জুমবাংলা ডেস্ক : আমার বোনের কোনো সমস্যা ছিলনা। গর্ভবতী নারীদের স্বাভাবিক যেসব সমস্যাগুলো থাকে এমনই ছিল। চিকিৎসকও বলেছিলেন তেমন কোনো জটিলতা নেই। নরমালে বাবু হবে। পরে হঠাৎ তাঁরা (চিকিৎসক) সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে সিজারের কথা জানায়। অপারেশন থিয়েটারে নেওয়ার সময় আমার বোনটা কান্না করে সবার কাছে মাফ চাচ্ছিলেন। তখনো বুঝতে পারি নাই তাঁকে একেবারে নিয়ে যাচ্ছে।’ শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১১টায় বোন হারানোর হাহাকার নিয়ে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন তাঁর ছোট ভাই শিপন হোসাইন।
রাজধানীর খিলক্ষেতের আশিয়ান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নবজাতককে পৃথিবীর মুখ দেখাবে বলে নিয়ে গিয়ে নিজেই বিদায় নিয়েছেন গর্ভবতী মা শিখা আক্তার। গত বুধবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। পরে সিজারের দীর্ঘ সময় পর পরিবারকে জানানো হয় মা ও নবজাতক দুজনই মারা গেছেন। শিখার পরিবারের অভিযোগ, এটি কোনো স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। চিকিৎসকের অবহেলার কারণেই এমন ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার খিলক্ষেত থানায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগীর পরিবার।
শিখার স্বামী ওসমান বলেন, হাসপাতালে নেওয়ার পর কোনো ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই তাঁরা শুরুতে বলেছিলেন নরমাল ডেলিভারি হবে। পরে হঠাৎ করে আবার বলে সিজার করা লাগবে। তখন একটা ইনজেকশন দিয়ে দেয়। অপারেশন করার প্রস্তুতি নিলেও তাঁরা এক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থাও করতে বলেনি। পরে বলে রক্ত ছিল না, এটা সেটা নানান কথা বলে। এসব মিথ্যা। তাদের ভুল চিকিৎসায় আমার স্ত্রী-সন্তান মারা গেছে। আমি এর সঠিক বিচার চাই।
এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে হাসপাতালের এইচ আর অ্যান্ড এডমিনের দায়িত্বে থাকা শাহরিয়াদ শিমুলকে তাঁর মোবাইল ফোনে রিং দিলে তিনি বলেন, ‘এসব বিষয়ে কথা বলার বিষয়ে উর্ধ্বতনদের নিষেধ আছে। তাই আমি কিছু বলতে পারছি না।’ কর্তৃপক্ষের মোবাইল নম্বর চাইলে সেটি দিতে পারেনি হাসপাতালের অভ্যর্থনার দায়িত্বে থাকা আরেক কর্মী আয়েশা আক্তার। তিনি দিনের বেলা ছাড়া দেওয়া যাবে না বলে জানান।
খিলক্ষেত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুন্সি সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘এই ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা নেওয়া হয়েছে। তদন্ত চলছে। পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বজলুর রহমান বলেন, ‘আমি শুক্রবার হাসপাতালে গিয়েছিলাম। কিন্তু মালিক পর্যায়ের কাউকে পাইনি। আগামীকাল আবার যাব।’
শিখার ছোট ভাই শিপন হোসাইন বলেন, ‘আমরা পূর্বাচল ২৬ নম্বর সেক্টরে থাকি। আমার বোনকে পাশেই ১২ নম্বর সেক্টরে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। বুধবার তার প্রথম বাবু হবে শুনে অনেক আনন্দ নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। কিন্তু বোনকে এভাবে মেরে ফেলা হবে ভাবতে পারিনি।’ তিনি বলেন, ‘আপুকে ডাক্তার ফারহানা ম্যাডাম দেখছিলেন। তিনি বলেছিলেন কোনো সমস্যা নাই। পরে এমনটা হলো। এর সঠিক বিচার আমরা চাই।’ সূত্র : দৈনিক কালেরকণ্ঠ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।