আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সিঙ্গাপুরে ইন্দোনেশীয় এক নারীর সঙ্গে দুই বাংলাদেশির গভীর প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার পর প্রথম প্রেমিক ওই নারীকে হত্যার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হয়েছেন। ছয় বছরের দীর্ঘ প্রেমের সম্পর্ক সত্ত্বেও দ্বিতীয় আরেকজনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ায় তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন পেশায় রঙ মিস্ত্রি এই বাংলাদেশি। তিনি বলেছেন, ওই ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে অস্বীকৃতি জানানোয় প্রেমিকাকে হত্যা করেন।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরের গেল্যাং এলাকার গোল্ডেন ড্রাগন হোটেলে প্রেমিকা নুরহিদায়াতি ওয়ার্তোনো সুরাতাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিক আহমেদ সেলিম। মঙ্গলবার সিঙ্গাপুরের একটি আদালতে এই হত্যাকাণ্ডের বিচারে শুনানি শুরু হয়েছে।
আদালতের বিচারক হে হুং চুন বলেছেন, ৩৪ বছর বয়সী প্রেমিকাকে হত্যার উদ্দেশে হোটেলে নিয়েছিলেন সেলিম। সেখানে একটি তোয়ালে সঙ্গে করে নিয়ে যান তিনি। ২০১৮ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রেমিকার নতুন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার বিষয়ে জানার পর থেকে তোয়ালেটি সঙ্গে নিয়ে ঘুরছিলেন তিনি।
আদালতে আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেছেন, প্রেমিকা সুরাতা প্রায়ই তার প্রেমিক সেলিমকে বলতেন, শয্যায় এবং অর্থনৈতিক দিক থেকেও তোমার চেয়ে নতুন প্রেমিকই বেশি ভালো। তুমি যদি বিশ্বাস না করো, তাহলে পরবর্তী সপ্তাহে তোমাকে একটি নতুন ভিডিও দেখাবো। সেই সময় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে দাবি করেছে সেলিমের আইনজীবী।
সিঙ্গাপুরের সেরানগুনের একটি পরিবারে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করার সময় ২০১২ সালের মে মাসে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তারা। প্রেম শুরুর এক মাসের মধ্যে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন। ২০১৭ সালের নভেম্বরে তারা দু’জনই পরবর্তী বছরের ডিসেম্বরে বিয়ে করবেন বলে একমত হন।
কিন্তু ২০১৮ সালের মাঝের দিকে বাংলাদেশি আরেক প্রবাসী শ্রমিক শামীম শামিজুর রহমানের দেখাশোনা শুরু করেন সুরাতা। প্রেমিকা প্রতারণা করছে বলে সেই সময় সন্দেহ করেন সেলিম। পরে এ নিয়ে দুজনের মাঝে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে সুরাতা অন্য একজনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। পরে সেলিম বাংলাদেশে তার মাকে ফোন করে বিয়ের জন্য পাত্রী দেখতে বলেন।
সেলিম এবং সুরাতার মাঝে সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়ে এলেও অবিশ্বাসের কারণে অপর প্রেমিককে নিয়ে প্রায়ই দু’জনের মাঝে ঝগড়া হয়। ২০১৮ সালের অক্টোবরের শেষ এবং নভেম্বরের শুরুর দিকে ফেসবুকে হানিফা মোহাম্মদ আবু নামের এক বাংলাদেশির সঙ্গে কথা বলা শুরু করেন সুরাতা।
সিঙ্গাপুরের আলজুনাইদের একটি হোটেলে হানিফার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন সুরাতা। ইন্দোনেশীয় এই নারী হানিফার কাছে তার প্রথম প্রেমিক সেলিমের কথা জানান। সেলিমের সঙ্গে শিগগিরই সম্পর্ক ছিন্ন করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।
পরে ২০১৮ সালের ৯ ডিসেম্বর সেলিমকে নতুন প্রেমিকের ব্যাপারে জানান সুরাতা। একই সঙ্গে বাংলাদেশে ফিরে পরিবারের ইচ্ছায় বিয়ে করা উচিত বলেও সেলিমকে জানিয়ে দেন তিনি। একই বছরের ২৩ ডিসেম্বর সেলিম গেল্যাংয়ের গোল্ডেন ড্রাগন হোটেলে সাক্ষাৎ করে ধার নেয়া ৫০০ সিঙ্গাপুরি ডলার সুরাতাকে ফেরত দেন।
বিচারক হে হুং চুন বলেন, সাতদিন পর, ৩০ ডিসেম্বর আবারও একই হোটেলে সাক্ষাতের জন্য সুরাতাকে রাজি করান সেলিম। সেখানে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার পর ইন্দোনেশীয় প্রেমিকাকে অপর ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার নির্দেশ দেন। সম্পর্ক ছিন্ন না করলে তাকে হত্যা করবেন বলে বারবার হুমকি দেন। কিন্তু নতুন সম্পর্ক ছিন্ন করতে রাজি না হওয়ায় গলায় তোয়ালে পেঁচিয়ে সুরাতাকে হত্যা করেন সেলিম।
পরদিন স্থানীয় সময় সকাল পৌনে ১১টার দিকে সেলিমকে গ্রেফতার করে সিঙ্গাপুর পুলিশ।
সূত্র: স্ট্রেইট টাইমস।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।