জুমবাংলা ডেস্ক : রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবির মিলনকে ওএসডি (অন স্পেশাল ডিউটি) করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (০৬ আগস্ট) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে তাকে (অতিরিক্ত সচিব) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বদলির আদেশ দেয়া হয়েছে।
মাহবুব কবির মিলনকে ওএসডি করার পর সামাজিকমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা দেখা যাচ্ছে। হাজার হাজার মানুষ তাকে ওএসডির প্রতিবাদ করছে।
মাহবুব কবির মিলন রেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর রেলে পরিবর্তন আনার ব্যাপক চেষ্টা চালিয়েছেন। ১৩০ বছরের রেলে যে পরিবর্তন আসেনি এমন অনেক কাজ করেছেন তিনি। এসব বিষয় নিয়ে রেলের কর্মকর্তারাও তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। এমনকি এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে তার হাতাহাতি হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার তাকে ওএসডি করার পর এমন একটি ঘটনাসহ রেলে মাহবুব কবিরের বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে সামাজিকমাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়েছেন সাংবাদিক নাজমুস সালেহী। সালেহী একটি বেসরকারি টেলিভিশনে ‘রেল বিটে’ কাজ করেন।
নাজমুস সালেহিনের স্ট্যাটাসটি পাঠকের জন্য হুবহু তুলে ধরা হল;
‘এদেশের মানুষের কাছে এক পরিচিত মুখ মাহবুব কবির মিলন। নিরাপদ খাদ্য থেকে তার দেশ প্রেমের নিদর্শন বাংলার মানুষ দেখেছে। রাতদিন নিরলস পরিশ্রম করে খাদ্য নিরাপদ করতে লড়াই করে গেছেন। সেই সময় জীবন বাজি রেখে নিয়েছেন যুগান্তকারী সব পদক্ষেপ। তার দুঃসাহসিক সিদ্ধান্ত আর দৃঢ়চেতা মনোভাবের কারণে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে সেখানে। যতটুকুই বা সুফল তার সবটুকুই মাহবুব কবিরের অবদান। তখন উনার সাথে আমার খুব বেশী পরিচয় নেই। পত্রিকায় তার খবর পড়তাম আর স্বপ্ন দেখতাম, নিশ্চয় আমার দেশও একদিন ঘুরে দাঁড়াবে। মিলনরা এই ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখাচ্ছেন, উনারাই গড়বেন দুর্নীতি মুক্ত আগামীর বাংলাদেশ। ফেসবুকে তিনি বিভিন্ন অনিয়ম আর দুর্নীতি নিয়ে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। অনিয়মের বিরুদ্ধে উন্মুক্ত লেখালেখি করেন। জনমত যাচাই করে শুরু করেন কাজ। অল্প দিনেই ফেসবুকে হু হু করে বাড়তে থাকে তার ফ্যান ফলোয়ার। যে কোনো অনিয়ম নিয়ে কেউ একটা কিছু পোস্ট দিলেই তা সমাধানে ঝাপিয়ে পড়েন তিনি। হয়ে ওঠেন আস্থার প্রতীক। সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে এত জনপ্রিয় আর কেউ আছেন বলে জানা নাই। উনি যেন অল্প দিনেই হিরো হয়ে ওঠেন। হাজার হাজার মানুষ তার শুভাকাঙ্ক্ষী হয়ে যায়। তার গৃহীত পদক্ষেপ আর সাহসী কাজ কর্মে সহজেই মন জয় করে নেন সবার। ছোট বড় সবাই যে কোনো অনিয়মের কথা প্রাণখুলে বলতে পারতেন। সবার কাছে হয়ে ওঠেন প্রিয় ‘মিলন স্যার’।
