আন্তর্জাতিক ডেস্ক : করোনাভাইরাসে উদ্বেগ বাড়ছে চীনে। যতই সময় যাচ্ছে এই ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছেই। গত কয়েকদিনে কয়েক হাজার মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসকদের দম ফেলারও সময় নেই। এখন পর্যন্ত সেখানে ৫৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
প্রাণঘাতী নতুন এই ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বলে সতর্ক করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। চীনের নববর্ষের অনুষ্ঠানে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে করা এক বিশেষ বৈঠকে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, দেশ মারাত্মক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
উহান শহরে প্রথম প্রাদুর্ভাব দেখা যাওয়ার পর চীনের অন্যান্য শহরেও এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। তবে সরকার যতটা বলছে তার চেয়েও পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে পড়েছে। এখন পর্যন্ত সেখানে প্রায় এক লাখ মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে এক চিকিৎসা কর্মী দাবি করেছেন।
উহান শহরের হাসপাতালে কর্মরত এক নার্সের দাবি, সেখানে ইতোমধ্যেই এক লাখ মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মাস্ক পরে হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত রয়েছেন ওই নার্স। তিনি বলছেন, সরকারিভাবে যে সংখ্যা বলা হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে আক্রান্তের সংখ্যা আরও কয়েক গুণ বেশি।
এরই মধ্যে যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, এই ভাইরাসের সংক্রমণ চীনের পক্ষে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে না। একাধিক শহরে ঢোকা এবং শহর থেকে বের হওয়ার ব্যাপারে সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হলেও ইতোমধ্যেই অনেক শহরেই এই ভাইরাসের বিস্তার ঘটেছে।
চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম পিপল’স ডেইলি জানিয়েছে, জরুরি সেবাদানের লক্ষ্যে ১৩শ শয্যাবিশিষ্ট দ্বিতীয় একটি হাসপাতালের নির্মাণকাজ শুরু করা হবে এ সপ্তাহের মধ্যেই। এক হাজার শয্যাবিশিষ্ট একটি হাসপাতালের নির্মাণকাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের এমআরসি সেন্টার ফর গ্লোবাল ইনফেকশাস ডিজিস অ্যানালাইসিসের বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, চীনের ভেতরে এই ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া সীমাবদ্ধ রাখা সম্ভব নাও হতে পারে।
তারা বলছেন ভাইরাসটি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার মাধ্যমে নিজেকে রক্ষা করতে পারে, যেটি এই ভাইরাসের এত বড় পরিসরে ছড়িয়ে পড়তে পারার ‘একমাত্র যৌক্তিক ব্যাখ্যা।’
বিজ্ঞানীদের অনুমান, একজন করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি গড়ে আড়াইজন মানুষের মধ্যে এই ভাইরাসটি ছড়াচ্ছে। এই সংস্থাটি চীনা কর্তৃপক্ষের প্রয়াসের প্রশংসা করেছে, কিন্তু এরকম আশঙ্কাও প্রকাশ করছে যে ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে ছড়িয়ে পড়ার হার ৬০% কমাতে হবে।
বিজ্ঞানীদের মতে এই পদক্ষেপ নিশ্চিত করা সহজ নয়। ভাইরাস সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণে আনতে এমন রোগীদেরও আলাদা করতে হবে যাদের মধ্যে সাধারণ সর্দিজ্বরের সামান্য লক্ষণও দেখা গেছে।
অন্যদিকে, ল্যাংকাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দল ভাইরাস আক্রান্তদের সংখ্যা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাদের ধারণা অনুযায়ী এবছরে ১১ হাজার মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। তাদের অনুমান সত্যি হলে এই সংখ্যা সার্স’এ আক্রান্তের সংখ্যার চেয়ে বেশি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এ ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে সর্বোচ্চ ১২৯৭ জন চীনে (হংকং, মাকু ও তাইপেসহ) এছাড়া আমেরিকায় দুইজন, ফ্রান্সে ৩ জন কোরিয়ায় ২ জন ভিয়েতনামে ২ জন থাইল্যান্ডে ৪ জন সিঙ্গাপুরে ৩ জন, অস্ট্রেলিয়া ৩, জাপানে ৩ জন সর্বশেষ নেপালে একজনকে সনাক্ত করা হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে হংকং ম্যাকাও তাইপে এই তিন দেশ কে চীনের আওতায় রেখেছে। সেই হিসেবে তারা ১০টি দেশ বলছে। আর এই তিনটিকে হিসাব করলে এ ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি পাওয়া দেশের সংখ্যা ১৩টি হবে।
এদিকে ভারতে করোনাভাইরাস আক্রান্তের তথ্য বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা গেল এখন পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভারতের বিষয় কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি। বাংলাদেশ পর্যন্ত কোন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত মানুষের সন্ধান মিলেনি বলে নিশ্চিত করেছে আইইডিসিআর।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।