নিজস্ব প্রতিবেদক : সহযোগী অধ্যাপক থেকে পদোন্নতি পেয়ে অধ্যাপক হয়েছেন দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ড. মো. আতিকুল ইসলাম।
গত ৮ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৬ তম রিজেন্ট বোর্ডের সভায় তাকে এ পদোন্নতি দেওয়া হয়।
পদোন্নতি পাওয়ায় দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার কৃতি সন্তান ড. আতিক জুমবাংলাকে বলেন, ‘মহান আল্লাহ পাকের দরবারে হাজারো শুকরিয়া যে আমাকে অধ্যাপক হওয়ার যোগ্যতা অর্জনের তৌফিক দান করেছেন। আমার সকল শিক্ষাগুরু, পরিবারবর্গ, বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী ও প্রাণপ্রিয় শিক্ষার্থীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা যারা আমাকে সবসময় সহযোগিতা ও মনোবল দিয়েছেন।’
এই দীর্ঘ পথ অতিক্রম করার জন্য সহধর্মিনী ইয়াছমিন আক্তারের প্রতি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তিনি।
তার এই অর্জন যেন দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণকর হয় সেজন্য সবার নিকট দোয়া চেয়েছেন ড. আতিক।
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার উত্তর কৃষ্ণপুর গ্রামের মো. সিরাজুল ইসলাম ও মোছা. নাসিমা খাতুন দম্পতির প্রথম সন্তান অধ্যাপক ড. আতিক একজন গবেষক ও সমাজসেবক। এলাকায় তিনি রুবেল নামে পরিচিত।
ড. আতিক ১৯৯৫ সালে রেজিয়া খাতুন ইনস্টিটিউট থেকে প্রাথমিক শিক্ষাজীবন শেষে ২০০০ সালে সুজাপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি ও বীর উত্তম শহীদ মাহবুব সেনানিবাস স্কুল এন্ড কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে এইচএসসি পাস করেন। ২০০৮ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যায়ের রসায়ন বিভাগ থেকে প্রথম বিভাগে বিএসসি অনার্স (রসায়ন) এবং ২০১০ সালে প্রথম বিভাগে এম এস (জৈব রসায়ন) পাশ করেন।
বর্ণাঢ্য শিক্ষাজীবন শেষ করে ২০১০ সালে প্রথমে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানী লিমিটেড এ সহকারী রসায়নবিদ হিসেবে যোগদান করেন। পরে ২০১২ সালে তিনি হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি রসায়ন বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদানের মধ্য দিয়ে শিক্ষকতা পেশায় পদচারণ করেন। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন।
২০১৮ সালে উচ্চ শিক্ষার জন্য দক্ষিণ কোরিয়া’র চুছান বিশ্ববিদ্যালয়ে পি.এইচডি’র উদ্দেশ্যে গমন করেন এবং আগষ্ট ২০২১ এ কৃতিত্বের সাথে পি.এইচডি ডিগ্রি সম্পন্ন করে দেশে এসে পদোন্নতি নিয়ে সহযোগী অধ্যাপক পদে পুনরায় রসায়ন বিভাগে যোগদান করেন। একই সাথে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডরমিটরি-২ হলের সহকারী হল সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
ড. আতিক বাংলাদেশের পাঁচ ধরনের পান পাতার কেমিক্যাল ও বায়োকেমিক্যাল স্টাডিজ এর উপর গবেষণা করে পি.এইচ.ডি ডিগ্রী অর্জন করেন। বিশেষ কোন রসায়নিক পদার্থের (হাইড্রক্সিকেভিকল, ইউজিনল, বিটা-ক্যারোফিলিন, গামা-মিউরোলিন, ভালেনসিন, ইত্যাদি) জন্য পান পাতা ঔষধিগুন সম্পন্ন তা বিভিন্ন আধুনিক পদ্ধতিতে তিনি পরিমাপ করেন।
তিনি কয়লা, পানি, বায়ু দূষন, মধু ও দুধের ভেজাল নির্ণয়ের পদ্ধতি, এসেনশিয়াল অয়েল, পান পাতা, পেরিলা পাতা সহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর গবেষণা করে দেশি ও বিদেশি খ্যাতনামা জার্নালে ৩০ টি গবেষণা পত্র প্রকাশ করেন এবং সেই সাথে দেশি-বিদেশি বিজ্ঞান বিষয়ক কনফারেন্সে ৪০ টির অধিক গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন।
বর্তমানে দেশি ও বিদেশি সংস্থার অর্থায়নে মধু ও দুধের ভেজাল নির্ণয়ের জন্য সহজ পদ্ধতি উদ্ভাবন, এসেনসিয়াল ওয়েলের নিষ্কাশন পদ্ধতি, দিনাজপুর শহরের বায়ু দূষন এবং বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আশে পাশে মাটি ও খাদ্যের তেজস্ক্রিয় পদার্থের পরিমাণ নির্ণয় নিয়ে কাজ করছেন।
দক্ষ গ্রাজুয়েট তৈরি সহ বেশকিছু পরিকল্পনা নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলাম। গবেষণা কার্যক্রম নিয়ে তিনি জানান, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক জিনিস দিয়ে গুণগত এসেনশিয়াল অয়েল তৈরি করা সম্ভব যা রপ্তানি যোগ্য হবে এবং দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে সাহায্য করবে। এসেনসিয়াল অয়েল থেকে জৈব কীটনাশক তৈরি করা যায়, যার প্রয়োগে খাদ্যের গুণগত মান বাড়াবে। এছাড়াও সহজ স্পেকট্রোস্কোপিক এনালাইটিক্যাল পদ্ধতি উদ্ভাবন করার মাধ্যমে আমরা কোন কিছুর গুণগত মান দ্রুত পরীক্ষা করতে পারি।
ড. আতিক ২০১১ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী ইয়াছমিন আক্তারের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বর্তমানে তাদের এক কন্যা (নাফিয়া ইসলাম) ও এক পুত্র (ইয়াফি ইসলাম) সন্তান রয়েছে।
ওকালতি পড়ে কৃষি উদ্যোক্তা : মাসুদের ‘হালাল আয়’ কোটি টাকারও বেশি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।