তখনও সরাসরি মাহবুব কবির মিলনের সাথে আমার কথা হয়নি। তবে অনলাইনে তার এক্টিভ কাজ কর্ম আর সাহসিকতা দেখে মুগ্ধ হই। চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, তার মতো জনপ্রিয় আমলা আর এই মুহূর্তে একজনও নেই। আমার কথার সাথে দ্বীমত পোষণ কেউ করবে বলে মনে হয় না। গণমাধ্যম কর্মীরা মিলন সম্পর্কে কেউ কোনো অভিযোগ তুলতে পারবে বলে মনে হয় না। মিলন খুবই স্বচ্ছ সৎ ও দেশ প্রেমিক একজন কর্মকর্তা হিসেবে ইতোমধ্যেই মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন।
লোকটার সাথে কথা বলার ইচ্ছা বহুদিনের। কিন্তু হয়ে উঠছিল না। আমার রিপোর্টিংয়ের আগ্রহ বরাবরই রেলপথ মন্ত্রণালয়। নিউজের কাজে মাঝে মধ্যেই রেলভবনে যেতে হয়। একদিন রেল ভবনে গিয়ে দেখি মাহবুব কবির মিলন, লোভ সামলাতে পারলাম না। সালাম দিয়ে আমার পরিচয় দিয়ে কথা বললাম। দেখলাম খুবই বাস্তববাদী ভদ্র এক মানুষ। কথায় ব্যবহারে নেই আমলাসুলভ আচরন। এক ধরনের সরলতা তাকে জড়িয়ে রাখে। নিরঅহংকার সাদামাটা একটা মানুষ। তবে কথায় তেজ আছে, আছে দেশপ্রেম। শুনালেন তার পরিকল্পনার কথা।
জানতে পারলাম রেলের কেউ না হয়েও গত ৫/৬ বছর ধরে রেল উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। কখনও যাত্রীদের পক্ষ থেকে ‘যাত্রীবান্ধব’ রেলের জন্য সব অনিয়ম তুলে ধরছেন। আবার কখনও সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে দিচ্ছেন পরিকল্পনা। এভাবে তার নিরলস চেষ্টায় ৫/৬ বছরে রেলের অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়। তিনি রেলের কেউ নন, অথচ শুধু দেশপ্রেমের কারণে রেলের উন্নয়নে বিভিন্ন ফোরামে কথা বলে আসছিলেন। নানা অনিয়ম দুর্নীতি রোধে দিয়ে আসছিলেন পরামর্শ। সেই সময় রেলের অনেক কর্মকর্তা তার উপর বিরক্ত হন। তখনই রেল কর্তারা বিরাগভাজন হোন। এসব কথা প্রথম পরিচয়েই জানালেন তিনি। আমিও ভাবলাম যেহেতু স্যার রেল নিয়ে কাজ করে তার সাথে ভালো সম্পর্কে হলে আমার নিউজে সহায়ক হবে। উনার সাথে অনেক কথা হলো। ভাবলাম এমন একজন লোক যদি রেলে আসে তাইলে কতইনা ভালো হত। উনার সাথে সেই দেখার পর আর দেখা নাই অনেকদিন।
অনেকদিন পর হঠাৎ একদিন পত্রিকায় দেখি রেলের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পাচ্ছেন মাহবুব কবির মিলন। মনটা খুশিতে ভরে উঠলো। ফোনে উনার সাথে কথা হল। বললেন, অনেক দিনের ইচ্ছা রেলপথ মন্ত্রণালয় কাজ করার আল্লাহ আমাকে সেই সুযোগ দিয়েছেন তোমরা পাশে থেকো। আমি বললাম স্যার সবসময় আপনার সাথে আছি। আপনার সব ভালো কাজে পাশে পাবেন।
রেলপথ মন্ত্রণালয় মাহবুব কবিরের আগমনের সবাই যেমন খুশি হয়েছিল, তার চাইতে বেশি খুশি হয়েছিল রেল যাত্রীরা। যারা দীর্ঘদিন সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল, আর আমরা যারা গণমাধ্যমকর্মী তারাও একটু আশার আলো দেখলাম। অনেক বছর ধরে লোকসানে থাকা অনিয়মে প্রতিষ্ঠানটি এবার কিছুটা হয়তো ঘুরে দাঁড়াবে মাহবুব কবির মিলন কে কেন্দ্র করে। স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা হবে। উন্নয়ন ঘটবে রেলের এমন আশা করতে থাকলাম সকল গণমাধ্যম কর্মীরা।
