জুমবাংলা ডেস্ক : মধ্যরাতে রাজধানীর বনানীতে বেপরোয়াভাবে প্রাইভেটকার চালিয়ে এক মোটরসাইকেল আরোহীকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক ভিসিপুত্রের বিরুদ্ধে। জানা যায়, অভিযুক্ত ওই তরুণ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) ভিসি প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন আহমেদের ছেলে ফারহান আহমেদ।
গত শুক্রবার মধ্যরাতে বনানী এলাকায় সিগন্যাল অমান্য করে বাইক আরোহীকে চাপা দেন ভিসিপুত্র। এতে বাইকে থাকা নারী আরোহী ছিটকে পড়ে যান।
জানা যায়, ভিসিপুত্র এ কাণ্ড ঘটিয়ে দ্রুত পালিয়ে যান। তবে ওই সময় ঘটনাটি দেখে নিজের মোটরসাইকেলে করে ভিসিপুত্রের গাড়িটি অনুসরণ করছিলেন রিয়াদুল হাসান রিমন নামে এক যুবক।
ভিসিপুত্র দ্রুত গাড়ি চালিয়ে বনানী চেকপোস্ট সিগন্যাল অমান্য করে আবাসিক এলাকায় নিজেদের বাড়িতে ঢুকে যান। পরে তার পিছু পিছু বাড়িটিতে হাজির হন ওই যুবক রিমন। এ সময় ভিসিপুত্রের কাছে তার এমন কাণ্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে রিমনকে হুমকি দেন তিনি।
এক পর্যায়ে ৯৯৯-এ ফোন করে বিষয়টি পুলিশকে জানান রিমন। পরে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। এ সময় ভিসিপুত্র ফারহান ঘটনার বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন।
এদিকে ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী যুবক রিমন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘ভিসিরা কী ভগবান’ এই শিরোনামে একটি স্ট্যাটাস দেন।
তার স্ট্যাটাসটি জুমবাংলাডটকম পাঠকদের জন্য হুবুহু তুলে ধরা হল-
দাম্ভিক কারচালক। অবশ্য তাদের দাম্ভিক না বলে নিষ্ঠুর ও হৃদয়হীন মানব বলা যায়। কিছুদিন ধরে যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির জঘন্য ও ঘৃণ্য আচরণ দেখে আমাদের গোটা সমাজ আঁতকে উঠেছিল। কখনও একজন ভিসির আচরণ এরকম কাম্য নয়। বেশ কিছুদিন ধরে এসব বিষয় নিয়ে কেবলই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। আজ যখন নিজের চোখে এরকম জঘন্য কাজ দেখলাম তখন আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারিনি।
ঘটনাটি রাত ১১টা ২০ মিনিটের সময় বনানীর চেয়ারম্যান বাড়ির মোড়ে। একজন ভদ্র লোক ও ভদ্র মহিলা মোটরসাইকেলে করে হয়তো তারা দু’জন স্বামী-স্ত্রী অথবা আপনজন। বন্ধের দিনে ঘুরতে বের হয়েছে। না হয় কেনাকাটা অথবা মার্কেট করতে। কিছু একটা হবে হয়তো। তাদের মোটরসাইকেলটি চেয়ারম্যানবাড়ির মোড় দিয়ে ভেতরে ডুকতে গেলেই একটি কালো প্রাইভেটকার (ঢাকা মেট্রো-গ-২২-৫৩৩৮) বেপরোয়া গতিতে সিগন্যাল অমান্য করে স্বজোড়ে ধাক্কা মারে এবং দু’জনে মারাত্মক আহত হয়। ঘটনা দেখে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারলাম না। নিজের মোটরসাইকেল দিয়ে গাড়িটি ধরতে পিছু নিলাম।
এদিকে আহতদের ট্রাফিক পুলিশ উদ্ধার করেন। আমি ছুটে চললাম কারটির পিছু পিছু। হঠাৎ ট্রাফিক সিগন্যালে গাড়ি থামল, আমি ভদ্রতার সঙ্গে সালাম দিয়ে গাড়ি থেকে নামতে বললাম। কিন্তু বেপরোয়া চালক কোনো কথা না শোনে উল্টো দিকে গাড়ি আবার দ্রুতগতিতে চালাতে লাগলেন। আবারও পিছু নিলাম। এবার গিয়ে গাড়ি থামালেন বনানীর রোড নং-৯, হাউজ নং-২০-এ।
আমি আবারও সালাম দিয়ে বললাম ভাই, আপনি দু’জন পথচারীকে ধাক্কা দিয়ে কেন ফেলে চলে আসছেন? রাগান্বিত হয়ে আমাকে সে রকম হুমকি-ধমকি দিলেন। তিনি আরও বললেন জানেন আমি কে? আমি বললাম আপনি কে- তা দিয়ে আমি কী করব ভাই। ভিসিপুত্র বলেন- আমার বাবা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি। আমি বললাম আপনি তো ভাই একজন সম্মানিত বাবার সন্তান। কিন্তু আপনি এরকম বেপরোয়া গতিতে ও সিগন্যাল অমান্য করে গাড়ি চালানো কী ঠিক? আপনি বলেন ভাই? এবার বাসা থেকে নেমে আসলেন ভিসি মহোদয়ের স্ত্রী। তিনি এসে তো মস্ত বড় এক লিস্ট শোনালেন। উনার স্বামীর কথা নাকি বনানী থানা এলাকার প্রশাসন চলে। আমি কেন উনার ছেলেকে ফলো করলাম এটা নাকি অন্যায় হয়েছে।
অবস্থার বেগতিক দেখে কল দিলাম জাতীয় সেবা সেন্টার ৯৯৯-এ। তারা দ্রুত ঘটনাটি আমলে নিয়ে বনানী থানার এসআই আশরাফ ভাইকে পাঠালেন এবং তিনি ঘটনাস্থলে এসে তার বিস্তারিত পরিচয় ও ঘটনার সতত্যা নিশ্চিত করেন। পরে উনিও বলেন, শাবিপ্রবির ভিসি মহোদয়ের ছেলে চালক ফারহান। সমস্যা নেই উনি ঘটনাটি দেখভাল করবেন বলে আমাকে আশ্বস্ত করেছেন।
শাবিপ্রবির সম্মানিত ভিসি প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন আহমদ আমাদের সবার শ্রদ্ধেয়। হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীদের উনি মানবিকতা শিক্ষা দেন। কিন্তু আফসোস উনার নিজের ছেলেকে সঠিক মানবিকতা শিক্ষা দিতে পারেননি।
স্ট্যাটাসের শেষে পুলিশকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি লিখেন, সবার মধ্যে মানবিকতা জাগ্রত হোক। আসুন বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়াই। ট্রাফিক আইন মেনে চলি। জরুরি সেবা ৯৯৯-কে বিশেষ ধন্যবাদ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।