আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোস্তফা আল কাজেমি তেহরান সফরে এসে ইরানের প্রেসিডেন্ট, জাতীয় নিরাপত্তা উচ্চ পরিষদের সচিব এবং পার্লামেন্ট স্পিকারের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। খবর পার্সটুডে’র।
ইরাকের প্রধানমন্ত্রীর ইরান সফরের পেছনে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য রয়েছে। প্রথমত, ইরানের ১৩তম প্রেসিডেন্ট সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রাইসি দায়িত্ব নেয়ার পর বাইরের কোনো দেশের শীর্ষ কর্মকর্তার এটাই প্রথম তেহরান সফর। এ সফর থেকে বোঝা যায় মোস্তফা আল কাজেমি ইরানের সঙ্গে সর্বাত্মক সম্পর্ক ও সহযোগিতা বিস্তারের বিষয়টিকে অত্যধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন। ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসির সঙ্গে সাক্ষাতের পর ইরাকের প্রধানমন্ত্রী কাজেমি বলেছেন, তার দেশ ইরানের সঙ্গে সর্বোচ্চ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার প্রতি সমর্থন দেবে।
দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইরাক ও ইরানের অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে। বিশেষ করে ইরাক নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ইরানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা গড়ে তুলতে আগ্রহী। যদিও ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের তুলনায় সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ইরাকে নিরাপত্তা সংকট অনেকটাই কেটে গেছে কিন্তু এখনো নিরাপত্তা টিকিয়ে রাখার জন্য ইরানের সাহায্য ও সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে। এ ছাড়া, ইরাকের অবকাঠামো ক্ষেত্রে ইরানের পুজিবিনিয়োগ ছাড়াও ওই দেশটিতে ইরানের বিদ্যুত ও গ্যাসের বিরাট চাহিদা রয়েছে যদিও সম্প্রতি ইরাকের ঋণের কারণে ওই দেশে ইরানের গ্যাস রপ্তানি কমিয়ে দেয়া হয়েছে। এ করণে ইরাকের প্রধানমন্ত্রীর ইরান সফরকালে এ বিষয়টি আলোচনায় অগ্রাধিকার পেয়েছে।
এদিকে, ইসলামি ইরানও ইরাকের সঙ্গে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। ইরান বার্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ১৩০০ থেকে ২০০০ কোটি ডলারে উন্নিত করার চেষ্টা করছে। দুই দেশই অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে এগিয়ে নেয়ার জন্য রেল যোগাযোগ স্থাপনের পদক্ষেপ নিয়েছে। এ ছাড়া, ইরাক ও ইরানের মধ্যে অভিন্ন ধর্মীয় বিশ্বাস ও এ ক্ষেত্রে নানান ধরনের সহযোগিতা বজায় রয়েছে। ইরাকের প্রধানমন্ত্রীর তেহরান সফরকালে ইমাম হোসেন(আ.)এর শাহাদাতের চেহলাম বার্ষিকী বা আরবাইন উপলক্ষে ইরানি যিয়ারতকারীদের কারবালা সফরের বিষয়েও ইরানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
ইরাকের প্রধানমন্ত্রীর ইরান সফরের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হচ্ছে, সম্প্রতি ইরাককে সহযোগিতার বিষয়ে ইরানসহ নয়টি দেশের উপস্থিতিতে বাগদাদে সম্মেলনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সম্মেলনে ইরাক আঞ্চলিক উত্তেজনা ও মতপার্থক্য কমিয়ে আনার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে এবং এমনকি দেশটি মধ্যস্থতার ভূমিকাও পালন করার চেষ্টা করছে। জর্দানে ইরানের সাবেক রাষ্ট্রদূত আহমদ দাস্তমলচিয়ান বলেছেন, ইরাকের প্রধানমন্ত্রীর তেহরান সফরকে সম্প্রতি বাগদাদ সম্মেলনের আলোকে বিবেচনা করতে হবে। কেননা ইরাকের প্রধানমন্ত্রী আঞ্চলিক দেশগুলোর মধ্যকার মতবিরোধ নিরসনের জন্য মধ্যস্থতার চেষ্টা করছেন এবং ইরানও এ ব্যাপারে ইরাকের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছে। তাই ধারনা করা হচ্ছে মোস্তফা আল কাজেমি তেহরান সফরে এসে সৌদি আরবের পক্ষ থেকে কোনো বার্তাও হয়তো সঙ্গে এনেছেন। সম্প্রতি সৌদি ও ইরাকি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা সাক্ষাত করেছেন। ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে শান্তি আলোচনার বিষয়ে ইরাক ও সৌদি কর্মকর্তারা বেশ কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। এ কারণে ইরাকের প্রধানমন্ত্রীর ইরান সফরকালে সৌদি-ইরান সম্পর্কের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পাবে বলে আগেই বলা হয়েছিল।
ইরাকের প্রধানমন্ত্রীর ইরান সফরের চতুর্থ গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র ইস্যু। কেননা একদিকে ইরাক থেকে মার্কিন সেনা বহিষ্কার যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি এ বিষয়ে কতদূর অগ্রগতি হলো তার সর্বশেষ তথ্য ইরানকে অবহিত করার কথা রয়েছে। কারণ চলতি বছর শেষ নাগাদ ইরাক থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করে নেয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া ইরাকের প্রধানমন্ত্রী ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেও মধ্যস্থতার চেষ্টা করছেন। এ কারণে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ বার্তা নিয়ে আসতে পারেন বলে ধরণা করা হচ্ছে।
সব মিলিয়ে বলা যায় ইরাকের প্রধানমন্ত্রীর ইরান সফর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোনো কোনো মহল এ দুই দেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বিরোধিতা করলেও বাস্তবতা হচ্ছে, সম্পর্ক ক্রমেই জোরদার হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।