রেলপথ মন্ত্রণালয় যোগদান করে মাহবুব কোবির মিলন নানামুখী উদ্যোগ নিতে শুরু করলেন। প্রথমেই তিনি যাত্রীসেবায় মনোনিবেশ করেন, রেলের বিভিন্ন বিষয়ে তিনি লেখালেখি করার পাশাপাশি কার্যকর ভূমিকা নেন। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় জাতীয় পরিচয় ছাড়া টিকিট নিষিদ্ধ হয়। শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রির চালু হয়। তিনি রেলের ওয়ানস্টপ সার্ভিস সেন্টার চালুর উদ্যোগ নেন। যাত্রীদের কথা শোনার জন্য আলাদা অ্যাপ চালু করেন। ১৩০ বছর ধরে হাতে হাতে দেয়া হত রেলের বেতন মাহবুব কবির ইএফটি প্রবর্তন করেন। হারিয়ে যাওয়া ভূমি উদ্ধারে আত্মনিয়োগ করেন। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার যেকোনো যাত্রীদের পক্ষ থেকে আসা অনিয়মের ব্যাপারে সোচ্চার হয়ে ওঠেন তিনি। এসব করে রেলযাত্রীদের কাছে তিনি একটি আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেন। সবাই তাকে শ্রদ্ধা ও ভালবাসতে শুরু করে। তিনি বিভিন্ন প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে শুরু করেন। রেলের কেনাকাটা নিয়ে ও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করেছিলেন।
রেলের কোনো সামান্যতম ঘটনা হলেও সে বিষয়ে তিনি যাত্রীদেরকে জবাব দেয়ার চেষ্টা করতেন। রেল যাত্রীরা এবং যারা রেল কে ভালবাসেন এমন মানুষজন রেলের যে কোনো অনিয়ম দুর্নীতি খুঁজে পেলেই তার সমাধান চাইতো মাহবুব কবির মিলনের কাছে। এসব কারণে অল্প সময়ের মধ্যেই মাহবুব কোভিদ মিলন রেল কর্মকর্তাদের কাছে বিরাগভাজন হয়ে ওঠেন। প্রকাশ্যে রেল কর্মকর্তারা তার বিরুদ্ধে নানারকম কথা বলতে শুরু করে। তিনি রেলের সিভিল মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্ট এর বিষয়ে খোঁজ-খবর নেয়া শুরু করেছিলেন। ফলে রেল রেল কর্মকর্তাদের অনেকেই তার কাজে অতিষ্ট ছিলেন। অতি অল্প সময়ে রেলের উন্নয়নে নানা পরিকল্পনা ও পদক্ষেপের কারণে সবার কাছে যেমন তিনি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তেমনি রেল মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে তিনি বিরাগভাজন হয়েছেন।
রেলের উন্নয়নে দীর্ঘদিন থেকে চলে আসা নানারকম নিয়ম-নীতির সংস্কারে সোচ্চার ছিলেন মাহবুব কবির মিলন।
তিনি রেলের অভিযোগ বই, ফার্স্ট এইড বক্স, তেল চুরি, লোকমাস্টারদের মাইলেস, লোকশেডের কাজ কর্ম, বিদেশী কেনাকাটা এগুলা নিয়ে তৎপর হন ফলে রেলের ঊর্ধতন কর্মকর্তারা তাকে প্রতিপক্ষ ভাবতে শুরু করেন। যা বললাম এসব তার ফেসবুকে গেলেই দেখতে পাওয়া যায়। তিনি রেলে নিয়ে তার মতামত ও কাজকর্ম সব ফেসবুকে শেয়ার করতেন। তার এসব লেখায় প্রকাশ্যে রেলের কর্মকর্তারা দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন।
