জুমবাংলা ডেস্ক : চায়ের আড্ডা থেকে শুরু করে মাঠের আড্ডা এমনকি সামাজিক যোগাযোগেরমাধ্যমেও এখন পেঁয়াজের দাম নিয়ে চলছে আলোচনা, ট্রল ও ঠাট্টা মশকরা। তবে নিম্ন আয়ের সাধারণ ক্রেতারা বেশ বিপাকেই পড়েছেন। চাল, ডাল, মাংস সব কিছুকেই এখন ছাড়িয়ে গেছে পেঁয়াজ। অনেকে পেঁয়াজ কিনতে এসে নিরাশ হয়ে খালি হাতেই বাড়ি ফিরছেন। কেউ কেউ পেঁয়াজ খাওয়া বাদ দেয়ারও চেষ্টা করছেন।
শনিবার দুপুরে পঞ্চগড় কাঁচা বাজারে গিয়ে দেখা যায় পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের ঘরে তেমন পেঁয়াজ নেই। নেই তেমন ক্রেতাও। গত দুই দিনে পেঁয়াজের দাম ২০০ টাকা কেজি থেকে ২৪০ টাকায় উঠেছে। গ্রামের বাজারে তা গিয়ে ঠেকেছে ২৬০ টাকায়। দাম বাড়ায় ক্রেতাদেরও তেমন চাহিদা নেই পেঁয়াজে। অনেকেই আগে কেজি ধরে পেঁয়াজ কিনলেও এখন তারা আড়াইশ গ্রামের বেশি পেঁয়াজ কিনছেন না। পাইকারী বাজার থেকে খুচরা বিক্রেতারা দেশি পেঁয়াজ ২৩০ টাকায় এবং মিয়ানমার থেকে আসা পেঁয়াজ ২২০ টাকায় কিনছেন। খুচরা বিক্রেতারা দেশি পেঁয়াজ ২৪০ টাকায় এবং মায়ানমারের পেঁয়াজ ২৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। পঞ্চগড়ের ইসলামবাগ এলাকার শরিফুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা বেছে বেছে ৫টি মাঝারি ধরণের পেঁয়াজ তুলে দিলেন পরিমাপক যন্ত্রে। ওজন হলো দেড়শ গ্রাম। বিক্রেতা ওই পাঁচ পেঁয়াজের দাম হাকালেন ৩৬ টাকা। বেচারা ক্রেতা ৩৫ টাকা দিয়ে পেঁয়াজগুলো ব্যাগে ভরে বাড়ি রওনা হলেন।
বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা রাজ্জাকুল ইসলাম বলেন, আগে ৩০ টাকায় এক কেজি পেঁয়াজ পাওয়া যেতো। এখন অনেক দোকানদার ৩০ টাকার কম পরিমাণের পেঁয়াজ বিক্রিই করছেন না। আমাদের অল্প আয়ের মানুষের খুব কষ্ট হয়ে গেছে। ভাবত অবাক লাগে ২৬০ টাকায় ১০ কেজি চাল যাওয়া যায়, আধা কেজি মাংস পাওয়া যায়, আধা মণ ধান পাওয়া যায় অথচ ২৪০ থেকে ২৬০ টাকায় এখন ১ কেজি পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। সরকার দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আমরা চরম দুর্ভোগে পড়বো।
আকিমুল ইসলাম নামে এক বৃদ্ধ জানান, গ্রামের বাজারে পেঁয়াজের দাম ২৬০ টাকা কেজি। বাড়িতে ছোট্ট একটি অনুষ্ঠান আছে তাই পঞ্চগড় বাজারে আসছি। ২৪০ টাকায় ২ কেজি পেঁয়াজ কিনলাম।
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ এলাকার কৃষক মুসলিম উদ্দিন জানান, যখন আমরা বেশি পেঁয়াজ করি তখন দাম কমে যায় আর লোকসান গুণতে হয়। এবার অল্প পরিমাণে পেঁয়াজ করেছি। এখন বাজারে দাম আকাশ ছোঁয়া।
পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, টেকনাফেই পেঁয়াজ ২১০ টাকা কেজি দরে কিনতে হচ্ছে। আমরা এখানে দেশি পেঁয়াজ ২৩০ টাকা এবং মায়ানমারের পেঁয়াজ ২২০ টাকা কেজি দরে পাইকারী বিক্রি করছি। দাম হওয়ায় হঠাৎ দাম কমে যেতে পারে এই আশঙ্কায় কেউ বেশি পরিমাণে পেঁয়াজ কিনছে না। যতদিন আমাদের নিজস্ব পেঁয়াজ উঠবে না ততদিন দাম কমবে না বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
কফিল উদ্দিন নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, আগে আমরা প্রতিদিন ৭০ বস্তা থেকে দেড়শ বস্তা পর্যন্ত পেঁয়াজ বিক্রি করতাম। এখন ১৫ থেকে ২০ বস্তাও বিক্রি হয় না। সরাসরি পেঁয়াজ কিনলে লোকসানের আশঙ্কা বেশি। তাই আমরা বেপারিদের সাথে কমিশনেই ব্যবসা করছি।
পেঁয়াজের খুচরা ব্যবসায়ী হারুন অর রশিদ বলেন, পেঁয়াজের ক্রেতা নাই বললেই চলে। যারা কিনছেন তারাও খুব অল্প পরিমাণে কিনছেন। অনেকেই দাম শুনে ফিরে যাচ্ছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু হানিফ জানান, পঞ্চগড়ে যেসব এলাকার চাষীরা পেঁয়াজ চাষ করেছেন তারা আগামী ২০ থেকে ৩০ দিনের মধ্যেই তুলতে পারবেন। এই পেঁয়াজ বাজারে আসলে পেঁয়াজের দাম কমে যাবে।
রেলমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, আমরা পেঁয়াজ চাষ কমিয়ে দিয়েছি তাই আজ আমাদের বেশি দামে পেঁয়াজ খেতে হচ্ছে। আমরা আগের মতো পেঁয়াজ চাষ করলে এই ঘাটতি থাকতো না। অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি আমাদের পেঁয়াজও চাষ করতে হবে। তাহলে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।