জুমবাংলা ডেস্ক : ‘আবরার ফাহাদ একজন শিবিরকর্মী। সব সময় সরকারবিরোধী কথাবার্তা বলে। তার আসলে একটা শিক্ষা হওয়া দরকার।’ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার আগে বেশ কিছুদিন ধরেই ছাত্রলীগ নেতাদের এ কথা বলে আসছিলেন অমিত সাহা। ‘সিক্রেট মেসেঞ্জার গ্রুপ’-এর মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া অমিতের এই নির্দেশনা পেয়ে ছাত্রলীগের সংশ্লিষ্টরা হিংস্র হয়ে ওঠে। কারণ তারা বরাবরই অমিতের নির্দেশ মেনে চলত। এরপর অমিতের সিদ্ধান্তেই আবরারকে ধরে এনে অমিতের কক্ষে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। আর এভাবেই এই ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ডে নেপথ্যে থেকে বিশেষ ভূমিকা রাখেন ছাত্রলীগ বুয়েট শাখার এই নেতা।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তে এমন সব তথ্য উঠে এসেছে। এ বিষয়ে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, আবরার হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া ২০ জনের সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তারা সবাই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ ঘটনায় জড়িত বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
অমিত রিমান্ডে সঠিক তথ্য দিচ্ছেন না জানিয়ে তদন্তসংশ্লিষ্ট ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, আবরার হত্যাকাণ্ডে বুয়েট ছাত্রলীগের যে কয়েকজন সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাঁদের মধ্যে অমিত অন্যতম। পুরো ঘটনায় তিনি প্রযুক্তির মাধ্যমে কলকাঠি নেড়েছেন। এ ক্ষেত্রে অমিতকে অন্যদের চেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছেন তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর। তাঁদের কাছ থেকে এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে আরো অনেক কিছু জানার আছে। এ কারণে এই দুজনকে দ্বিতীয় দফা হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট ডিবি সূত্র জানায়, আবরার হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের কার কী ভূমিকা ছিল তদন্তে তা উঠে এসেছে। এখন বুয়েটের শেরেবাংলা হলের ছাত্রলীগ শাখার একটি সিক্রেট মেসেঞ্জার গ্রুপ নিয়ে তদন্ত-কাজ চলছে। এসবিএইচএসএল (শেরেবাংলা হল ছাত্রলীগ) নামে ছাত্রলীগ নেতাদের এই সিক্রেট মেসেঞ্জার গ্রুপের নেতৃত্বে ছিলেন অমিত। এই অমিত সাহা ২০১১ নম্বর রুমের বাসিন্দা ও ছাত্রলীগ বুয়েট শাখার আইনবিষয়ক উপসম্পাদক।
যাচাই-বাছাই করে ডিবি নিশ্চিত হয়েছে যে মেসেঞ্জার গ্রুপটির সবাই বুয়েটের ছাত্র। বহিষ্কার হওয়ার আগ পর্যন্ত তাঁদের বেশির ভাগ বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের নেতা ও সদস্য ছিলেন। ওই মেসেঞ্জারের শুরুতেই বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন লিখেন, ‘সেভেন্টিনের আবরার ফাহাদ। মেরে হল থেকে বের করে দিবি দ্রুত। এর আগেও বলেছিলাম। তোদের তো দেখি বিগার নাই। শিবির চেক দিতে বলেছিলাম। দুই দিন টাইম দিলাম।’ এরপর একজন সেখানে লিখেন, ‘ওকে, ভাই।’ মেহেদী আবারও লিখেন, ‘দরকার হলে ১৬তম ব্যাচের মিজানের সঙ্গে কথা বলবি। ও তার সঙ্গে শিবিরের ইনভলভমেন্ট থাকার প্রমাণ দিবে।’
মেসেঞ্জার গ্রুপেই ঘটনার আগে রবিবার সন্ধ্যা ৭টা ৫২ মিনিটে সবাইকে হলের নিচে নামার নির্দেশ দেন মনিরুজ্জামান মনির। এর আগে মেসেঞ্জার গ্রুপে আবরারের সঙ্গে শিবিরের সংশ্লিষ্টতা থাকার কিছু স্ক্রিন শট সেখানে দেওয়া হয়। তাতে সঙ্গে সঙ্গে গ্রুপের সবাই লাইক দেয়। রাত ৮টা ১৩ মিনিটে আবরারকে নিজ কক্ষ থেকে ডেকে করিডর দিয়ে দোতলার সিঁড়ির দিকে নিয়ে যান সাদাত, তানিম, বিল্লাহসহ কয়েকজন। এরপর রাত ১টা ২৬ মিনিটে ইফতি মোশাররফ সকাল মেসেঞ্জারে লেখেন, ‘মরে যাচ্ছে, মাইর বেশি হয়ে গেছে। এখন আমরা কী করব?’ রবিন বলেন, ‘শিবির বলে পুলিশের হাতে তুলে দে।’
গত ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় আবরারের বাবা বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত এজাহারভুক্ত ১৯ আসামির মধ্যে ১৬ জন এবং সন্দেহভাজন হিসেবে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ছয়জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাঁরা হলেন ইফতি মোশাররফ সকাল, মেফতাহুল ইসলাম জিওন, অনিক সরকার, মোজাহিদুর রহমান, মেহেদি হাসান রবিন ও মনিরুজ্জামান মনির। এই মামলায় গ্রেপ্তার অমিত সাহা ও তাবাখখারুল ইসলাম তানভীরকে গতকাল ফের তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
এজাহারভুক্ত তিন আসামি অধরা : আবরার হত্যা মামলায় এজাহারভুক্ত তিন আসামি জিসান, মোর্শেদ ও তানিমকে এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি। তবে পলাতকদের ব্যাপারে এরই মধ্যে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। তাঁদের সঠিক অবস্থান জেনে অভিযান চালানো হবে। শিগগিরই তাঁদের গ্রেপ্তার করা হবে বলে আশাবাদী তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।