আদনান সৈয়দ : তাকে আমি ডাকতাম মির্জা ভাই বলে। আমার সিনিয়র অথাব জুনিয়র সেই খবর আমি জানি না। সম্পর্কটা শুরু হয়েছিল ঠিক এমন সম্বোধন থেকেই। মির্জা ভাই আমার খুব ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু ছিলেন। তবে বন্ধু শব্দটায় যেমন গলাগলির একটা সম্পর্ক বুঝায় তাঁর সাথে আমার সম্পর্কটা ঠিক তেমন ছিল না। তাঁর সঙ্গে ছিল আমার দীর্ঘদিনের ভালো এক পেশাদারী, আন্তরিক আবার আত্মিক সম্পর্ক।
হায়! এই ‘ছিল’ শব্দটা লিখতেও বুকটা আবার কেঁপে উঠলো। সম্ভবত ২০০৯ সাল থেকে মির্জা ভাইয়ের সঙ্গে আমার পরিচয়। অসাধারণ, অমায়িক, চৌকুস আর ভদ্র মানুষ বলতে যা বোঝায় মির্জা ভাই ছিলেন ঠিক তাই।
আমি তাকে সম্বধোন করতাম ‘মির্জা ভাই’ আর মির্জা ভাই আমাকে বলতেন ‘বস’। তিনি কেন আমাকে বস বলতেন জানি না। তবে তিনি অনেককেই ‘বস’ বলে সম্বধোন করতেন। এটাই ছিল তার স্টাইল।
আহা! কত স্মৃতি তাকে নিয়ে? কোন স্মৃতিটা ছোব আর কোনটা ছোব না?
আমি তখন দেলওয়ারে উইলমিংটনে থাকি। আইটি জব করি। কিন্তু মনটা সারাক্ষণ পরে থাকে নিউইয়র্কের দিকে। প্রতি শুক্রবার সপ্তাহান্তে আমি দেলওয়ার থেকে নিউইয়র্ক চলে যেতাম। তখন মির্জা থাকতো ভার্জিনিয়াতে অথবা ওয়াশিংটন ডিসিতে। ঠিক মনে নেই। সেও নিউইয়র্ক যেত। কারণ নিউইয়র্কে তার এবং আমাদের আরেক বন্ধু আকতার ভাইয়ের একটা আইটি স্কুল ছিল। আমাকে দেলওয়ার থেকে মাঝপথে তারা প্রায়ই তুলে নিত। গাড়িতে উঠলেই মির্জা ভাই বলতো, ‘বস, আপনি ড্রাইভ করেন।’
তারপর দেলওয়ার থেকে নিউইয়র্ক এর সেই দীর্ঘ তিন ঘন্টার পথ। আর সেই পথ কত দ্রুত শেষ হয়ে যেত! সেই যাত্রাপথে থাকতো কত আড্ডা! কত গল্প! কত ভবিষ্যত পরিকল্পনা!
আমি বাংলাদেশে আসার সপ্তাহখানেক আগের কথা। হঠাৎ মির্জা ভাইয়ের ফোন।
‘বস, একটা অনলাইন পত্রিকা করতে চাই। আপনার হেলপ দরকার।’
আমি বললাম, ‘আপনি পত্রিকা বেড় করবেন আর আমি থাকবো না? দেশ থেকে ঘুরে আসি তারপর আপনার সাথে বসবো এই নিয়ে।’
সেই ছিল শেষ কথা তার সাথে। আর কী বসা হল মির্জা?
এই কিছুক্ষণ আগে বাংলাদেশ থেকে খবর পেলাম মির্জা ভাই আর নেই। করোনায় তার প্রাণ দিতে হয়েছে। গত কিছুদিন ধরেই সে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এলমহার্স্ট হাসপাতালে ছিল। যদিও সে খবর আমার জানা ছিল। আমার আরেক বন্ধু পাভেল চৌধুরী নিউইয়র্ক থেকে জানিয়েছিল মির্জা ভাই আগের থেকে একটু ভালো। শুনে মনটা কিছুটা হলেও স্বস্থি পেয়েছিল। আজ শুনলাম সে আর নেই। একটা মানুষ এই পৃথিবী থেকে এত দ্রুত ‘নেই’ হয়ে যেতে পারে তা আমি ভাবতেও পারছি না। যে লোকটা দু সপ্তাহ আগেও অফিস করেছে বাচ্চাদের নিয়ে খেলাধুলা করেছে। চোখে তার কতই স্বপ্ন ছিল! শুনলাম ভাবিও নাকি করোনায়া আক্রান্ত।’
হায় নিষ্ঠুর নিয়তি! তার ফুটফুটে দুটো সন্তান আছে। খোদা কী সে খবরটা জানে? পৃথিবী এত কঠিন কেন? এই কি আমাদের সাধের ঠুনকো ভালোবাসার জীবন?
মির্জা ভাই, আপনাকে বিদায় জানাই কীভাবে? ‘বস, এত তাড়াতাড়ি আমাদের কাছ থেকে আপনার চলে যেতেই হল?’
কী অদ্ভুত! এখন আপনার আত্মার শান্তি কামনা করে এই লেখা লিখতে হচ্ছে আমাকে! হায়; পৃথিবীটা কত নিষ্ঠুর!
আপনার ফুটফুটে দুটো সন্তানের দিকে আমি তাকাতে পারছি না। হ্যা, এখন ভাবিই তাদের একমাত্র ভরসা। প্রাণপণে দোয়া করছি ভাবি যেন খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠেন।
কী দুঃসময়! বিশাল এক মৃত্যুর মিছিলে আমরা হাটছি। এর শেষ কোথায়? কেউ জানি না।
সবাই আমার এই বন্ধুটির আত্মার শান্তির জন্যে দোওয়া করবেন।
(লেখাটি ফেসবুক থেকে নেওয়া)
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।