জুমবাংলা ডেস্ক : টাঙ্গাইল জেলার করোনা রোগী ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহরের সরকারি এসকে হাসপাতাল ভর্তি করানোয় গড়িমসি করায় রোগীরা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় টাঙ্গাইল জেলায় ৫ জন করোনা রোগী সনাক্ত হয়। এর মধ্যে মধুপুরে ১জন, ভূঞাপুরে ৩জন এবং নাগরপুরে ১জন। জেলায় এ পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৭জন। টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সহ ১২টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আইসোলেশন চালু হলেও ভেন্টিলেশনসহ সব ধরনের সুযোগসুবিধা সেখানে নেই। এ জন্য করোনায় আক্রান্ত রোগীদের আইসোলেশনের জন্য ময়মনসিংহ সরকারি এসকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু ‘টাঙ্গাইল জেলা ময়মনসিংহ বিভাগের আওতায় নয়, ঢাকা বিভাগের আওতায়’- এমন অজুহাতে টাঙ্গাইলের করোনা রোগী এসকে হাসপাতালের আইসোলশনে ভর্তি করা হচ্ছেনা বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
আজ সোমবার সকালে ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ওই উপজেলায় করোনায় আক্রান্ত তিন রোগীকে ময়মনসিংহ এসকে হাসপাতালে ভর্তির জন্য পাঠালে এসকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের ভর্তি করতে গড়িমসি শুরু করে। রোগীর এক আত্মীয় আবুল হোসেন ফোনে এ সংবাদদাতাকে জানান, করোনায় আক্রান্ত ওই তিন রোগীকে আজ সোমবার ভোর পাঁচটায় এসকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। টানা ছয় ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্স তাদেরকে বসিয়ে রাখা হয়। টাঙ্গাইল জেলা যেহেতু ঢাকা বিভাগের অন্তর্ভুক্ত, তাই এসব রোগীকে ঢাকার যে কোন হাসপাতালে ভর্তি করাতে নির্দেশ দেন ওই হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম।
অপরদিকে মধুপুর উপজেলার গুবুদিয়া গ্রামের গার্মেন্টস কর্মী নাসির উদ্দীন ফকির করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রচণ্ড জ্বর, সর্দি ও হাঁচিকাশি নিয়ে তিনি বাড়ি ফেরেন। মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রুবিনা ইয়াসমিন জানান, ওই রোগীর পরিবারের তিন জনের নমুনা ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। গত রবিবার রাতে আসা রিপোর্টে দেখা যায় শুধু মাত্র ওই গার্মেন্টস কর্মী করোনায় আক্রান্ত। তবে তার পরিবারের সদস্যরা আক্রান্ত নন। ওই রোগীকে মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। কিন্তু এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোন ভেন্টিলেটর নেই। রোগীর অবস্থা জটিল হলে ঢাকা অথবা ময়মনসিংহে পাঠাতে হবে।
তিনি জানান, ময়মনসিংহ এস কে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ টাঙ্গাইল জেলার রোগী ভর্তির ক্ষেত্রে গড়িমসি করায় সমস্যা হচ্ছে। এটি খুবই অমানবিক যে বিভাগীয় সীমানা পিলার তুলে করোনা রোগী ভর্তির ক্ষেত্রে গড়িমসি করা হবে। মধুপুরের গুবুদিয়া গ্রামকে লক ডাউন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে ময়মনসিংহ এসকে হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম রোগী ভর্তির গড়িমসির সত্যতা স্বীকার করে জানান, টাঙ্গাইল জেলা ময়মনসিংহ নয়, ঢাকা বিভাগের আওতায়। ঢাকায় করোনা রোগীদের আইসোলেশন জন্য বেশ কয়েকটি হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়েছে। তারা সেখানে তাদের রোগী পাঠাতে পারেন। তিনি জানান, ময়মনসিংহের এ হাসপাতালে আইসোলেশন জন্য প্রস্তুত ৬০ সীটের মধ্যে ৪৮টি খালি।
তাহলে খালি সীটে করোনা রোগী ভর্তিতে আপত্তি কেন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, জামালপুর ও নেত্রকোনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আইসোলেশন সেন্টার চালু হলেও টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসোলেশন কেন পূর্নাঙ্গরুপে চালু হয়নি সেটি টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসনকে প্রশ্ন করুন। জেনে নিন। তিনি টাঙ্গাইল থেকে পাঠানো তিন করোনা রোগী ভর্তি করানোর চিন্তা ভাবনা করছেন বলে জানান।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডাঃ ওয়াহিদুজ্জামান জানান, করোনা রোগী ভর্তির ব্যাপারে এ ধরনের ঘটনা খুবই দুঃখজনক। টাঙ্গাইলের করোনা পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আজ সোমবার নতুন পাঁচজন ডাক্তারকে ডেপুটেশনে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ভেন্টিলেটরসহ আইসোলেশন সেন্টার পূর্নাঙ্গভাবে কেন চালু করা যায়নি তা কলেজের অধ্যক্ষ ও টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের উপপরিচালক বলতে পারবেন।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডা. নুরুল আমীন মিয়া জানান, এখানে করোনায় রোগীর জন্য ৫০ সীটের আইসোলেশন চালু করা হয়েছে। তবে ভেন্টিলেটর নেই। এতো তাড়াতাড়ি ভেন্টিলেটর চালু করাও সম্ভব নয় । করোনা রোগীদের ক্ষেত্রে শতকরা ৫% ক্ষেত্রে ভেন্টিলেটর সাপোর্ট লাগে। সেরকম হলে আমরা রোগীকে ঢাকায় শিফট করবো। তবে টাঙ্গাইল জেলার করোনা রোগী ময়মনসিংহ বিভাগের আইসোলেশনে ভর্তি হতে পারবেনা এমন অমানবিক আচরণ এ সময়ে গ্রহণযোগ্য নয়।
টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মোঃ শহীদুল ইসলাম জানান, দেশের এ দুর্যোগকালে কে কোন এলাকার মানুষ এমন বিষয় বিবেচ্য নয়। সবাইকে সেবা দিতে হবে। টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভেন্টিলেটর স্থাপনের জন্য চেষ্টা চালানো হচ্ছে। সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।