মিলন শুধু অল্প সময়ে যাত্রীসেবার কাজ করেননি রেলের দুর্নীতিমুক্ত ও স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা নিরলস কাজ করে যাচ্ছিলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি যেমন সবসময় সোচ্চার ছিলেন ঠিক তেমনিভাবেই কার্যকর একের পর এক পদক্ষেপও নিচ্ছিলেন। তার ওপর বিরাগভাজন হয়ে রেলের অনেক বড় বড় কর্তা কে প্রকাশ্যে নানা রকম বাজে মন্তব্য করতে শুনেছি। মাহবুব কবির মিলনের কাছে শুনেছি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা একজনের সাথে এই সমস্ত বিষয়ে হাতাহাতিও হয়েছে তার।
সর্বশেষ একটি ইঞ্জিন এর রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত কেন্দ্র করে তিনি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করার জন্য প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছিলেন। মন্ত্রী বরাবর লিখিত আবেদনও দিয়েছেন তিনি। সেটিকে কেন্দ্র করে রেল কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না তার সাথে অনেক রেল কর্তার। ইতোমধ্যেই করোনাকালীন কেনাকাটা নিয়ে আরও একটি দুর্নীতি তদন্তে কাজ করছিলেন মাহবুব কবির মিলন। ফলে বুঝায় যাচ্ছিল তিনি রেল নিয়ে সোচ্চার। রেলের দুর্নীতি নিয়ে দুইটি বিষয়ে তদন্ত করার জন্য মন্ত্রী বরাবর লিখিত চিঠি দিয়েছিলেন। একজন মানুষ আসতে না আসতেই তাকে ঘিরে হাজার মানুষ স্বপ্ন দেখতে শুরু করে।
রেলপথ মন্ত্রণালয় দুর্নীতিমুক্ত হবে যাত্রী বন্ধব হবে রেল লোকসানি প্রতিষ্ঠান কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়াবে এমন যখন আশায় বুক বাঁধছে, ঠিক তখনই শুনলাম মাহবুব কবির মিলনকে ওএসডি করা হয়েছে। শুনে আশ্চর্য হয়েছি। কষ্ট পেয়েছি। একটা মানুষ এত সফলভাবে এত লোকের মন জয় করে ভালো কাজ করে আসছিলেন, হঠাৎ করে লোকটিকে কেন থামিয়ে দেয়া হলো? নানাবিধ প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। এটাই কি আমাদের নিয়তি! সততার পুরস্কার কি ওএসডি! কি আজব তাকে ওসডি করার সময় কি কিছুই বিবেচনা করা হয়নি? তার কাজ কাজ কর্মের কি কিছুই খবর নেয়া হয়নি? সত্যিই কি মাহবুব কবির মিলন এই শাস্তি পাওয়ার মত অপরাধ করেছেন? নাকি তিনি কোন ষড়যন্ত্রের শিকার?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার কাছে আকুল আবেদন এখনও সময় আছে আপনি একটু ভেবে দেখবেন। মিলন সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন লক্ষ লক্ষ মানুষ তার শুভাকাঙ্ক্ষী। তিনি এসেছিলেন আশার আলো দেখাতে। তিনি সত্যিই এক দেশপ্রেমিক সৎ মানুষ। রেলপথ মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যেই একটা পরিবর্তন আসতে শুরু করেছিলো। সুবাতাস বইতে শুরু করেছে সবে মাত্র, লোকটি এভাবে সরিয়ে দিলে অনেক কিছুই হবে না। আমার মত অনেকেই বিশ্বাস করে মাহবুব কবির মিলন ষড়যন্ত্রের শিকার। তার মত দেশ প্রেমিক সৎ ও সাহসি পুরুষ খুব দরকার। আর রেলের মত মন্ত্রণালয়ে আরও বেশী দরকার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয় আপনি বিবেচনায় রাখবেন দেশপ্রেম আর স্বচ্ছতা সেই বিশ্বাস আমাদের আছে।’ সূত্র : সময় নিউজ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।