদে অষ্টমীর স্নান উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে লোকজন আসে। তাই আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চিলমারীর বিভিন্ন জায়গায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোড়দার করেছি। ব্রহ্মপুত্র তীরে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট, ডুবুরী দল এবং পুলিশ, আনসার বাহিনীর সদস্য সার্বক্ষনিক দায়িত্ব পালন করেছে। কোথাও কোন অসুবিধা হয়নি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।