জুমবাংলা ডেস্ক : মিয়ানমারের বর্তমান রাখাইন রাজ্য আগে আরাকান নামে পরিচিত ছিল। ঐতিহাসিকভাবে আরাকান ছিল চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের সাথে যুক্ত একই ভূখন্ড।
প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ এই অঞ্চল সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের হাতছাড়া হয়ে যায়। মাটির নিচে থাকা প্রচুর খনিজ সম্পদই আরাকানের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। পেট্রোল, কয়লা, তেল, ইউরেনিয়াম, সোনা ও রূপার মতো মূল্যবান খনিজ থাকার কারণে বিভিন্ন সময় একে দখল করেছে বিভিন্ন শক্তি।
প্রাচীনকালে আরাকান ছিল মুসলিম সংস্কৃতি ও সভ্যতার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। সেখানকার বৌদ্ধ রাজারা মুসলমান উপাধি গ্রহণ করতেন এবং মুদ্রায় ফারসি ভাষায় কালেমা উৎকীর্ণ করতেন। আরাকান রাজদরবারে বহু বাঙালি মুসলমান কাজ করতেন। বাংলার সঙ্গে আরাকানের গভীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিল।
১৪০৬ সালে আরাকানের ম্রাউক-উ রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা নরমিখলা বাংলার গৌড় রাজ্যের শাসক জালালুদ্দিন শাহের সাহায্যে ক্ষমতায় ফিরে যান এবং ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁর শাসনামলে মুসলিম ব্যবসায়ী, কবি, শিল্পীদের পৃষ্ঠপোষকতা বৃদ্ধি পায়। সেই সময় রোসাং রাজদরবার বাংলা সাহিত্যচর্চার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে ওঠে। মহাকবি আলাওলসহ অনেক বাঙালি কবি সেখানে সাহিত্য রচনা করেন।
মধ্যযুগে আরাকানের সঙ্গে বাংলার সম্পর্ক আরও মজবুত হয়। সপ্তম শতাব্দীতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উদ্ভব ঘটে। মধ্যপ্রাচ্যীয় মুসলমান ও স্থানীয় আরাকানিদের সংমিশ্রণে গঠিত এই জাতি পরবর্তী সময়ে আরও বিস্তৃত হয়। রোহিঙ্গাদের বসবাসের এলাকা রাখাইন রাজ্যের নামকরণে মুসলিম ঐতিহ্যের ছাপ রয়েছে।
১৭৮৪ সালে বর্মি রাজা ভোধাপোয়া আরাকান দখল করেন। তাঁর অত্যাচারে আরাকানের জনগণ পালিয়ে এসে চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেয়। এরপর আরাকান কখনো স্বাধীনতা ফিরে পায়নি। বর্মি শাসনকালে আরাকানের জনগণকে চরম নির্যাতনের শিকার হতে হয়।
ব্রিটিশ শাসনামলে বার্মার পাশাপাশি আরাকানও তাদের করায়ত্তে আসে। ব্রিটিশরা ভারতবর্ষ ত্যাগের সময় আরাকান পুনরায় বাংলাদেশের অংশ হবার সুযোগ সৃষ্টি হয়। আরাকানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম নেতারা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত হতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। ১৯৪৬ সালে তারা ‘আরাকান মুসলিম লীগ’ গঠন করে পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হতে আগ্রহ দেখায়।
কিন্তু আরাকান পূর্ববঙ্গের সাথে এলে পুরো বঙ্গোপসাগরে একচ্ছত্র আধিপত্য সৃষ্টি হবে, পশ্চিম পাকিস্তানের নেতারা পূর্ব বাংলাকে এতটা শক্তিশালীও দেখতে চান নি। তাছাড়া পূর্ববঙ্গের জন্য আরাকানের গুরুত্ব কতটুকু, সেই বিষয়ে অধিকাংশ পশ্চিম পাকিস্তানি নেতার মতই জিন্নাহর অবহেলার কারণে এই সুযোগ নষ্ট হয়। আরাকান বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত না হয়ে মিয়ানমারের অংশ হয়ে পড়ে।
এই ঐতিহাসিক ভুলের কারণে আরাকান তার স্বাধীন অস্তিত্ব হারায় এবং চরম নির্যাতন ও দমন-পীড়নের শিকার হয়। বিশ্লেষকদের মতে, সঠিক কৌশল গ্রহণ করা হলে আরাকানের ইতিহাস ভিন্ন হতে পারত। সূত্র : দৈনিক জনকণ্ঠ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।