জুমবাংলা ডেস্ক : হাসপাতাল থেকে খালেদা জিয়াকে বাসায় আনতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তার চিকিৎসক দলের প্রধান অধ্যাপক ডা. এফ এম সিদ্দিকী। শনিবার রাতে বেগম খালেদা জিয়া গুলশানের বাসায় ‘ফিরোজা’ পৌঁছানোর পর এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। এর আগে রাজধানীর এয়ারকেয়ার হাসপাতাল থেকে রাত ৮টা ৩৫ মিনিটে বাসায় পৌঁছান বেগম জিয়া।
ডা. এফ এম সিদ্দিকী বলেন, উনাকে বাসায় আনতে বাধ্য হয়েছি। কারণ হাসপাতালে ঝুঁকি বেশী হয়ে যাচ্ছে। কারণ তিনবার উনার রক্তে ইনফেকশন হয়েছে। তাই এখানেই (বাসা) উনাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসাটা চালিয়ে যাবো। আর আমরা যখন চিন্তা করছিলাম উনাকে লাইফ সাপোর্টে দিতে হবে। সেখান থেকে মুক্ত করে ‘ইনশাআল্লাহ’ হাসপাতাল থেকে বাসায় আনতে পেরেছি।
তিনি বলেন, উনার যে জটিলতাগুলো আছে, সেগুলো প্রাইমারি ডিজিজ। সেগুলোর জন্য আমরা মেডিক্যাল বোর্ড কতগুলো সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর সেগুলো লিখিত আকারে বের করেছি। সেগুলো উনাদের (বিএনপি মহাসচিব) কাছে জমা দেবো।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেগুলো আমরা বললাম, সেগুলো আমরা কন্ট্রোল করতে পেরেছি। কিন্তু কতগুলো বিষয় আছে, যেমন উনার লিভারে যে সমস্যাসহ আরো কিছু সমস্যা আছে- যেগুলো টেকনোলজি সাপোর্ট বাংলাদেশে নাই বলে আমরা মনে করছি।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে সিদ্দিকী বলেন, আমরা স্টেবল আছেন। এটা যখন আমরা বলি, তখন বুঝতে হবে উনার অসুখটা একটা স্থিতিশীল অবস্থায় এসেছে। উনি সুস্থ হন নাই। সেটা যদি হতো তাহলে আমরা বলতাম উনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে বাসায় এসেছেন।
‘কিন্তু করোনার কারণে উনার লিভার, হার্ট ও কিডনির যে ভয়ঙ্কর জটিলতা দেখা দিয়েছিলো, সেই অবস্থার উত্তোলন ঘটেছে। কিন্তু সেই অসুস্থতাগুলো রয়েই গেছে। কারণ যে চিকিৎসা, টেকনোলজি, প্রস্তুতি ও প্রক্রিয়া-সেগুলো আমরা এখনো পরিপূর্ণভাবে করতে পারি নাই। যার জন্য একটা ঝুঁকি উনার থেকেই যাচ্ছে। আমরা এখানে অবজারভেশন রাখবো। কিন্তু এক থেকে দুই সপ্তাহ পরে আবার হাসপাতালে নিয়ে কিছু রিভিউ করার প্রয়োজন হতে পারে।’
ডা.সিদ্দিকী বলেন, সিসিইউ থেকে কেবিনে আনার পর আমরা দেখেছি, হাসাপাতালে যেসব জীবাণু থাকে সেগুলো ম্যাডামকে আক্রমণ করছে। আর গত দুই দিন ধরে ম্যাডাম যেখানে ছিলেন, সেখানে কিছু ডাক্তার ও নার্সসহ কয়েকজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এখন যেহেতু উনার প্রাইমারি কম্পিকেশন ছিলো, সেগুলো থেকে স্টেবল করতে পেরেছি। ‘আর দেখা যাচ্ছে, উনি হাসপাতালে ইনফেকশন হওয়ার ঝুঁকিতে থাকছেন। পরপর দু’বার উনাকে ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করা চেষ্টা করেছে এবং করোনা নতুন করে আবার হাসপাতালে আক্রমণ করছে। এজন্য হসপিটালে যারা মেডিক্যাল বোর্ড এবং দেশের বাইরে উনার চিকিৎসার সাথে সম্পৃক্ত আছেন- তারা মিলে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এই স্টেবল অবস্থায় হাসপাতালে থাকলে উনার ঝুঁকি অনেক বেশী।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পাঁচবার রক্ত দেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা জানেন, উনার হিমোগ্লোবিন বারবার কমে যাচ্ছিল। অথচ সারাজীবন উনি এক ব্যাগ রক্ত নেননি। আর উনার হার্ট ফেল হয়ে যায়। সবচেয়ে বড় সমস্যাটা হচ্ছে, লিভার ফাংশনটা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে যায়। আর অন্যান্য কিছু জটিলতা আছে। সেগুলো পরীক্ষা করার প্রয়োজন ছিলো। কিন্তু আমরা উনার স্বাস্থ্যের অবস্থা চিন্তা করে বাসায় নিয়ে এসেছি।
‘আলহামদুলিল্লাহ উনি স্টেবল আছেন। তারমানে এই না যে, উনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেছেন। বরং উনার আগে যে অসুস্থতা ছিলো তার সাথে আমরা বিশেষ করে দেখেছি, উনার লিভার ও কিডনিতে সমস্যা। এই দুইটার কারণে উনার রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যায়। এই দুটি বিষয়ের কারণে উনাকে কয়েকবার রক্ত দিতে হয়েছে। আর প্রতিদিন অ্যালবামিন দিতে হয়েছে। আমরা ভাবছি, এটা এখন বাসায় দেয়ার ব্যবস্থা করবো।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, করোনার হাত থেকে ফিরে আজ তিনি বাসায় ফিরেছেন। আমরা আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া আদায় করি।
এসময় খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, ডা. মামুন, বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান ও শামসুদ্দিন দিদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পোস্ট কোভিডসহ নানা জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৭ এপ্রিল বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন খালেদা জিয়া। এর ৬ দিন পর (৩ মে) শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে তাকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। পরে অবস্থার উন্নতি হলে গত ৩ জুন চিকিৎসকদের পরামর্শে খালেদা জিয়াকে কেবিন ফিরিয়ে আনা হয়। প্রসঙ্গত, গত ১৪ এপ্রিল গুলশানের বাসা ফিরোজায় করোনায় আক্রান্ত হন তিনি। করোনামুক্ত হন গত ৯ মে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।