লাইফস্টাইল ডেস্ক: রান্নাঘরে থাকা শতাব্দী প্রাচীন দুই পণ্য ঘি ও মাখন। এই দুটিই খাদ্য হিসেবে ভারতবর্ষের মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয়। কিন্তু, ঘি মাখনের মধ্যে কোনটা বেশি স্বাস্থ্যকর, তা নিয়ে বিতর্ক চিরকালীন। তবে, চলুন আজ জেনে নেওয়া যাক এই দ্বন্দ বা বিতর্কের জয়ী আসলে কে। মাখন না ঘি?
ঘি ভারত ও মধ্য প্রাচ্যের রান্না, বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং ঔষধগুলিতে ব্যবহৃত একটি সাধারণ পণ্য। অন্যদিকে, মাখন হল দুধ ও ক্রিম দ্বারা প্রস্তুত একটি সাধারন দুগ্ধজাত পণ্য। অনেকেই ঘি-কে সুপারফুড হিসেবে বিবেচনা করে। কারণ, এতে ভাল ফ্যাট থাকে যা, শরীর ও ত্বকের জন্য খুবই উপকারি। কিন্তু, মাখনে ফ্যাট ও ভিটামিনের পরিমান কম থাকে বলে এতে ক্যালোরি কম থাকে। আসুন উভয়ের সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
ঘি এবং মাখনের মধ্যে পার্থক্য
বেশ কয়েকটি দিকের উপর ভিত্তি করে ঘি এবং মাখনের পার্থক্য করা হয়েছে। এখানে কয়েকটি কারণ রয়েছে যা, আপনাকে দুটোর মধ্যে পার্থক্য বুঝতে এবং আপনার স্বাস্থ্যের জন্য কোনটি সেরা তা জানাতে সহায়তা করবে।
১) পুষ্টির মান
প্রতি ১০০ গ্রাম ঘি-তে ০.২৪ গ্রাম জল এবং ৮৭৬ কিলো ক্যালোরি শক্তি থাকে। এটিতে ০.২৮ গ্রাম প্রোটিন, ৪ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৩ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ২২.৩ মিলিগ্রাম কোলিন, ৮৪০ মাইক্রো গ্রাম(এমসিজি) ভিটামিন-এ, ৮২৪ মাইক্রো গ্রাম রেটিনল(ভিটামিন-এ১), ২.৮ মিলিগ্রাম ভিটামিন-ই, ৮.৬ মাইক্রো গ্রাম ভিটামিন-কে, ১৯৩ মাইক্রো গ্রাম ক্যারোটিন(বিটা)সাথে রয়েছে ভিটামিন-বি ১২, ভিটামিন-বি৬ এবং ভিটামিন-বি৩। ঘি-এর গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল ফ্যাটি অ্যাসিড যা শরীরের বিপাক ক্রিয়াকে উন্নত করতে সহায়তা করে।
অন্যদিকে, প্রতি ১০০ গ্রাম মাখনে ১৬.১৭ গ্রাম জল এবং ৭১৭ কিলো ক্যালোরি শক্তি সহ ০.৮৫ গ্রাম প্রোটিন, ২৪ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ২৪ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ৬৮৪ মাইক্রো গ্রাম ভিটামিন-এ, ৬৭১ মাইক্রো গ্রাম রেটিনল, ১৫৮ মাইক্রো গ্রাম ক্যারোটিন(বিটা) রয়েছে। এগুলির সঙ্গে কিছু পরিমাণ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে
ঘি-এর স্বাস্থ্যকর উপকারিতা
১) ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
ঘি-তে ভিটামিন-ই রয়েছে। এটি অন্যতম শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট যা, দেহে জারণ চাপ কমাতে সহায়তা করে এবং ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে।
২) ল্যাকটোজ কম
একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ঘি-তে অনেক কম পরিমাণে ল্যাকটোজ রয়েছে। কারণ, ঘি এমনভাবে প্রস্তুত করা হয় যাতে দুধের অংশটি তার থেকে আলাদা হয়ে যায় অর্থাৎ, দুধে থাকা ল্যাকটোজ বেরিয়ে যায়। ফলে, ল্যাকটোজে অ্যালার্জি রয়েছে এমন ব্যক্তিদের জন্য এটি অত্যন্ত উপকারি।
৩) হার্টের জন্য ভাল
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের সমীক্ষা অনুসারে, ঘি এর অল্প ব্যবহারই (৭ শতাংশ এর কম) হৃদরোগজনিত সমস্যা প্রতিরোধ করতে সহায়তা করতে পারে। গবেষণায় আরও বলা হয়েছে যে, ১০ শতাংশ পর্যন্ত ডায়েটরি ঘি কোলেস্টেরল এবং লাইপো-প্রোটিনের মাত্রা হ্রাস করতে সহায়তা করে।
৪) হাড়ের গঠনে
ঘি-য়ে থাকা ভিটামিন-কে ক্যালসিয়ামের সঙ্গে মিলে হাড়ের স্বাস্থ্যকে ঠিক রাখতে এবং হাড়ের গঠনে সহায়তা করে।
মাখনের স্বাস্থ্যকর উপকারিতা
১) পরিপাক ক্রিয়া উন্নতি করে
বাটারে গ্লাইকোস-ফিংগোলিপিডস নামে একটি বিশেষ ধরণের ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে যা, ব্যাকটিরিয়া সংক্রমণ এবং অন্যান্য বিভিন্ন অসুবিধাগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করে পরিপাক ক্রিয়াকে ঠিক রাখতে সহায়তা করে।
২) থাইরয়েড থেকে রক্ষা করে
শরীরে ভিটামিন-এ এর অভাবজনিত কারণে অনেকেই থাইরয়েডের সমস্যার মুখোমুখি হন। মাখন ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ হওয়ায় তা থাইরয়েড গ্রন্থি দ্বারা নিঃসৃত হরমোনগুলির সঠিক কার্যকারিতা এবং নিঃসরণে সহায়তা করে।
৩) আর্থ্রাইটিস প্রতিরোধ করে
বাটারে ওলজেন ফ্যাক্টর নামে একটি বিশেষ যৌগ রয়েছে, যা অ্যান্টি-স্টিফনেস ফ্যাক্টর হিসেবেও পরিচিত। এটি বাত এবং স্পাইনাল গ্রন্থির ক্যালসিকিফিকেশন থেকে রক্ষা করে। তথ্যসূত্র: বোল্ড স্কাই।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।