লাইফস্টাইল ডেস্ক : ব্যক্তিগত জীবনে নানা সমস্যা নিয়ে পেরেশানিতে থাকে মানুষ। এমন কথা আছে যা বন্ধুমহল বা স্বজনদের বলা যায় না। কিন্তু যন্ত্রণাদায়ক এসব সমস্যা তো আর পুষে রাখা যায় না। ক্রমেই তা মনোরোগ হয়ে দেখা দিতে পারে।
তখন একমাত্র ভরসার স্থান হয়ে ওঠেন কোনো বিশেষজ্ঞ। এখানে সাংসারিক জীবনে সমস্যা নিয়ে লিখেছেন এক ভুক্তভোগী। তার সমাধান দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ। একই সমস্যায় হয়তো অনেকই ভুগছেন। তাদের জন্যেই বিশেষজ্ঞের এই পরামর্শ।
প্রশ্ন : আমি গৃহিনী। আমার বিয়ে হয়েছে ৫ বছর। মধ্যবিত্ত পরিবার আমাদের। যেহেতু আমি উপার্জন করি না, তাই আমার স্বামী মনে করেন যে আমার কোনো মূল্য নেই এই সংসারে। আমি অপ্রয়োজনীয়। সে আমাকে বেশ কয়েকবারই বলেছে যে, আমাকে দিয়ে বাড়ির কয়েকটি কাজ ছাড়া আর কোনো উপকার নেই। আমি অনেকবার বোঝাতে চেয়েছি যে, আমি বাচ্চাদের দেখাশোন করি এবং গোটা সংসার সামলাই। কিন্তু কোনো ব্যাখ্যাই তার মানসিকতা বদলাতে পারেনি। এখন আমি কি করতে পারি?
বিশেষজ্ঞ : প্রতিদিন নিজেকে এমন ‘অপ্রয়োজনীয়’ অবস্থায় দেখা যে কতটা যন্ত্রণাদায়ক তা বলা মতো নয়। আপনাকে ‘অকাজের’ বলে তুলে ধরা হয়েছে। অথচ আপনি যেভাবে সংসার দেখছের তার জন্যে প্রশংসা ও সাধুবাদ পাওয়ার কথা। আত্মবিশ্বাস ও আত্মসচেতনতা নষ্টের জন্যে এমন আচরণ যথেষ্ট। আসলে স্বামী এমন হলে যেকোনো নারীর সংসার জীবনটাই নষ্ট হতে পারে।
স্বামীর আচার-আচরণ আর চিন্তাধারা বুঝতে সমস্যাগুলোর প্রতি কৌশলি হতে হবে। আসলে পরিবারব্যবস্থা গড়ে উঠেছে লিঙ্গভিত্তিক পদ অনুযায়ী। বয়স্ক পুরুষ সেখানকার সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি। পাশাপাশি উপার্জনের ভিত্তিতেই ক্ষমতাধর সদস্য নির্বাচিত হয়। তারাই সবকিছুতে শেষ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন।
কিন্তু লিঙ্গভিত্তিক ভূমিকাগুলো মূল্যায়নের ক্ষেত্রে অসম অবস্থা বিরাজ করে। নারীদের সংসার সামলানোর তীব্র কষ্টকে বিবেচনা করাই হয় না। ছোটকাল থেকেই আসলে নারী-পুরুষের এই পার্থক্য তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। তারই প্রভাব এগুলো। পুরুষরা উপার্জন করবে আর নারীরা সংসার সামলাবে। এমন নিয়মই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, অর্থনৈতিক মূল্যমানে উপার্জনকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়। নারীর কাজের কোনো মূল্যমান বিচার করা হয় না। অথচ এর পেছে নারীর অনেক শ্রম ব্যয় হয়। আবার আধুনিক জীবন উপার্জনকারীর কাঁধে আরো গুরুদায়িত্ব চাপিয়ে দিয়েছে।
যদি আপনার স্বামী কর্মক্ষেত্রে কর্মজীবী নারীদের দেখে প্রভাবিত হয়ে থাকেন, তাহলে তিনি ভাবতে পারেন যে, এই দায় কেন নারীদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়নি? কেন তার স্ত্রী উপার্জন করেন না? তাই তিনি সংসারে কেবল তারই অবদান দেখতে পান, আপনার কার্যক্রমকে মূল্যহীন মনে করছেন।
কিন্তু এ বিষয়ে নতুন উদ্যমে কাজ করতে পারেন আপনি। সংসারে আপনি স্বামীর কাপড় ধুচ্ছেন এবং এতে লন্ড্রির বড় খরচ বাঁচছে। আপনি হয়তো বাড়ির উঠোনে বা বারান্দায় এটা-সেটা চাষ করে টাটকা খাবারের ব্যবস্থা করছেন। পরিবারের পুষ্টির অভাব পূরণ হচ্ছে। বাচ্চাদের আদর্শ মানুষ করে গড়ে তোলার শিক্ষা দিচ্ছেন। এসব কাজের মূল্যমান স্বামীকে বোঝাতে পারেন। আপনার কাজ ও শ্রমের সঙ্গে যে অর্থনীতি জড়িয়ে রয়েছে তা নিজেকেও বুঝতে হবে এবং স্বামীকেও বোঝাতে হবে। আসলে এর জন্যে দরকার স্বাস্থ্যকর আলোচনা। আবার এমনও হতে পারে যে, সুযোগ পেলে আপনিও তার সঙ্গে কথা বলে চাকরি শুরু করতে পারেন। কিন্তু সংসার সামলাতে আপনার যে ভূমিকা তা স্বামীকে স্পষ্টভাবেই বোঝাতে হবে।
সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।